গত কুড়ি বছরের বহু রাজনৈতিক উত্থানপতনের সাক্ষী বাবা খড়্গ সিংহ মার্গ-এর পাঁচ তলার সাংসদ ফ্ল্যাটে আজ শেষ রাতটি কাটালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৯২-র শেষে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ৫ নম্বর অশোক রোডের বাড়ি ছেড়ে এই সি-৪ (রাজধানীর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই ফ্ল্যাট নম্বরটি বহুল পরিচিত হয়ে উঠেছিল)-এ উঠেছিলেন কংগ্রেসের তৎকালীন যুবনেত্রী।
এর পরে বয়ে গিয়েছে যমুনার অনেক জল। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ এখান থেকে মমতা বিদায় নিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পর তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন। ফ্ল্যাটটি তখন দলের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়ের নামে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু গত এক বছরে মমতা যখনই কোনও কাজে দিল্লি এসেছেন, উঠেছেন এখানেই। সেই মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগ করায় এই ফ্ল্যাটটি এ বার ছাড়তেই হচ্ছে।
এই বাড়ির বসার ঘরেই সদ্য গঠিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দর্শনপ্রার্থীদের ভিড়ও লেগেই থেকেছে এখানেই। ইউপিএ-র দ্বিতীয় দফায় মমতার রেলমন্ত্রী হওয়া এবং বিপুল ভাবে লোকসভায় জিতে আসার পর রাজধানীর প্রথম সারির বিলাসবহুল বাংলোয় উঠে যাওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু কখনওই এই সাদামাঠা ফ্ল্যাটটি ছেড়ে যাননি মমতা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে মুকুল রায়ের নামে দু’টি ফ্ল্যাট ছিল। সি-৪ এবং সাউথ অ্যাভিনিউ-এর বাড়ি (আকারে বড় হওয়ার জন্য যেটি তৃণমূলের পার্টি অফিস হিসাবেই ব্যবহার করা হয় এখন)। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর এই ফ্ল্যাটটি এ বার ছাড়তে হবে তাঁকে। নিয়ম অনুযায়ী প্রাক্তন মন্ত্রীকে দু’মাস সময় দেওয়া হয় বাড়ি খালি করার জন্য। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, পুজোর পরই ছেড়ে দেওয়া হবে সি-৪। মমতার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস বাঁধাছাঁদা শুরু হয়ে গিয়েছে। কুড়ি বছরেও খুব বেশি কিছু নেওয়ার থাকছে না তাঁর। বইপত্র, ছবি আর কিছু একান্ত প্রিয় ব্যক্তিগত আসবাবপত্র।
প্রশ্ন হল, এ বার দিল্লিতে এলে থাকবেন কোথায় মুখ্যমন্ত্রী? নিশ্চিত নন তাঁর ব্যক্তিগত সচিব রতন মুখোপাধ্যায়। জানাচ্ছেন, “আপাতত স্থির হয়েছে মুকুল রায়ের সাউথ অ্যাভিনিউ-এর বাড়ির একটি ঘর তিনি ব্যবহার করবেন। কিন্তু বিষয়টি কিছুটা আবেগেরও। সি-৪-এর প্রত্যেকটি ইঞ্চির সঙ্গে তিনি পরিচিত। এত বছর পরে নতুন করে কোথায় তাঁর মন বসবে, তা বলা শক্ত।” গত ২০ বছর রতনবাবুও এই বাড়িতেই সচিবের কাজ করে যাচ্ছেন। স্মৃতি ভারাক্রান্ত তিনিও। আজ মমতা ঘুরে দেখেছেন সার্কুলার রোডে বঙ্গভবনের ধাঁচে তৈরি রাজ্যের নতুন গেস্টহাউসটি। বহুতল এই আবাসনের একটি তল রাখা হয়েছে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। বঙ্গভবনের উপর চাপ কমাতে স্থির হয়েছে, রাজ্যের মন্ত্রী এবং আমলারাও এখানে এসে থাকতে পারবেন। তবে এখানে এসেই যে তিনি ভবিষ্যতে থাকবেন, এমন কোনও ইঙ্গিত মমতা দেননি। |