গত কাল নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিলেও আগামী বছরের শুরুতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চায় তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার। আজ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর বক্তব্য, শীতকালেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের।
আগামী বছরের মাঝামাঝি বর্তমান পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথম থেকেই ভোট আনার পক্ষে সওয়াল করে আসছিল। বর্তমানে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ চালু রয়েছে। ২ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে চাইছে কমিশন। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতি কমিশনের বক্তব্য ছিল, রাজ্য চাইলে নতুন তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে ভোট করতে পারে।
কমিশনের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে আজ দিল্লিতে তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে দেওয়া অর্থহীন। কেন না নতুন না পুরানো, কোন ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ভোট হবে, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে একমাত্র রাজ্যেরই। লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষেত্রে গোটা দায়িত্বটিই থাকে রাজ্য সরকারের হাতে। তৃণমূলের দাবি, এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অতীতের নজির টেনে মুকুল রায়ের দাবি, “২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল পুরানো তালিকার ভিত্তিতে। আর ভোট হয় নতুন তালিকা অনুযায়ী।”
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্ব দ্রুত নির্বাচন সেরে ফেলতে চাইছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জানুয়ারি মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দল বুঝতে পারছে, ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার কাজ শেষ হলেও তার পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে ভোট করতে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন করা যাবে না। তাই রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ চিঠি লিখে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। কিন্তু কমিশন তা খারিজ করে দিয়েছে।
রাজ্যের ওই আবেদনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাল্টা আবেদন জানায় সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। দু’দলের অভিযোগ, তৃণমূল নেতৃত্ব বিরোধিতা বাড়ার ভয়ে তড়িঘড়ি নির্বাচন চাইছে। অথচ ভোটার তালিকা সংশোধন ছাড়াও আসন পুনর্বিন্যাস ও মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ আইন-মাফিক করার কাজও বাকি রয়েছে।
সব পক্ষের আবেদন খতিয়ে দেখে গত কাল নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তালিকা সংশোধন স্থগিত রাখা সম্ভব নয়। নির্ধারিত সূচি মেনেই সংশোধনের কাজ চলবে। সরকার ও তৃণমূলের তিক্ততা যখন চরমে, তখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তকে ‘রাজ্যের বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ বলে মনে করছে তৃণমূল। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যদি ভোট হয়, তা হলে কি মাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হবে? মুকুল রায় বলেন, “বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। প্রয়োজনে এমন ভাবে ভোটের দিন এগিয়ে আনতে হবে, যাতে পরীক্ষার্থীরা অসুবিধায় না পড়ে।” সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের শেষেই কি নির্বাচন হতে চলেছে? এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দিতে চাননি মুকুলবাবু। তবে পুজোর সময়ে দশ দিন যাতে তালিকা সংশোধনের কাজ স্থগিত রাখা হয়, সেই দাবি জানাতে ফের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মুকুলবাবু বলেন, “আমরা মনে করি ওই সময় ভোটার তালিকা সংশোধন হলে মানুষের অসুবিধা হবে।” |