দেশভাগের সময় ওঁরা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে এখন পাকাপাকিভাবে আশ্রয় নিয়েছেন চাকদহের বিভিন্ন এলাকায়। তবে ওপার বাংলার ঘটা করে লক্ষ্মীপুজোর করার চল উদ্বাস্তু মানুষগুলি এখানেও বজায় রেখেছেন। পূর্ববঙ্গের স্মৃতিকে আকড়ে চাকদহের বিভিন্ন এলাকায় আজও ধুমধাম করে হয় ধনদেবীর আরাধনা। পুজো উপলক্ষে বসছে মেলাও। সেখানে হাজারও লোকের সমাগম।
চাকদহের বল্লভপুর, দরাপপুর, চৌগাছা এবং নেতাজী বাজারে প্রতি বছরের মতও এবারও হচ্ছে লক্ষ্মীপুজো। বসবে মেলা। আগামি শুক্রবার একদিনের জন্য এই মেলা হবে। স্থানীয় মাঠে জমা হয় বিভিন্ন বাড়ি ও ক্লাব সংগঠনের লক্ষ্মী প্রতিমা। সব মিলিয়ে ওই সব এলাকায় শ’তিনেক প্রতিমা মেলায় হাজির হয়। মেলায় লোকজন ও বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের সমস্ত উপকরনই থাকে। পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসই।
স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে শয়ে শয়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল চাকদহ শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ওই সব গ্রামগুলিতে। বছরের অন্যান্য দিন কোনওরকমে কাটলেও লক্ষ্মীপুজোর দিন বড়ই কষ্ট পেতেন তাঁরা। প্রথম দিকে কোনওক্রমে পুজো হত বাড়িতে। আস্তে আস্তে পায়ের তলায় মাটি শক্ত হতেই শুরু হয় মেলা। ১৯৫২ সাল নাগাদ থেকে ধুমধাম করে পুজো হতে শুরু করে। সঙ্গে মেলাও। প্রথমে বল্লভপুরে এই মেলা হলেও, আস্তে আস্তে তা অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আড়ম্বরও। প্যাণ্ডেল ও আলোকসজ্জাতে অভিনবত্ব চোখে পড়ার মত। কোথাও কোথাও হয় সাংস্কৃতিক ও বিচিত্রানুষ্ঠানও। আনন্দে ভাগ বসাতে প্রতি বাড়িতে পুজোর দিনে আত্মীয়-স্বজনদের যাওয়া-আসা লেগেই থাকে।
চাকদহের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ও বল্লভপুর মেলা কমিটির সহ-সভাপতি অনুপ সরকার বলেন, “পূর্ববঙ্গের স্মৃতি আকড়ে ধরেই চলছে লক্ষ্মীপুজো। বলছে মেলা। এর গুরুত্বও বাড়ছে ক্রমাগত। সাধারনত পুজোর চতুর্থ দিনে মেলা বসে। এ বার তা বৃহস্পতিবার হওয়ায় একদিন পরে, শুক্রবার মেলা হবে।” তিনি বলেন, “দুর্গাপুজো নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তেমন আবেগ নেই। কিন্তু তাঁরা ভাবেন লক্ষ্মীপুজো নিয়ে। এমনকী অনেকে নতুন জামা কাপড়ও পড়েন।” |