|
|
|
|
সংবিধানের মধ্যে থেকেই নয়া নাগা সংবিধান, দাবি মুইভার |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
অন্তর্বতীকালীন শান্তি চুক্তির সময় ভারতীয় সংবিধানের আওতায় থেকে ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সীমানা অক্ষুণ্ণ রেখেও নাগাদের জন্য এক বিকল্প সংবিধানের পরিকল্পনা করেছে এনএসসিএন (আইএম)। ভারত সরকারের সঙ্গে এনএসসিএন (আইএম)-এর আসন্ন শান্তি চুক্তির ফলে গড়ে
ওঠা সেই প্রস্তাবিত সংবিধানের নাম দেওয়া হবে ‘প্যান-নাগা হো হো’। আইএম-এর দাবি অনুযায়ী, ভারত
সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর পর্বে অংশীদার হবেন ২০০ জন সদস্য। শান্তি চুক্তি বিষয়ে নানা গুজব, বিতর্ক এড়াতে সম্প্রতি ডিমাপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে, এনএসসিএন (আইএম)-এর সদর
দফতর, হেব্রন শিবিরে সংগঠনের সভাপতি আইজ্যাক চিসি সু ও সাধারণ সম্পাদক থুইংলেং মুইভা এক জনসভায় এই ঘোষণা করেছেন।
নাগা-ভারত সরকার শান্তি চুক্তি ঠিক কবে হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ দিকে, সামনের বছরের প্রথম ভাগেই নাগাল্যান্ডে বিধানসভা নির্বাচন। চুক্তি হয়ে গেলে জঙ্গি নেতারা যে রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকে হাত বাড়াবেন তা বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও-সহ বিধানসভার ৬০ জন সদস্যই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা স্থায়ী শান্তির স্বার্থে স্বেচ্ছায় সরে যেতেও প্রস্তুত। |
|
থুইংলেং মুইভা |
তবে এ নিয়ে ভারত সরকার বা এনএসসিএন (আইএম) এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। মুইভা জানান, নতুন ‘অন্তর্বতীকালীন’ নাগা সংবিধানের প্রধান হবেন ইয়ুরিও বা রাষ্ট্রপতি এবং আতো কিলোনসার বা প্রধানমন্ত্রী। নাগাল্যান্ডের পৃথক পতাকাও থাকবে। তাঁর কথায়, “আমরা সর্বস্তরের নাগা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই অন্তর্বতীকালীন চুক্তিতে স্বাক্ষর করব। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নাগাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
এনএসসিএন (আই এম)-এর প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী ‘নাগা আর্মি’র কী হবে? আই-এম নেতৃত্বের ইচ্ছা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি, পৃথক নাগাবাহিনী হিসাবে কাজ করবে বর্তমান জঙ্গিবাহিনী। তবে অন্তর্বতীকালীন চুক্তির ফলাফল বা গতিপ্রকৃতি নিয়ে নাগারা খুব একটা আশাবাদী নয়। এর আগেও তিনবার ভারত সরকারের সঙ্গে জঙ্গি নেতাদের এমন চুক্তি হয়েছে। তার কোনওটিই স্থায়ী হয়নি। ১৯৪৭ সালের ২৭ জুন, দুই পক্ষে নয় দফা চুক্তি হয়েছিল। ১৯৬০ সালে হয় ১১ দফা চুক্তি। সেখানেই ১৩ নম্বর ধারায়, আশপাশের নাগা অধ্যূষিত এলাকাগুলি বৃহত্তর নাগালিমের অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়। সে শর্ত পরে মানা সম্ভব হয়নি। ১৯৬৪ সালে নাগা ন্যাশনাল কংগ্রেস সংঘর্ষবিরতি ঘোষণা করে। ১৯৭৫ সালে হয় শিলং চুক্তি। কিন্তু বিক্ষুব্ধ মুইভা, সু, খাপলাংরা এনএসসিএন গড়ে যুদ্ধ শুরু করেন। সেই সংগঠনও এখন তিন টুকরো। ১৯৯৭ সাল থেকে এনএসসিএন (আইএম)-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কেন্দ্র। ২০০১ সালে খাপলাং বাহিনী সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি সই করেছে। আপাতত অরুণাচল, মণিপুর, নাগাল্যান্ডে এনএসসিএন-এর তিন গোষ্ঠী এলাকা দখলের লড়াই চালাচ্ছে। গড়ে উঠেছে জেলিয়াংগ্রং ইউনাইটেড ফ্রন্টও। খাপলাং বাহিনী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, স্বাধীন-সার্বভৌম নাগালিমের দাবি তারা ছাড়বে না। এ দিকে, অসম, মণিপুর, অরুণাচল সরকারও সাফ জানিয়েছে, নাগা অধ্যূষিত কোনও এলাকায় ‘বহিরাগত শক্তি’-র শাসন বা হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বতীকালীন চুক্তি কতটা শান্তি আনবে তা নিশ্চিত নয়। পাশাপাশি, এতদিনের তোলাবাজ জঙ্গিবাহিনী, সাংবিধানিক ক্ষমতাসম্পন্ন ‘সরকারি বাহিনী’ হওয়ার পরে কী রূপ নেবে তা নিয়েও কার্যত আশঙ্কায় রয়েছেন নাগাল্যান্ডবাসী। |
|
|
|
|
|