|
|
|
|
সার্ধশতবর্ষে সাজছে ব্যাপটিস্ট চার্চ
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দেড়শো বছরে পা দিতে চলেছে মেদিনীপুরের ব্যাপটিস্ট চার্চ। আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে চার্চের সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠান। চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত। ইতিমধ্যে নানা রঙের আলোয় সেজে উঠেছে পুরো চার্চ। সাজানো হয়েছে আশপাশের এলাকাও। ভিন্ রাজ্য থেকে আসবেন অতিথিবৃন্দ, বক্তব্য রাখবেন। আয়োজন রয়েছে নানা অনুষ্ঠানেরও। সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির কনভেনর সিসিল ডি ফ্রান্সিস বলেন, “এই সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই আয়োজন করা হয়েছে।”
উৎসবের সূচনা হবে সোমবার দুপুরের সুসজ্জিত পদযাত্রা দিয়ে। সন্ধ্যায় হবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বাংলা-ওড়িশা-বিহার ব্যাপটিস্ট চার্চেস্ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় বসু, স্থানীয় বিধায়ক মৃগেন মাইতি, পুরপ্রধান প্রণব বসু প্রমুখ। এরপর এক সপ্তাহ ধরে ছোট-বড় সকলের জন্যই নানা অনুষ্ঠান হবে।
মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজার এলাকায় অবস্থিত এই ব্যাপটিস্ট চার্চ। কিন্তু, কী ভাবে এখানে গড়ে উঠল এই চার্চ?
উনিশ শতকের শেষের দিকের কথা। মেদিনীপুর তখনও জেলার সদর। স্বাভাবিক ভাবেই জেলা সদরে অনেক ইংরেজ পরিবারের বসবাস। থাকেন ধর্মান্তরিত ভারতীয় খ্রিস্টান পরিবারের লোকজনও। |
 |
—নিজস্ব চিত্র। |
মেদিনীপুরে সেই সময় প্রোটেস্ট্যান্টদের একটি গির্জা ছিল। তবে ব্যাপটিস্ট খ্রিস্টানদের জন্য কোনও উপাসনার স্থান ছিল না। সেই সময় শহরে আসেন মিশনারি ধর্মযাজক ওটিস রবিনসন ব্যাচেলর। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পি সারা ব্যাচেলর। মূলত খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্যই তাঁর সস্ত্রীক এই শহরে আসা। ১৮৬২ সালে সিপাইবাজার এলাকায় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করেছিলেন এক চার্চ। শুরু হয়েছিল উপাসনা। তখন নাম ছিল ‘আমেরিকান ব্যাপটিস্ট মিশন চার্চ’। শুরু থেকেই এই চার্চে ইংরেজ ও ভারতীয়দের সমান অধিকার ছিল। ব্যাচেলর সাহেবই ছিলেন এই গির্জার প্রথম প্যাস্টর বা যাজক। ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। এই চার্চকে ঘিরেই তিনি এলাকায় যীশুর বাণী প্রচার শুরু করেছিলেন।
কিন্তু এখন দিন বদলেছে। বদলেছে চার্চের পরিবেশও। মূল ভবন সংস্কার হয়েছে। চারপাশে সীমান প্রাচীর তৈরি হয়েছে। ২০০৫ সালে চার্চের নতুন নামকরণ হয়েছে, ‘মেদিনীপুর ব্যাপটিস্ট চার্চ’। স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত চার্চ পরিচালনার ভার ছিল ইংরেজদের হাতে। পরে ১৯৫২ সালে সেই দায়িত্ব পেয়েছিলেন ভারতীয়রা। তিন বছর পর ১৯৫৫ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে চার্চের প্রথম পরিচালন সমিতি তৈরি হয়। এখনও পরিচালন সমিতি রয়েছে। চার্চ পরিচালনার জন্য সংবিধানও রয়েছে। আগে প্রতি বছরই নতুন সমিতি তৈরি হত। সদস্যরা হাত তুলে ভোট দিতেন। এখন অবশ্য তিন বছর অন্তর নির্বাচন হয়। সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোট দেন। চার্চ ভবনটি ইউরোপীয় শৈলীতে তৈরি। সামনের দিকে বারান্দা। তারপর সিঁড়ি বেয়ে উঠে মূল ভবন। ভবনের পূর্বদিকে কাঠের তৈরি পুলপিট বা মঞ্চ। সামনে সারি দিয়ে রাখা কাঠের বেঞ্চ। ব্যাপটিস্টরা যীশুর মূর্তিতে বিশ্বাস করেন না। তাই পুলপিটের পিছনে রয়েছে শুধুমাত্র পবিত্র ক্রুশ। কয়েক বছর আগেই চার্চ ভবনটির সংস্কার হয়েছে। গুড ফ্রাইডে, ইস্টার, বড়দিন প্রভৃতি উৎসবগুলি এখানে যথাযথ ভাবে পালিত হয়। প্রতি রবিবার প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বার চার্চের সার্ধশত বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। চার্চের সম্পাদক দীপক মিশ্র, সভাপতি অসীম মুর্মু থেকে সার্ধশত বর্ষ উদ্যাপন কমিটির সিসিল ডি ফ্রান্সিসসকলেই আয়োজনে ব্যস্ত। শহরে প্রায় ৫০০ ব্যাপটিস্ট খ্রিস্টান পরিবারের বসবাস রয়েছে। ফ্রান্সিস বলেন, “এই ক’টা দিন পরিবারের ছোট-বড় সকলেই আসবেন। উৎসবে মাতবেন। এটাই ভাল লাগে।” |
|
|
 |
|
|