এক দিনেই শেষ হয়ে গেল সিটুর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন।
রবিবার খড়্গপুর শহরের রবীন্দ্র ইনস্টিটিউটে সিটু’র সপ্তম বর্ষের এই সম্মেলন হয়। আগে তিন দিন ধরে সিটু’র সম্মেলন চলত। সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশেরও আয়োজন করা হত। এ বার অবশ্য সেই ‘জাঁক’ নেই। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও উৎসাহে ‘ভাটা’ এসেছে। কেন এ বার এক দিনেই সম্মেলন শেষ হচ্ছে? সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে আমাদের এগোতে হচ্ছে।” তাঁর বক্তব্য, “ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে। আজ সম্মেলন শেষ হলেই কাল থেকে ফের নতুন আন্দোলন শুরু হবে। আমাদের কাছে প্রতিটা দিনই গুরুত্বপূর্ণ।” যদিও সংগঠনের এক জেলা নেতা মানছেন, “প্রতিকূল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পর সর্বাত্মক আক্রমণ ও চক্রান্ত চলছে। উদ্ভূত প্রতিকূলতার মধ্যেই সব দিক দেখে আমাদের এগোতে হচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে আগের মতো সেই জৌলুস আর নেই, এটা ঠিক। তবে আমরা আন্দোলনে আছি।” |
জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়েও এই আন্দোলনে থাকার কথাই বলেছেন দীপকবাবু। তিনি বলেন, “অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশে চলছে। ঢালাও উদারীকরণের ব্যবস্থা চালু করছে। একের পর এক আক্রমণ নেমে আসছে। এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা। আক্রান্ত স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এটা সম্ভব। সর্বস্তরের শ্রমজীবী জনগণকে এই আন্দোলনে সামিল করতে হবে।” পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “শিল্পকে নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এ জেলাতেও শিল্পের আরও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শালবনিতে জিন্দলদের কারখানার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই কাজ আর এগোয়নি।” সেই সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের সময় যে কোনও অশান্তি হয়নি, নিজের বক্তব্যে তা-ও জানান দীপকবাবু। তাঁর কথায়, “শালবনিতে জিন্দলদের কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। খড়্গপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সেই সময় সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম হওয়া সত্ত্বেও এখানে কিন্তু লাঠিচার্জ করতে হয়নি। মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিলেন।” রবিবারের সম্মেলন থেকে শিল্পস্থাপন ও কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনে নামারই ডাক দিয়েছেন সিটু নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চিহ্ণিত ত্রুটিগুলিকে সংশোধন করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগঠনের সম্প্রসারণের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
এ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিটু’র রাজ্য নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, দীপক দাশগুপ্ত প্রমুখ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্না আন্দোলন জনগণের কাজে লাগবে বলে মন্তব্য করেন সিটু’র রাজ্য নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আন্দোলন কতদিন স্থায়ী হল, তা পরে দেখা যাবে। তবে উনি আন্দোলন করছেন, এটা ভাল। জনগণের কাজে লাগবে।” পাশাপাশি তাঁর কটাক্ষ, “আমরা আগে থেকেই কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছি। উনি পরে বুঝতে পেরেছেন। টিউবলাইট যেমন একটু পরে জ্বলে! নাটক চলছে। কিছু দিন চলবে। আন্দোলন কতটা আন্তরিক, পরে বোঝা যাবে।” অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে শ্যামলবাবু বলেন, “আমরা বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে। সরকার বরং বাসে ভর্তুকি দিক।”
সব মিলিয়ে প্রায় ৪৪০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন সম্মেলনে। শুরুতে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস। পরে তা নিয়ে আলোচনা হয়। জেলা সম্মেলনে সিটু’র রাজ্য নেতা শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। কী ভাবে সেই সব কাটিয়ে উঠে এগোনো যায়, তা নিয়েই সম্মেলনে আলোচনা হবে।” পাশাপাশি, ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র সংগ্রামে ধৈর্য ধরারও আবেদন রেখেছেন জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, আক্রমণ মোকাবিলায় ধৈর্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী দিনে কোন পথে আন্দোলন এগোবে, কী কী বিষয়ে আন্দোলন হবে, সেই সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে এ বারের সম্মেলনে।
|