হুঁশিয়ারি, সাধারণ প্রচার, আইনি ব্যবস্থা কিছুতেই কিছু হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে চোরাগোপ্তা পোস্ত চাষ ঠেকাতে শেষমেশ এসএমএস-কে হাতিয়ার করতে চলেছে পুলিশ।
মাছ-ভাতের মতোই বাঙালির রসনাতৃপ্তির আর এক প্রিয় উপাদান পোস্ত। অথচ পশ্চিমবঙ্গে পোস্তের চাষ নিষিদ্ধ। কারণ পোস্তগাছের ফল যে হেতু নেশার উপাদান আফিমের উৎস, তাই যত্রতত্র পোস্ত চাষ করা যায় না। কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ নারকোটিক্স’ শুধু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে পোস্ত চাষের অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ পোস্ত-প্রিয় বাঙালির পাতে পোস্তের জোগান আইনত ভিন রাজ্য থেকে আসার কথা।
কিন্তু মূলত আফিম-কারবারের আকর্ষণে পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি ভাবে, লুকিয়ে-চুরিয়ে পোস্ত চাষ চলছেই। পুলিশের দাবি, সংগঠিত অপরাধ-চক্র কৃষকদের একাংশকে মোটা লাভের টোপ দিয়ে সে পথে নামাচ্ছে। অভিযান চালিয়ে, পোস্তগাছ পুড়িয়ে, এমনকী কিছু ক্ষেত্রে আইনভঙ্গকারীদের শাস্তি দিয়েও এই প্রবণতা রোখা যাচ্ছে না বলে পুলিশ-কর্তারাই স্বীকার করেছেন।
এ বার তাই পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সরাসরি কৃষকদের মোবাইলে এসএমএস মারফত আবেদন জানানো হবে, কেউ যেন নিজের জমিতে পোস্ত না ফলান। শুধু তা-ই নয়, আশপাশে কোথাও গোপনে পোস্ত চাষ হয়ে থাকলে তাঁরা যেন সত্বর স্থানীয় থানায় খবর দেন। পঞ্চায়েত সদস্যের মতো তৃণমূল স্তরের জনপ্রতিনিধি থেকে সরকারি কর্মী সকলেই যাতে নিজের নিজের এলাকায় পোস্তের ফলন বন্ধে উদ্যোগী হন, এসএমএসে সেই অনুরোধও থাকবে। এমনকী কোথাও পোস্ত চাষের পিছনে পঞ্চায়েত সদস্য বা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীর গাফিলতি ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হবে এসএমএসে।
গোয়েন্দামহলের দাবি: পশ্চিমবঙ্গে গোপনে পোস্ত চাষ হয় প্রধানত সাতটি জেলায় বধর্মান, হুগলি, বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরে। এবং অক্টোবর মাস জুড়ে এই সাত জেলার কয়েক লক্ষ মোবাইল-গ্রাহককে ওই সতর্ক-বার্তা পাঠানো হবে। রাজ্যস্তরের মাদক-নজরদারি সংস্থা নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) এর খরচ জোগাবে। অবৈধ পোস্ত চাষ রুখতে পশ্চিমবঙ্গে এমন মোবাইল-প্রচার অভিযান এই প্রথম।
পশ্চিমবঙ্গে পোস্ত চাষের ছবিটা ঠিক কী রকম?
পুলিশের বক্তব্য, অক্টোবর-নভেম্বর জুড়ে পোস্ত চাষ শুরু হয়। পোস্তগাছে ফল আসে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। গত বছর জানুয়ারিতে রাজ্যের অন্তত সাড়ে ন’হাজার একর জমিতে বেড়ে ওঠা পোস্তগাছ প্রশাসন পুড়িয়ে দিয়েছিল। এ বছর জানুয়ারিতে অভিযান হয় ৩৪০ একরে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আরও অন্তত তিন হাজার একরে পোস্ত ফলানো হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা পরে জানতে পেরেছেন। সিআইডি-র ডিআইজি শঙ্কর চক্রবর্তীর কথায়, “আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। এ বার তাই আমরা আগাম সতর্ক। পোস্তর চাষই যাতে শুরু না হয়, সে জন্য অক্টোবর জুড়ে এসএমএসে প্রচার চলবে।”
পোস্ত চাষ রুখতে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণ কী?
পুলিশ-সূত্রের ব্যাখ্যা, এনসিবি সাধারণত উপগ্রহ-চিত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, কোথায় কোথায় পোস্ত চাষ হচ্ছে। সেই মতো জেলা পুলিশ এবং সিআইডি যৌথ অভিযান চালায়। কিন্তু উপগ্রহ-চিত্রে সব এলাকার ছবি স্পষ্ট ধরা পড়ে না বলে রাজ্য পুলিশের একাংশের দাবি। এই মহলের বক্তব্য: বহু ক্ষেত্রে নদীর চর ও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বহু অঞ্চলে পোস্তের খেত উপগ্রহের চোখ এড়িয়ে যায়। অনেক সময়ে আবার নজরদারি এড়াতে অন্য ফসলের জমির মাঝখানে থাকা পোস্তের জমি ঢেকে রাখা হয়।
আড়ালে পোস্ত ফলনের সেই সব তথ্য জানার জন্যও এসএমএস বড় সহায় হবে বলে আশায় রয়েছে পুলিশ। |