মমতার মোকাবিলায় দিল্লির চাল তিন মন্ত্রী
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তিন মন্ত্রীর চাল দিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
দীপা দাশমুন্সি এবং আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) যে মন্ত্রী হচ্ছেন, সেটা গত কালই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। অধীর চৌধুরীকে নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। আজ কিন্তু মমতা-বিরোধী দুই নেতানেত্রীই (দীপা-অধীর) শপথ মঞ্চে ওঠেন। আর সম্প্রতি তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রেখে চলছিলেন যে ডালুবাবু, তাঁকে মন্ত্রী করেও আর একটি মোক্ষম চাল দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃণমূলের তাঁকে সঙ্গে পাওয়ার আশায় জল ঢেলে দিলেন।
তৃণমূল ইউপিএ ছাড়ার পরে বিভিন্ন বিষয়ে সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছিল। প্রথমেই সরানো হয় বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন। তার পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, রাজ্য না চাইলেও রায়গঞ্জেই হচ্ছে এইমস। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, সংঘাতের এই আবহকে উস্কে দিতেই দীপা-অধীরের মতো পরিচিত মমতা-বিরোধীদের মন্ত্রিসভায় নিলেন দলীয় নেতৃত্ব। আসলে হাইকম্যান্ড মনে করছে, দেড় বছর ক্ষমতায় থাকার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমছে। আবার তার মানে এই নয় যে, রাজ্যে সিপিএম ঘুরে দাড়াচ্ছে। বরঞ্চ বিরোধিতার সূত্র ধরে রাজ্যে ফের নিজের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে কংগ্রেস। সেই প্রাসঙ্গিকতাকে আরও দাপটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে এবং নিজের পরিসরকে আরও বিস্তৃত করতে এখন ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্করের পরিকল্পনা নিয়েছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। তারই রণকৌশল হিসেবে মমতা-বিরোধী হিসেবে পরিচিত দুই কংগ্রেস নেতা অধীর ও দীপাকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
শপথ নিচ্ছেন বাংলার তিন। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
দীপা নগরোন্নয়নের প্রতিমন্ত্রী, ডালুবাবু স্বাস্থ্যের। এই দু’টি পদই এর আগে ছিল তৃণমূলের হাতে। তবে সব থেকে বড় চমক অবশ্যই অধীরকে রেলের প্রতিমন্ত্রী করা। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর তৃণমূলের হাতে থাকার পরে মন্ত্রকটি সদ্য পেয়েছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই তৃণমূল জমানায় রেলের নিয়োগ নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে রেল। আগামী দিনে যদি কোনও অনিয়ম সামনে আসে, তখন অধীরের মাধ্যমেই মমতা তথা তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতি আক্রমণ শানাবে কংগ্রেস এই ইঙ্গিত আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অধীরের কথায়, “আমাদের মন্ত্রী করার পিছনে বার্তা তো রয়েছে। আমরা মমতাকে ছেড়ে কথা বলব না।”
একই সুর দীপা এবং ডালুবাবুরও। রায়গঞ্জে জমি নেই, এই অজুহাতে রাজ্য কল্যাণীতে এইমস করতে চেয়েছে। দীপা আজ জানান, প্রিয়রঞ্জনের ওই প্রকল্পের জন্য তিনি এক পা পিছোতেও রাজি নন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ডালুবাবুর বক্তব্য, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের কথা বলেছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্য জমি না দিলে দরকারে জমি কিনে হাসপাতাল গড়া হবে।”
বিরোধিতার সুর যে চড়া হবে, সে কথা মানছেন তৃণমূল নেতৃত্বও। তাই নাম না করে খোঁচাও দিয়েছেন তাঁরা। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যেমন বলেন, “এ রাজ্য থেকে যাঁরা মন্ত্রী হলেন, প্রত্যেকেই হট্টগোলকারী (শাউটিং ব্রিগেড)। রাজ্যের, বিশেষত উত্তরবঙ্গের শান্তি যাতে ব্যাহত হয়, সেই চক্রান্তের ছক কষতেই এঁদের মন্ত্রী করা হয়েছে।”
কংগ্রেস নেতৃত্বও জানেন, রাজ্যে তাঁদের প্রভাব মূলত উত্তরবঙ্গেই সীমাবদ্ধ। আজ রাজ্যের যে তিন জন মন্ত্রীর শপথ নিলেন, তাঁদের দু’জনই উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি। ডালুবাবু আবার সংখ্যালঘু সমাজের নেতা এবং গণি খানের ভাই। দীপা দাশমুন্সিও উত্তরবঙ্গ থেকে সাংসদ। আর অধীর উত্তরবঙ্গ লাগোয়া জেলার। অর্থাৎ, যে অঞ্চলে নিজেদের জোর বেশি, সেখান থেকেই কোমর বেঁধে লড়াইটা শুরু করতে চাইছে হাইকম্যান্ড।
এটা যদি প্রথম চাল হয় তা হলে দ্বিতীয়টি অবশ্যই তৃণমূলের কেন্দ্রের বঞ্চনা সংক্রান্ত অভিযোগ নস্যাৎ করার পথে পয়লা কদম। রাজ্যে রেলের অনেক প্রকল্প চলছে। নগরোন্নয়ন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ক্ষেত্রেও এত দিন কেন্দ্রের সহায়তা পেয়েছে মমতা সরকার। এ বার এই সব ক’টি মন্ত্রকে বাংলারই প্রতিনিধি এনে প্রথমেই হাইকম্যান্ড বাংলার মানুষকে বার্তা দিল, বঞ্চনা যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখতেই এই পদক্ষেপ। এর পরে এই তিন জনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যত এগোবে, তত তৃণমূলের বঞ্চনার অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়া সম্ভব হবে। রাজ্যের মানুষের কাছে বাড়বে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতাও।
তবে এই কাজে যে রাজ্য সরকারের তরফে বাধা আসতে পারে, সেই আশঙ্কাও করছেন তিন মন্ত্রী। অধীরবাবুর কটাক্ষ, “একটুও সহযোগিতা পাব না। যদি পাই তো ধন্য হব।” দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, সংঘাতের মাধ্যমে দলের শ্রীবৃদ্ধি হয়। তাই শরিকি রাজনীতিতেও সংঘাত প্রয়োজন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস ও এনসিপি মিলে সরকার চালালেও দু’দলের সংঘাত বন্ধ হয়নি।” পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন সময়ে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রাখতে সংঘাত হয়েছে সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে।
তাই হাইকম্যান্ড চাইছে, রাজ্যে দলের প্রভাব বাড়াতে জেলা সফর শুরু করুন তিন মন্ত্রী। রাজ্য কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রও মনে করেন, এই তিন জন মন্ত্রী হওয়ায় উজ্জীবিত হবে দল। এর পাল্টা হিসেবে তৃণমূলের একাংশ দীপা ও অধীরের নামে জমে থাকা ফৌজদারি মামলা খুঁচিয়ে তুলতে চাইতে পারে বলে আশঙ্কা। তাই তৃণমূলের আমলে রেলে দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা দেখার পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে চায় কেন্দ্র। দরকারে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সব মিলিয়ে, দুই প্রাক্তন শরিকের সংঘাত-ক্ষেত্র পুরোপুরি প্রস্তুত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.