|
|
|
|
মর্গ্যান এখন কলকাতা ফুটবলের দ্রোণাচার্য |
রতন চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
জন্মদিনে কোচিং জীবনের অন্যতম সেরা উপহার পেয়েও ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ভুলতে পারছেন না কটক-জয়ের কথা। “সে বার প্রথম ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করতে এসেছিলাম। টিঁকে থাকার চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রমাণ করার ব্যাপার ছিল। তাই এ বারের চেয়েও কটকের ফেড কাপ জয়টাকেই এগিয়ে রাখছি,” বলে দিলেন এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড গড়ে ফেলা লাল-হলুদ কোচ। তিন বছর এ দেশে কোচিং করাচ্ছেন। তিনবারই ‘চ্যাম্পিয়ন ক্লাব অব ইন্ডিয়া’ ট্রফির ফাইনালে। দু’বার চ্যাম্পিয়ন। ভারতের ক্লাব ফুটবলে কোচিং করতে আসা কোনও বিদেশি কোচের যা নেই। কলকাতা ফুটবলের ‘দ্রোণাচার্য’ এখন মর্গ্যান।
কিন্তু ডেম্পোর মতো পাঁচবার আই লিগ জেতা দলকে হারিয়ে ভারতসেরা হয়েও কী নিস্পৃহ ব্রিটিশ কোচ! ফুটবলাররা তাঁকে আকাশে তুলে লোফালুফি করেছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘায় তাঁর সঙ্গে একটা ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি। ভিকট্রি স্ট্যান্ডে নজিরবিহীন ভাবে তাঁর নামে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ স্লোগান দিচ্ছে পুরো ইস্টবেঙ্গল টিম। মর্গ্যান সব দেখেশুনে শুধুই হাসছেন। সুযোগ পেলেই ভিড় থেকে দূরে গিয়ে উপভোগ করছেন উৎসব।
ড্রেসিংরুমের মধ্যে শ্যাম্পেনের বদলে জলই ছুড়লেন খাবরা, সৌমিক, অর্ণবরা। তখনও মর্গ্যানের মুখে অনাবিল সেই হাসি। যা থাকে অনুশীলনের সময়, সুইমিং পুলে, জিমে। “চিডিকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল। অর্ণব-রাজুকে নিয়ে কালীঘাট ম্যাচের পরে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। সব নিশ্চয়ই থেমে যাবে আজ। কাউকে জবাব দেওয়ার জন্য নয়, আমরা খেলেছি আমাদের জন্যই। জেতার জন্য। এই জয় ফুটবলারদের জবাব,” সোনার দিনেও প্রকৃত শিক্ষকের মতোই ফুটবলারদের পাশে কোচ। নির্লিপ্ত, আবেগহীন। ফাইনাল শেষে হাল সিটির প্রাক্তন কোচ আশীর্বাদের ভঙ্গিতে দুটো হাত তুলে ধরেছিলেন মাঠের দিকে। তারপর মাঠের ভেতরে ঢুকে একে-একে ফুটবলারদের বুকে জড়িয়ে ধরা, মাথায় হাত রাখা। যাঁদের নিয়ে সবথেকে আশঙ্কায় ছিল ‘লাল-হলুদ বিশ্ব’, সেই দুই স্টপার রাজু গায়কোওয়াড় আর অর্ণব মণ্ডলকে বুকে জড়িয়ে রাখলেন অনেকক্ষণ। ডেম্পো কোচ আর্মান্দো কোলাসোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসে বলে দিলেন, “প্রথমে গোল খেয়েও তাড়াতাড়ি গোল শোধটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। |
|
ব্যান্ডমাস্টারের বুকে প্রধান মিউজিশিয়ান। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
এর পর ডেম্পোকে আর আমাদের ঘাড়ে চাপতে দিইনি।” উচ্ছ্বাসের ঢেউ শেষে টিম বাসে ওঠার মুখেও ‘দ্রোণাচার্য’ বাস্তবের জমিতে। “সবে শুরু হল। আরও অনেক পথ বাকি। সামনে আই লিগ। এএফসি কাপ।” কথা শুনলেই বোঝা যায়, আপাতত লাল-হলুদ কোচের লক্ষ্যমিশন আই লিগ। যা এখনও ছুঁতে পারেননি মর্গ্যান।
স্টেডিয়ামের বাইরে টিম বাস ঘিরে রাত পর্যন্ত চলেছে উৎসব। তবে হোটেলে ফিরে উৎসব জমল না। অনেক খুঁজেও কেক পাওয়া গেল না। সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করার ঝক্কি অবশ্য সামলাতে হল চিডি-মেহতাব-মননজিতদের। শেষ গোলটা করার পরই গ্যালারির সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছিলেন চিডি। পাঁচটা গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবু এখনও তাঁর সঙ্গে তুলনা হচ্ছে ক্লাব ছেড়ে যাওয়া টোলগে ওজবের। এতে রীতিমতো বিরক্ত নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। “টোলগে টোলগের মতো, আমি আমার মতো। ওর অনেক কিছু আছে যা আমার নেই, আবার আমার অনেক কিছু আছে যা ওর নেই,” জার্সি খুলে ওড়াতে ওড়াতে বলে দিলেন চিডি। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “ফ্রিকিকে গ্রুপ লিগে স্পোর্টিং ক্লুব গোয়ার বিরুদ্ধে করা গোলটাই আমার সেরা।” ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ মেহতাবের আবেগ আবারঅন্য জায়গায়। “গত বার ফাইনালে মাত্র তিন মিনিট খেলে চোটের জন্য মাঠ ছাড়তে হয়েছিল আমাকে। দল হেরে গিয়েছিল। তাই এ বার ফাইনালে মনে-মনে একটা চ্যালেঞ্জ ছিলই। আমরা সবাই শপথ নিয়েছিলাম, জিতেই মাঠ ছাড়ব।” মর্গ্যানের টিমের প্রত্যেক ফুটবলারের আলাদা আলাদা ‘যুদ্ধ’ ছিল, বোঝা যাচ্ছিল ম্যাচের পর। ওপারা-গুরবিন্দরের অবর্তমানে যাঁদের উপর দায়িত্ব ছিল কোকো-সুয়েকাদের রোখার, তাঁদের মধ্যে রাজু খুব কম কথা বলেন। এ দিনও চুপচাপ। অন্য জন অর্ণব বলছিলেন, “কোচ আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলেই এই সাফল্য। কালীঘাট ম্যাচ একটা খারাপ দিন ছিল। খারাপ সময় ফাইনালে কাটিয়ে উঠবই জানতাম। সেটা পেরে ভাল লাগছে।” |
|
|
|
|
|