|
|
|
|
কাঞ্চনজঙ্ঘায় এ উন্মাদনা প্রথম, দাবি |
নমিতেশ ঘোষ • শিলিগুড়ি |
কোথাও ইস্টবেঙ্গলের পতাকা হাতে ছুটে বেড়াচ্ছে তরুণ। কোথাও অসংখ্য যুবকের তারস্বরে চিৎকার। বাঁশির শব্দে কান ঝালপালা। টিকিট পাওয়ার আশায় ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তরুণ-তরণীরাও। এমন হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীকে সামলাতে হিমশিম পুলিশ। সবশেষে টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভও হল। তা সামাল দিতে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করল পুলিশ। তাড়া খেয়ে ফিরতে হল জনতার একাংশকে। রবিবার সকাল থেকে খেলা শুরুর আগে পর্যন্ত এমনই দৃশ্য দেখা গেল শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সামনে। শেষ কবে শিলিগুড়িতে কোনও খেলা নিয়ে এমন উন্মাদনা তৈরি হয়েছে? অনেকে আশির দশকের নেহরু কাপের কথা বললেও এমন উন্মাদনা এই প্রথম বলেই দাবি করলেন। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সভাপতি অরূপরতন ঘোষ বলেন, “১৯৮৮ সালে নেহেরু গোল্ডকাপ হয় শিলিগুড়িতে। সে সময় আমি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সদস্য। স্টেডিয়ামে ভিড় হয়েছিল। কিন্তু এমন উন্মাদনা, টিকিট কিনতে এমন ভিড় হয়নি।” তিনি জানান, গত দু’দিনে ২০ হাজারের উপর টিকিট বিক্রি হয়েছে। শুধু তিনি নন, সকাল থেকে ক্রীড়া অফিস চত্বরেই ছিলেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব তথা শিলিগুড়ি পুরসভার পূর্ত দফতরের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, “শনিবার আমি কিছু টিকিট কিনেছিলাম। আরও কিছু টিকিটের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু পাচ্ছি না। মানুষের এত ভিড় হবে কল্পনা করতে পারিনি।” |
|
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
আর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব তো এদিন ৫টার পর থেকে কোনও কর্মসূচি রাখনেনি। তিনি সন্ধ্যায় খেলা দেখতে মাঠে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টিকিট দিয়েছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃপক্ষ। টিকিট বিক্রির গতি দেখে ওই দিন টিকিট দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। রবিবার সকাল ১০টা থেকে টিকিট দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া। আর শনিবার রাত আড়াইটা থেকে লাইন পড়ে যায় টিকিট কাউন্টারের সামনে। আকাশ ফর্সা হতে শুরু করায় দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন কাউন্টারের সামনে। ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশি পাহারায় তিনটি কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। একটি কাউন্টার থেকে লাইন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে হাসপাতাল মোড় হয়ে ভেনাস মোড়ের দিকে চলে যায়। আর একপাশে মহকুমা পরিষদের অফিস ছাড়িয়ে যায় লাইন। তুলনামূলক ভাবে মহিলাদের লাইন কিছুটা ছোট হয়। দিনের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে বাড়তে থাকে লাইন। সল্টলেকের সন্দীপন সাহা দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি লাইনে। তিনি জানান, শনিবারই তাঁদের ১২ জনের একটি দল শিলিগুড়িতে পৌঁছন। ওই দিন টিকিট পাননি। এদিন তাই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রায় ছয় ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। তার পর টিকিট পেয়েছি। অসংখ্য মানুষের লাইন দেখে আমরা খানিকটা আশাহত হয়ে পড়েছিলাম। এখন টিকিট হাতে পেয়ে খুব ভাল লাগছে।” শিলিগুড়ির মনোজ বাকি, তানসেন মজুমদাররা বলেন, “বহুক্ষণ দাঁড়িয়েছি। ভোর রাত থেকে বলা চলে। ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে উঠেছে। ঘরের কাছের মাঠে খেলা হচ্ছে। টিকিট না পেলে আফসোস থেকে যেত।” শিলিগুড়ির গিরীশ ঘোষ সরণীর তরুণী ঐশ্বর্যা বসু, বাবুপাড়ার তরুণী ঝুমকি দে বলেন, “ইস্টবেঙ্গল প্রিয় দল। সেমিফাইনাল দেখেছি। ফাইনাল দেখব বলে সকাল সকাল টিকিট কাউন্টারের সামনে চলে এসেছি। আশা করছি টিকিট পেয়ে যাব।” ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কমল সাহা পুরুষদের লাইনে ভিড় দেখে মহিলাদের লাইনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে বলে, “খেলা আমাকে দেখতেই হবে।” এই অবস্থায়, চলতে থাকে টিকিট ব্ল্যাক। ২০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। আবার ৫০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। পুলিশ এক জনকে আটক করে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ টিকিট শেষ হয়ে যায়। লাইনে কয়েকশ মানুষ। তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ সরিয়ে দেয়। |
|
|
|
|
|