অধীর চৌধুরী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় উচ্ছ্বাস দলের কর্মী-সমথর্কদের মধ্যে। অন্য দিকে উচ্ছ্বাসের মধ্যেও বিষাদের চোরাস্রোত বইছে অধীর পরিবারে। স্বামী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় আদরের ‘নিটি’র কথায় মনে পড়ছে অধীর-জায়া অপির্তা চৌধুরীর। অর্পিতাদেবীর কথায়, “আনন্দ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নিটি’র কথা ভেবে খারাপও লাগছে। আজ মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। বাবার এই সাফল্য নিটি দারুণ ভাবে উপভোগ করত।” বছর ছয়েক আগে অধীর-অর্পিতার একমাত্র সন্তান শ্রেয়াশ্রী চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পর ক্ষণেই নিজের আবেগ সামলে নিয়ে অর্পিতাদেবী বলেন, “জেলার উন্নয়ন নিয়ে সর্বক্ষণ ওর ভাবনা-চিন্তা কাজ করে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় ওর দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। জেলার মানুষকে এজন্য অভিনন্দন জানাব। জেলার মানুষ ওকে এই কাজের সুযোগ করে দিয়েছে। এটা জেলার মানুষেরও সাফল্য।”
ফোন পেয়ে শনিবার দুপুরেই বহরমপুরের গোরাবাজার বাসভবন থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন অধীরবাবু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী হবেন কি না, মন্ত্রী হলে কোন দফতর দেওয়া হবেতা নিয়ে এদিন সকাল থেকেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বহরমপুর তথা জেলাবাসীর মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। ফলে রবিবার সকাল থেকেই অধীর-অনুগামীরা টিভি’র পর্দায় চোখ রাখেন। শেষ পর্যন্ত অধীর চৌধুরী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতেই বাঁধনহারা আনন্দে মেতে ওঠেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। পার্টি অফিসে চলছে মিষ্টিমুখ পর্ব। আবিরের রঙে ছেয়ে যায় আকাশ। পার্টি অফিসে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। অধীরবাবুর ছবি, কাট আউট নিয়ে মিছিল বের হয়েছে শহরের পথে। কংগ্রেস পার্টি অফিসে চলছে বাজি ফাটানো।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় গোরাবাজার নিমতলা থেকে প্রথম মিছিল বের হয়। অন্য একটি মিছিল বের হয় কংগ্রেস পার্টি অফিস থেকে। পরক্ষণেই কুঞ্জঘাটা মোড় থেকে ঢাকবাদ্য সহযোগে বিশাল একটি মিছিল খাগড়া এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিলে ছিল অধীরবাবুর বিশাল ছবি, প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার কাট-আউট। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “অধীর চৌধুরী মন্ত্রী হওয়া নিয়ে কিছু দিন থেকেই কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ছিল। শেষ পর্যন্ত অধীরবাবু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। আগামী ৪ নভেম্বর সদর কার্যালয় চত্বরে যে শারদ সম্মিলনী অনুষ্ঠান হবে, আশা করছি সেখানে মন্ত্রী অধীর চৌধুরী হাজির থাকবেন।”
এদিন সন্ধ্যায় রঘুনাথগঞ্জেও তাসা-ব্যান্ডপার্টি সহ কংগ্রেস সমর্থকরা আবির খেলায় মেতে ওঠেন। মিছিলও বের হয়। বিধায়ক তথা কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে অধীরের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বরাবরই রেলের দিক থেকে জেলাবাসী বঞ্চিত। সেক্ষেত্রে অধীর মন্ত্রী হওয়ায় জেলাবাসী উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবেন।” এদিন ১২ দফা দাবি জানিয়ে অধীরবাবুর কাছে ফ্যাক্স বার্তা পাঠান তিনি। তাতে শিয়ালদহ-জঙ্গিপুরগামী ট্রেনের সময় সূচি পরিবর্তন থেকে নবদ্বীপ ধাম এক্সপ্রেসকে ব্যান্ডেল জংশন পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “গনিখান চৌধুরীর পরে অধীর চৌধুরী, যিনি মন্ত্রী হিসেবে রেলের বেহাল অবস্থা কাটাতে পারবেন বলে জেলাবাসীর বিশ্বাস।” কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে কর্মী-সমর্থকদের বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে অধীর চৌধুরীর মন্ত্রীত্ব।” মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সাংসদ মান্নান হোসেন বলেন, “রাজ্য সরকার যদি সত্যিই উন্নয়ন চায়, তাহলে অধীর চৌধুরী বা রেলমন্ত্রককে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এর আগে কৃষ্ণনগর-চাপড়া-করিমপুর হয়ে বহরমপুর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা করে দায় সারে তারা। কিন্তু ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না করার ফলে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এখন অধীর প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় ওই দাবিপূরণ হবে।” তিনি বলেন, “অধীরকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী দিলে খুশি হতাম। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা ওই খবরে চাঙ্গা হবেন।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “এর আগেও মুর্শিদাবাদ জেলা সর্বোচ্চ স্তরের মন্ত্রী পেয়েছে। কিন্তু জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন হয়নি। এখন ডবল লাইন, নসিপুর রেলব্রিজ চালু, বহরমপুরের দু’টি উড়ালপুল, কাটোয়া-ফরাক্কা ডবল লাইন ও হাওড়া-শিয়ালদহ রুটে সুপার ফাস্ট ট্রেন চালুর দাবিতে আমাদের যে আন্দোলন তা কার্যকরী হলে খুশি হব।”
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফুরকান শেখ বলেন, “কংগ্রেস দলীয় সাংসদদের মন্ত্রী করার বিষয়টি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০২০ সালকে লক্ষ্য রেখে যে সমস্ত প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন, সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলে আমরা তাঁকে সমর্থন করব। ফলে কে মন্ত্রী হয়েছেন তা বড় কথা নয়। কাজটাই আসল।” |