প্রেক্ষাগৃহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকা সংস্থা নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আসানসোল পুরসভার বিরুদ্ধে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই পুরসভার শাসক ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত দুই ঠিকা সংস্থাকে সরানোর দাবি তুলেছে বিরোধীরা।
বেনিয়মের বিষয়টি নজরে আসতেই আসানসোল পুর কমিশনার জয়ন্ত আইকত টেন্ডার কমিটিকে চিঠি দিয়ে ভবিষ্যতে আর যেন এ রকম না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তার প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও চেয়ারম্যানকেও। বেনিয়মের কথা কার্যত স্বীকার করে নিলেও মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, পুরসভাকে এ জন্য বিশেষ ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সচেতন থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি টেন্ডার কমিটিকে লেখা একটি চিঠিতে পুর কমিশনার জানান, রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল চলতি বছরের ১৯ জুন লোকাল অডিট দফতরের একটি রিপোর্ট থেকে জেনেছেন, আসানসোল পুরসভার রবীন্দ্রভবন ও সম্প্রীতি ভবন প্রেক্ষাগৃহ দু’টির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত দুই ঠিকা সংস্থার নিয়োগের পদ্ধতিতে বেনিয়ম হয়েছে। ফলে পুরসভাকে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের কাছ থেকে এই তথ্য জানার পরেই পুর কমিশনার জয়ন্তবাবু পুরসভার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিঠি পাঠান। তিনি বলেন, “বেনিয়মের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছি। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। রাজ্য সরকার নির্দেশিত বরাত দেওয়ার নিয়মগুলি সবিস্তার জানিয়েছি।” জয়ন্তবাবু জানান, এই দু’টি প্রেক্ষাগৃহ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পুরসভা দরপত্র ডেকেছিল। নিয়ম মতো যাদের পাওয়ার কথা, তারা বরাত পায়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে প্রশ্ন প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল তুলেছেন, সে বিষয়ে আগেই নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল লোকাল অডিট দফতরের সহকারী অডিট অফিসার সুনীল কুমার। গত বছর নভেম্বরে একটি বিশেষ রিপোর্টে তিনি সে কথা জানান। রিপোর্টে সুনীলবাবু জানিয়েছিলেন, বার্নপুরের সম্প্রীতি প্রেক্ষাগৃহ রক্ষণাবেক্ষণের বরাত পাওয়ার জন্য আবেদন করে ন’টি ঠিকা সংস্থা। তার মধ্যে যে সংস্থাটি সর্বনিম্ন দর দিয়েছিল তাকে বরাত দেওয়া হয়নি। সর্বাধিক দর যে সংস্থাটি দেয়, তাকেই এই কাজের বরাত দেওয়া হয়। আসানসোল রবীন্দ্র ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের বরাত পেতে আবেদন করে তিনটি সংস্থা। এ ক্ষেত্রেও সর্বনিম্ন দর দেওয়া সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়নি। অথচ সর্বনিম্ন দর দেওয়া এই দুই সংস্থার সমস্ত কাগজপত্রও ঠিক ছিল। ফলে আসানসোল পুরসভাকে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বিষয়টি জানাজানি হতেই সরব হয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলররা। পুরসভার বোর্ড মিটিংয়েও তাঁরা কয়েক বার প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। বিরোধী নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায়ের দাবি, “এটা বেনিয়ম নয়, দুর্নীতি। পুরসভার বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।” ওই দুই সংস্থাকে সরানোর দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
বেনিয়ম যে কিছুটা হয়েছে, তা কার্যত মেনে নিলেও দুর্নীতির অভিযোগ মানতে চাননি মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “যারা সর্বনিম্ন দর হেকে বরাত চেয়েছিল, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি তাদের কাগজপত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। এ ছাড়া বরাত পাওয়া সংস্থা দু’টি তৈরি করেছেন এলাকার বেকার যুবকেরা। তাঁদের বরাত দেওয়ায় পুরসভা একটা সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছে।” |