এ বছরও পুজোয় ভিন রাজ্য থেকে পদ্মফুল আমদানি করতে হবে বলে মনে করছেন রাজ্যের বেশ কিছু ফুলচাষী। বর্ষা কম হওয়ায় পদ্মফুল চাষ এ রাজ্যের সর্বত্র কম হয়েছে। পাশাপাশি হঠাৎ করে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা চলতে থাকলে গাঁদা কিংবা দোপাটি ফুলের মতো নরম ফুলের গাছের গোড়াগুলি পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুর্গা পুজোয় রাজ্য জুড়ে প্রায় এক কোটি পদ্মের চাহিদা থাকে। কিন্তু এ বছরে বর্ষা কম হওয়ায় ওড়িশা এবং চেন্নাই থেকে পদ্মফুল আনতে হবে। ফুলচাষীদের মতে, পদ্মফুল চাষ হওয়ার আসল সময় বর্ষাকাল। সেই ফুল তুলে এনে পুজোর সময় সরাসরি বাজারে আনা হয় অথবা হিমঘরে রাখা হয়। হিমঘরের ফুলগুলি পুজোর সময় বের করে আনা হয়। কিন্তু ফুল রাখার জন্য যে ধরণের হিমঘর রাখার দরকার, তা এ রাজ্যে একটিও নেই। ২০০৪ সালে পাঁশকুড়ায় ফুলের জন্য একটি হিমঘর তৈরি হলেও কয়েকমাস পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে যে হিমঘরগুলি রয়েছে, সেগুলি মাল্টি-পারপাস হিমঘর। এটিতে বিভিন্ন রকমের ফুল এবং ফল একসঙ্গে রাখা হয়। কিন্তু ফুল রাখার জন্য যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা থাকা দরকার, সেই ধরণের তাপমাত্রার কোনও হিমঘর এখনও এরাজ্যে নেই। তার উপর বর্ষা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় পদ্ম চাষ এবারে অনেক কম।
এ রাজ্যের বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব-মেদিনীপুর এবং হাওড়ায় সাধারণত পদ্মের চাষ হয়। পতিত কিংবা জলাজমি এবং একই সঙ্গে রেললাইনের কিংবা ন্যাশানাল হাইওয়ের পাশে নয়ানজুলিতেই বেশি পরিমাণ পদ্মের চাষ হয়। কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ যথাযথ না হওয়ায়, সেই চাষই কমে গিয়েছে। একমাত্র ভরসা রাজ্যের বিভিন্ন হিমঘরগুলি। কিন্তু সেখানেও যদি দেখা যায়, পদ্মের সংখ্যা কম বা হিমঘরে সঠিক তাপমাত্রায় না থাকায়, সেগুলির অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ভিন রাজ্য থেকে পদ্মফুল আমদানি করতেই হবে।
এ প্রসঙ্গে সারা বাংলা ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “এ বছরে সত্যিই বর্ষা কম হওয়ায় পদ্মের চাষ কম হয়েছে। সেক্ষেত্রে হিমঘরগুলি থেকে কত ফুল বেরোয় দেখতে হবে। নাহলে ওড়িশা থেকে পুজোর আগে পদ্ম আমদানি করতে হবেই।” যদিও মল্লিকঘাট ফুলবাজার পরিচালন সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন বর্মন বলেন, তুলনামূলক ভাবে এ বছর রাজ্যে পদ্মের চাষ কম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হিমঘরে যা মজুত আছে, তাতে পুজোর সময় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তিনি আরও জানান, তাছাড়া অন্য রাজ্য থেকেও পদ্ম আমদানি করা হয়। সেক্ষেত্রে চাহিদা মতো ফুল দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে আগামী পনেরো দিনের মধ্যে পাঁশকুড়ার ফুলের জন্য তৈরি হিমঘরটি নতুন করে খোলার চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানা গেল।
সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ফুলের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেক্ষেত্রে নিম্নচাপের কারণে প্রায়ই বৃষ্টি হলে দোপাটি, গাঁদা, অপরাজিতার মতো ফুলগুলির গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। বেড়ে যাবে ফুলের দামও।
কলকাতার মল্লিকঘাটের ফুলবাজারে এই মুহূর্তে ফুলের যোগান ঠিকঠাক থাকলেও, বৃষ্টি চলতে থাকলে আমদানি কমে যাবে। ফলে পুজোর সময় ফুলের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে আশঙ্কা ফুল বিক্রেতাদের। ফুল বিক্রেতা দিলীপ কুমার আদক। গাঁদা ফুলের মালা নিয়ে প্রতিদিনই বসেন। তিনি জানান, সাধারণত এই সময় একটি কুড়ি ফুলের একটি গাঁদার মালার দাম এই মুহূর্তে ষাট টাকা থেকে আশি টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এই রকম বৃষ্টি চললে পুজোর সময়ই এই রকম একটি মালার দাম পড়বে একশো ষাট থেকে একশো আশি। তবে এখনও পর্যন্ত আমদানি ঠিকঠাক রয়েছে। কিন্তু পুজোর আগে পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকলে ফুলের যোগান কমবে, কিন্তু দাম বাড়বেই। |