রাষ্ট্রপতি ভবনে নজরে বাঙালি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
ঝাড়বাতি সেজে বসে আছে। অনেক আসনই খালি। শপথ নেওয়ার জন্য ভাবী মন্ত্রীদের আসনে বসে রয়েছেন বাংলার দুই নেতা। অধীর চৌধুরী। দীপা দাশমুন্সি।
বাংলার দুই নেতাকে দেখেই নেতা-মন্ত্রীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। সাধুবাদ জানাতে। আর এক জন কোথায়? অনেকের মুখেই প্রশ্ন। ‘আর এক জন’ এলেন একটু পরে। সপরিবার ডালুবাবু। আবু হাসেম খান চৌধুরী। সঙ্গে মৌসম নূরও। দর্শক আসনের একটা সারি জুড়ে বসল ডালুবাবুর পরিবার।
ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ছে। মায়ের সঙ্গে এলেন রাহুল গাঁধী। একগাল দাঁড়ি নিয়ে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পৌঁছতে তখনও কিছু সময় বাকি। আড্ডা জুড়লেন রাহুল। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সচিন পাইলট, মিলিন্দ দেওরাদের সঙ্গে। রদবদল নিয়ে রাহুলের কী বক্তব্য? সতীর্থদের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে রাহুলের জবাব, “মন্ত্রিসভায় আমার ছাপদের সঙ্গে কথা বলছি।” টিম-রাহুল নিয়ে এত দিন বিস্তর কথা হয়েছে। রাহুল তারই ইঙ্গিত দিলেন রসিকতা করে। |
|
শপথ অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন সনিয়া-মনমোহনদের। ছবি: পিটিআই
|
নজর কাড়লেন শশী তারুর। সঙ্গে স্ত্রী সুনন্দা পুস্কর। আইপিএল, টুইটার, ‘ক্যাটেল ক্লাস’ কী বিভ্রাটই না বাধিয়েছিলেন তারুর। খোয়া গিয়েছে মন্ত্রিত্বও। আবার ফিরে আসছেন মন্ত্রিসভায়। তারুরের থেকেও উচ্ছ্বাস বেশি সুনন্দার। রাহুলের বন্ধুদের কানে কানে গিয়ে কখনও ফিসফিস করছেন। কখনও গপ্পো জুড়ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে। চরকির মতো ঘুরছেন গোটা অশোকা হল। মোবাইলে বন্দি করছেন মুহূর্তগুলি।
শরিকদের মধ্যে একা তারিক আনোয়ার। বিরোধী তরফেও হাজির একা সুষমা স্বরাজ। পবন বনশলের দৌলতে কাজের কাজটি সেরে ফেললেন অল্প ক্ষণের মধ্যেই। সংসদীয় মন্ত্রক ছেড়ে রেলে যাচ্ছেন বনশল। নতুন সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথের সঙ্গে বিরোধী নেত্রীর সম্পর্কটি ঝালিয়ে দিলেন বিদায়ী মন্ত্রী।
সাড়ে এগারোটা। এলেন রাষ্ট্রপতি। জন-গণ-মন। তার পরেই শপথ গ্রহণ। একে একে নেতারা এলেন। শপথ নিলেন। মন্ত্রী হলেন। এল বাংলারও পালা। প্রথমে অধীর চৌধুরী। তার পর ডালুবাবু। দীপা দাশমুন্সি। করতালি অশোকার দরবারে। বাংলার জয়জয়কার। কত দিন পর বাংলা থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী হলেন কংগ্রেসের এত জন সাংসদ! শপথ নিচ্ছেন বাংলারই রাষ্ট্রপতির থেকে। এ তো বিরল দৃশ্য! দর্শক আসনে তবু কিছুটা আফশোস। এক জনও পূর্ণমন্ত্রী হলেন না!
দীপার পরেই শপথ নিতে এলেন অন্ধ্রের নেতা বলরাম নাইক। হিন্দিতে হোঁচট খাচ্ছেন বারবার। খেই ধরিয়ে দিচ্ছেন প্রণববাবু, জনসভায় সচরাচর যাঁকে হিন্দিমুখো হতে দেখা যেত না।
এক ঘণ্টার একটু বেশি সময়। শপথ শেষ। তাতে হল কী? রেজাল্ট যে বেরোয়নি। বড় বড় মন্ত্রীরা তা-ও জানেন, কী পাচ্ছেন। ছোট মন্ত্রীরা অপেক্ষায়। মিঠে কূটকচালি তার মধ্যেই। নতুন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পাল্লাম রাজু নতুন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে ডেকে বললেন, “বিদেশমন্ত্রী হয়েছ। হিনা রব্বানি খারের সঙ্গে দেখা করতে যাবে, আমাকে ডেকো।” |
|
তবে এর মধ্যেই বাংলার নেতাদের কাছে অভিনন্দন। দীপা বেশি ক্ষণ থাকলেন না। চার বছর আগে ঠিক লক্ষ্মীপুজোর আগের দিনই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি অসুস্থ হন। আজ সেই লক্ষ্মীপুজোর আগেই শপথ নিলেন। প্রিয়রঞ্জনকে হাসপাতালে গিয়ে জানিয়েছেন। তিনি শুনলেন কি? “প্রার্থনা করি, তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন” আবেগঘন দীপা।
মণীশ তিওয়ারি, শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল, আরও কত নেতা অভিনন্দন জানালেন বাংলার নেতাদের। জয়সওয়াল তো বলেই ফেললেন, “এ বারে মমতা বধে নেমে পড়ুন। এই তো সুযোগ!” অধীর বললেন, “সে দেখা যাবে ক্ষণ। ভাবুন আমাদের বাংলা থেকে এত মন্ত্রী। আর রাষ্ট্রপতি আমার জেলার লোক। সেখান থেকে সাংসদ হয়েছেন। সেখান থেকেই মন্ত্রী। আর এখন রাষ্ট্রপতি। আর তাঁর হাতেই শপথ নিচ্ছি। এ তো বাংলার গর্ব।”
|
বঞ্চিত হবে না বাংলা, আশ্বাস বনশলের
নিজস্বসংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
তৃণমূল সরকারে না থাকলেও বাংলার রেল প্রকল্পগুলি বঞ্চনার শিকার হবে না বলে ফের আশ্বাস দিল কেন্দ্র। এ বার বক্তা নতুন রেলমন্ত্রী পবন বনশল। কংগ্রেস সূত্রেও বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির কাজ তদারকি জন্যই রেল প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে অধীর চৌধুরীকে। রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে বনশল আজ সাংবাদিকদের বলেন, “রাজ্যের সঙ্গে কোনও বৈষম্য করা হবে না।” অধীরও বলেছেন, “প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত। রেলের মাধ্যমে রাজ্যের উন্নয়ন করাই আমার অন্যতম লক্ষ্য হবে।” উল্লেখ্য, রাজ্যে ডজন খানেক রেল কারখানা, প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার মেট্রো রেল প্রকল্প এবং একাধিক নতুন লাইনের কাজ এখনও বাকি। শপথ নেওয়ার পরেই বনশল এ দিন রেলে সংস্কার ও ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। |
|