কেউ বলছেন, ভালই হল। পারফর্ম করেও সারা জীবন অনেক জবাবদিহি করতে হয়েছে। এ বার থেকে আর কেউ কড়া প্রশ্নপত্র সামনে ছুড়ে দেবে না।
কেউ বলছেন, ‘গাঙ্গুলি’ শব্দের বিকল্প মন্ত্র যখন আর হাতে নেই, বাঙালির ড্রইংরুমে আইপিএলের টিআরপি বোধহয় পড়বে। যদি ঘরের ছেলের কলার-তোলা ঔদ্ধত্যই আর না দেখা যায়, লোকে আর কতক্ষণ টিভির সামনে থাকবে?
আইপিএল-দুনিয়া থেকে অবসরের সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়া শুধু বাকি। কিন্তু রবিবারের আনন্দবাজারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আইপিএল-অবসরের খবর বেরনোর পর, মিনিটে-মিনিটে বিভিন্ন মহল থেকে ছিটকে বেরিয়েছে তাঁকে নিয়ে প্রতিক্রিয়া। মঞ্চে কখনও প্রাক্তন আইপিএল টিম কর্তা। কখনও পুণের সহ-যোদ্ধা। কখনও বাংলার সতীর্থকুল।
সঙ্গে অমোঘ প্রশ্ন সত্যিই কি আইপিএলে আর নেই সৌরভ? বাংলার হয়ে ইডেনে নামবেন না তিনি? কতটা জৌলুস হারাবে সৌরভহীন আইপিএল? কেন আর এক বছর নয়?
এ দিন সকালে সৌরভের অবসরের খবর সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখাতে শুরু করায়, সংশ্লিষ্ট চ্যানেলে ফোন করেছিলেন সান টিভি-র বড় কর্তা নিজে। খোঁজ নিয়েছেন, সৌরভের সঙ্গে পুণে-র গাঁটছড়া ভাঙার খবর কতটা ঠিক? শুধু তিনি নন, ঘোর বিস্ময়ে কথা আটকে যাচ্ছে অনেকেরই। মুম্বই থেকে ফোনে বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি যেমন আঁতকে উঠলেন, “সে কী! ছেড়ে দিচ্ছে! আইপিএলের টিআরপি এ বার পড়বে। জার্সি খুলে ওড়ানোর লোক আর কোথায়?” পুণে-তে সৌরভের সতীর্থ অশোক দিন্দাও মুম্বই থেকে ফোনে বললেন, “প্রচণ্ড মিস করব দাদিকে। পাল্টা লড়াইয়ের আগুনটা ও-ই ঢুকিয়েছে। যে কোনও টিমকেই দাদি দাঁড় করিয়ে দিতে পারত।” আর একরাশ বিষাদে ডুবে বাংলা টিমে সৌরভের আর এক সতীর্থ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলছেন, “দাদির সমালোচকরা এ বার নিশ্চিন্তে ঘুমোবে। খারাপ লাগছে, কারণ দাদি আমাদের সঙ্গেও রঞ্জি জিততে চেয়েছিল। সেটা আর হয়তো হল না। তবে এর পর আর বাঙালি আইপিএল দেখবে কি না সন্দেহ। নামটাই থাকল না। তবে আমার মনে হয়, আর একটা বছর খেলতেই পারত।” ‘নাম-মাহাত্ম্য’ যে তারাও হারাতে চলেছে, মেনে নিচ্ছে পুণে শিবির। সৌরভ বাদে আইপিএল সিক্সে মোটামুটি একই দল ধরে রাখতে চলেছে পুণে। বিদেশিদের মধ্যে স্টিভ স্মিথ, মার্লন স্যামুয়েলস, জেসি রাইডার সবাই থাকছেন। মাইকেল ক্লার্ককে অধিনায়কও ভাবা হচ্ছে। তবে সহারার সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ মেনে নিলেন, যা-ই হোক, ‘গাঙ্গুলি’র গ্ল্যামারটা আর থাকবে না টিমের সঙ্গে। ও রকম দর্শক-সম্মোহনের ক্ষমতা নাকি সহবাগেরও নেই! ফ্র্যাঞ্চাইজির শুকনো দুনিয়ার সদস্য হয়েও কেকেআর মহাকর্তা বেঙ্কি মাইসোরের ধাক্কা লাগছে। তবে মুহূর্তে সামলে বলছেন, “আইপিএল আছে, সৌরভ নেই, মেনে নেওয়া একটু কঠিন। কিন্তু আইপিএলে কোনও নির্দিষ্ট তারকাকে ঘিরে উন্মাদনা প্রথম দু’বছর ছিল। এখন দর্শকরা টিম কনসেপ্টে বিশ্বাসী।”
কেকেআর মহাকর্তা বলছেন বটে, কিন্তু রবিবাসরীয় সৌরভকে ঘিরে জল্পনা ছড়িয়েছে ময়দানের বিভিন্ন মহলে। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক গোপাল বসু বলছেন, “এর পর আর সৌরভকে আমি জিজ্ঞেস করব না কবে ছাড়ছিস? বরং জিজ্ঞেস করব, কেন ছাড়লি? আর একটা বছর খেললি না কেন?” কোথাও আবার উঠে আসছে সৌরভের ফিটনেস ধরে রাখার যুদ্ধ। আইপিএল খেলবেন বলে হালফিলে ওজন অনেক কমিয়ে ফেলেছিলেন। পছন্দের বিরিয়ানি খাওয়াও বন্ধ রেখেছিলেন। শ্রীলঙ্কায় ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে একই জিমে ছুটতেন রোজ। ফিটনেস ট্রেনার চিন্ময় রায়ের সঙ্গে ট্রেনিং শুরু করারও কথা ছিল। যিনি মনে করেন, টি-টোয়েন্টিতে ফিটনেসের ঘাটতি স্কিল দিয়ে পুষিয়ে দিতে পারতেন সৌরভ। সিএবি কর্তারাও বেশ হতভম্ব। সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া যেমন বললেন, “সৌরভ টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর ওকে জমকালো সংবর্ধনা দিয়েছিলাম। এ বার বেনিফিট ম্যাচ না অন্য কিছু করব, বুঝে পাচ্ছি না। ভেবে দেখি।”
সহজ কথায়, অধিকাংশই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, ইডেনে আর নামবেন না সৌরভ। ‘গাঙ্গুলি’ শব্দটা না থাকার যে ভয়টা এত দিন অবচেতনে উঁকি দিত, সেটাই রবিবারের পর নির্মম বাস্তব।
নইলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সৌরভের প্রথম অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর বলবেন কেন, “এত দিন সকালে চা আর খবরের কাগজ ছাড়া বাঙালির সঙ্গে সৌরভ থাকত। সেই অভ্যাস ছাড়া এত সোজা?” |