কালীঘাটে পুজো দিতে যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক মহিলা-সহ বিহারের সাত পুণ্যার্থীর। জখম ৪৫ জন। রবিবার ভোরে হুগলির গুড়াপের গোপালপুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে দু’টি ছোট গাছ
ভেঙে প্রায় ১২ ফুট নীচে নয়ানজুলিতে উল্টে যায় বাসটি।
পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন লক্ষ্মী দেবী (৬৫), রাজেন্দর ঠাকুর (৭০), মহেশ রায় (৬০), পুলিশ শাহ (৩৫), মহেশ পাটিল (৭০), প্রতাপ পাসোয়ান (৬৫) এবং তাঁর ভাই রামপ্রবেশ পাসোয়ান (৪৫)। তাঁরা বিহারের বৈশালী জেলার রানিপোখর চকের বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, চালক নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়াতেই ওই দুর্ঘটনা। একই অনুমান যাত্রীদেরও। তবে, বাসের চালক বা খালাসিকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার ওই বাসে চড়ে রানিপোখর চকের ৫২ জন বাসিন্দা তীর্থে বেরোন। প্রথমে তাঁরা যান দেওঘর। সেখান থেকে শুক্রবার রাতে তারাপীঠে পৌঁছন। শনিবার রাতে তাঁরা কালীঘাট মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হন। রবিবার ভোর ৩টে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। বেশির ভাগ যাত্রীই তখন ঘুমন্ত। |
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস। —নিজস্ব চিত্র |
বাসটি পড়ে যাওয়ার বিকট আওয়াজ এবং যাত্রীদের আর্তনাদে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে। তাঁরা গুড়াপ থানায় খবর দেন। পুলিশ গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় জানালার কাচ ভেঙে বাসযাত্রীদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাত জনের। আহতদের প্রথমে ধনেখালি হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে ২০ জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল এবং এক জনকে কলকাতা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো
হয়। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া যাত্রীদের জন্য প্রশাসনের তরফে স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পের ঘরে বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেশর সাহা নামে আহত এক যাত্রী বলেন, “প্রায় সকলেই ঘুমোচ্ছিলেন। আমি রাস্তার দিকে তাকিয়েছিলাম। বাস খুব জোরে চলছিল। হঠাৎ জোরে ঝাঁকুনি। তার পরেই তিনটে পাক খেয়ে বাস নীচে পড়ল। জল-কাদায় ভরে গেল ভিতরটা।” সহজনারায়ণ সিংহ নামে আর এক যাত্রী বলেন, “কালীঘাটে পুজো দিয়ে কলকাতা ঘুরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু যা হল, তার পরে আর কিছুই ভাল লাগছে না!”
দুর্ঘটনার জেরে সকালের দিকে বেশ কিছুক্ষণ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী লেন বন্ধ থাকে। ক্রেন এনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে তোলে পুলিশ। খবর পেয়ে এ দিনই বর্ধমান মেডিক্যালে পৌঁছন কয়েক জন মৃতের আত্মীয়। ময়না-তদন্তের পরে দ্রুত
দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। পরে বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার নির্দেশে ময়না-তদন্ত শুরু হয়। |