বন্ধ পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেডের (এইচএফসিএল) স্বেচ্ছাবসর নেওয়া প্রায় দু’শো কর্মীর আবাসনের লিজ আট মাসের জন্য নবীকরণের সিদ্ধান্ত নিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। ১৬ অক্টোবর ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে ৩০ জুন অবধি আবাসনে থাকতে পারবে ১৯৬টি পরিবার। তাতে সাময়িক হলেও স্বস্তি মিলল পরিবারগুলির।
১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে দুর্গাপুরে গড়ে ওঠে এই সার কারখানাটি। উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭২ সালে। কারখানা সূত্রে জানা যায়, সার তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা ব্যবহার করা হত। কিন্তু বছর যেতেই দেখা যায় এ ভাবে ইউরিয়া তৈরি করায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে রুগ্ণ হয়ে পড়ে কারখানাটি। ১৯৯৮ সালে কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিআইএফআর-এর (বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন) আওতায় চলে যায় কারখানাটি। স্বেচ্ছাবসর নেন ১১২৫ জন শ্রমিক। |
স্বেচ্ছাবসর নেওয়া কর্মীদের অনেকেই আবাসন ছেড়ে চলে গেলেও এই ১৯৬টি পরিবার রয়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে ১১ মাসের চুক্তিতে ওই পরিবারগুলিকে আবাসনের লিজ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে ফের চুক্তি নবীকরণ করা হয়। এ ভাবে এত দিন চললেও শেষ বার কারখানা কর্তৃপক্ষ ৮ মাসের জন্য লিজ নবীকরণ করেছিল। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর সেই লিজের মেয়াদ ফুরনোর কথা ছিল। কর্তৃপক্ষের তরফে পরিবারগুলিকে জানানো হয়, এর পর থেকে আর চুক্তির নবীকরণ করা হবে না। তাই নভেম্বরের গোড়াতেই ঘর হারানোর আশঙ্কায় ভুগছিলেন এই প্রাক্তন কর্মীরা।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের রসায়ন ও সার মন্ত্রকে আবেদন করে আইএনটিইউসি প্রভাবিত দুর্গাপুর ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ওয়াকার্স ইউনিয়ন এবং সিটু। আইএনটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জি সঞ্জীব রেড্ডি চিঠি দেন কেন্দ্রীয় রসায়ন ও সার মন্ত্রী শ্রীকান্ত কুমার জেনাকে। ১১ এপ্রিল জবাবি চিঠিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। সম্প্রতি কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬ অক্টোবর সংস্থার দিল্লি অফিস থেকে সিদ্ধান্ত হয়, আরও ৮ মাসের জন্য চুক্তি নবীকরণ করা হবে। সম্প্রতি লিখিত ভাবে সেই সিদ্ধান্ত জানানো হয় দুর্গাপুরের কারখানায়।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে সাময়িক ভাবে স্বস্তি ফিরেছে এই পরিবারগুলিতে। বাসিন্দা জগন্নাথ দত্ত, উৎপল দাসদের কথায়, “আপাতত কিছু দিনের জন্য আশঙ্কা কাটল।” যদিও সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় ঘর হারানোর আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে তাঁদের। অন্যত্র যাওয়ার মতো আর্থিক পরিস্থিতিও নেই বলে দাবি এই বাসিন্দাদের। তাই সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ কর্মী আবাসনেই থাকতে হচ্ছে তাঁদের। বাসিন্দাদের দাবি, ফাঁকা আবাসনগুলির দরজা, জানালা ভেঙে নিয়ে গিয়েছে চোরেরা। রাতের দিকে অসামাজিক কাজকর্মও চলে বলে অভিযোগ। জগন্নাথবাবুরা জানান, পাকাপাকি ভাবে আবাসন নিয়ে এই টানাপোড়েনের একটা বিহিত চাইছেন তাঁরা। কারখানার একটি সূত্রের দাবি, বিআইএফআর-এর আওতা থেকে বেরিয়ে এলেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। |