সচেতনার অভাব, গঙ্গায় এখনও কাঠামোর স্তূপ
দুর্গাপুজো শেষ। বিসর্জন পর্বও মিটে গিয়েছে। কিন্তু বিসর্জনের পরে কতটা নির্মল আছে গঙ্গা? নদী, পুকুর কতটা সাফসুতরো? হুগলির শহরাঞ্চলে গঙ্গা থেকে অধিকাংশ প্রতিমাই তুলে ফেলা হয়েছে এ বার। কিন্তু, গ্রামাঞ্চলের অবস্থা বেশ করুণ। ফলে, গঙ্গা থেকে সরস্বতী দুই নদীর নানা ঘাটে এখনও পড়ে প্রতিমার কাঠামো, ভেসে আছে পচা ফুল বা অন্য সামগ্রী।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অর্থাৎ দশমী ও একাদশীতেই জেলার প্রায় সব প্রতিমার বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল। চুঁচুড়া এবং চন্দননগর পুরসভা রীতিমতো তৎপরতা দেখিয়েছে গঙ্গা থেকে দ্রুত কাঠামো তুলে ফেলায়। উত্তর চন্দননগর থেকে সাহাগঞ্জ, মোট ন’টি ঘাটে প্রায় আড়াইশো প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাসান হয়েছে চুঁচুড়ার গোর্খা ময়দান সংলগ্ন অন্নপূর্ণা ঘাটে। প্রতিমার ফুল-বেলপাতা-সহ অন্যান্য সামগ্রী গঙ্গার ধারে পুরসভার ভ্যাটে ফেলা ছিল বাধ্যতামূলক। প্রতিমার কাঠামো, অবশিষ্ট যে টুকু ফুল এবং অন্য সামগ্রী গঙ্গায় পড়ছিল তা তুলে ফেলেছেন পুরকর্মীরা। অন্য ঘাট থেকে ভেসে আসা ফুলও তাঁরা তুলে ফেলেছেন।
ছবি: দীপঙ্কর দে।
শ্রীরামপুরের ৩ নম্বর ঘাট, রায়ঘাট, গড়গড়িঘাটে প্রচুর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আরও বেশ কয়েকটি ঘাটে ভাসান হয়। সব ঘাটেই পুরসভার তরফে ফুল, বেলপাতা ও অন্য জিনিস ফেলার জন্য ভ্যাটের ব্যবস্থা করা হয়েছেন। অধিকাংশ পুজো কমিটিই সেই নির্দেশ মেনেছে। তা সত্ত্বেও অনেক জিনিসই গঙ্গার বুকে আশ্রয় নেয় প্রতিমার সঙ্গে। প্রায় সব ঘাট থেকেই কাঠামো তুলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু উল্টো ছবি রায়ঘাটে। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি কাঠামো জলে ভাসছে। ভাসছে প্রতিমার সাজসজ্জা। ফুল-বেলপাতা। পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (জঞ্জাল) গৌরমোহন দে বলেন, “স্থানীয় যুবকরা ওই ঘাটে কাঠামো তোলেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত কাঠামো-ফুল তুলে ফেলতে বলা হয়েছে ওঁদের। তবে, আর কোনও ঘাটে এই সমস্যা নেই।” বৈদ্যবাটিতে ত্রিশক্তি ঘাট, ছাতুগঞ্জ প্রিয়দর্শিনী ঘাট, মুখার্জি ঘাট-সহ ছ’টি ঘাটে শতাধিক প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যেই পুরসভার তরফে কাঠামো তুলে ফেলা হয়েছে। কোন্নগরেও প্রায় সব কাঠামোই তুলে ফেলা হয়েছে। উত্তরপাড়ার দোলতলা ও শিমুলতলা ঘাটে শুক্রবারের মধ্যেই অধিকাংশ কাঠামো তুলে ফেলা হয়। যদিও শনিবারেও দোলতলা ঘাটে কাঠামো ভাসতে দেখা গিয়েছে। চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবা) দিলীপ যাদব বলেন, “ওগুলিও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে।”
শহরাঞ্চল মোটামুটি ভাবে উতরে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সচেতনতা এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। জিরাটে বিভিন্ন পুকুরে প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয়। এখনও অনেক পুকুরেই ভাসছে কাঠামো, পচে যাওয়া ফুল। দূষিত হচ্ছে জল। বলাগড়, গুপ্তিপাড়ায় গঙ্গার যে সব ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়, সেখানকার অবস্থাও একই। জিরাট, গুপ্তিপাড়ার একাধিক পুজো কমিটির কর্তারা বিসর্জনে গঙ্গার দূষণের কথা মেনে নিয়ে জানালেন, আগামী দিনে তাঁরা এ ব্যাপারে সদর্থক চিন্তা ভাবনা করবেন।
বলাগড়ের মতোই হুবহু ছবি চণ্ডীতলায়। এখানে মশাট বিশ্বেশ্বরতলার একটি পুকুরে রবিবার দেখা গেল ডাঁই করে পড়ে আছে অন্তত ২৫টি কাঠামো। আবর্জনায় ভাসছে গোটা পুকুর। মশাট পঞ্চায়েতের প্রধান অলোকা ধাড়া বলেন, “কাঠামো তোলা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কি না, জানি না। স্থানীয় লোকজনই এই কাজটা করে। তবে, আপনারা যখন বলছেন, তখন বিষয়টি দেখব।” চণ্ডীতলা জুড়ে সরস্বতী নদীর এখন বেহাল দশা। বহু জায়গাতেই নদী মজে গিয়েছে। চণ্ডীতলা পঞ্চায়েতের ধীবরপাড়ায় মজা এই নদীতে এখনও পড়ে রয়েছে বেশ কিছু কাঠামো। পঞ্চায়েত প্রধান বিমলকান্তি বসু বলেন, “এখানকার নিরঞ্জন কমিটির দায়িত্ব কাঠামো তোলা। ওদের সঙ্গে কথা বলে দেখব।”
পরিস্থিতি কবে বদলাবে, এখন তারই অপেক্ষা। আপাতত কাঠামোর চাপে পুকুর-নদীর হাঁসফাস অবস্থা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.