|
|
|
|
ব্যস্ত পথে গাড়ি থামিয়ে টাকা ‘লুঠ’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
ভরদুপুরে কলকাতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁর ৪৩ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন এক ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, রবিবার ঘটনাটি ঘটে উল্টোডাঙা এলাকার অরবিন্দ সেতুর উপরে। পুলিশ জানায়, বিকেলে দায়ের করা অভিযোগে ওই ব্যবসায়ী জানান, দুষ্কৃতীরা ট্যাক্সি করে এসেছিল। লুঠের পরে সেই ট্যাক্সিতেই উল্টোডাঙা মোড়ের দিকে পালিয়ে যায় তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, চেন্নাইয়ের বাসিন্দা শাহুল হামিদ পুরনো তামা ও পিতল কেনাবেচা করেন। ব্যবসার সূত্রে তাঁর কলকাতায় যাতায়াত। সপ্তাহখানেক আগে শাহুল তাঁর এক আত্মীয় জব্বরকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। ওঠেন এন্টালির একটি হোটেলে। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা নিরঞ্জন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে শাহুলের পরিচয় হয় কলকাতার পঙ্কজ ও বাবুর সঙ্গে। ওই দু’জন জানিয়েছিল, পুরনো তামা-পিতলের কেনাবেচার ব্যবসায় তারাও যুক্ত। ওই দু’জন নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল কাস্টমসের ‘ক্লিয়ারিং এজেন্ট’ হিসেবে।
শাহুল হামিদ |
শাহুল পুলিশকে জানিয়েছেন, বাবু ও পঙ্কজ তাঁকে বলেছিল, বাজারদর থেকে অনেকটা সস্তায় পুরনো তামা ও পিতল কেনার ব্যবস্থা করে দেবে। রবিবার দুপুরে পঙ্কজ তাঁকে ডানলপে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। একটি ভাড়া করা গাড়িতে জব্বর, নিরঞ্জন ও পঙ্কজের সঙ্গে ডানলপ রওনা দেন শাহুল।
পুলিশ জানায়, অভিযোগে শাহুল জানিয়েছেন, গাড়িতে চালকের আসনের পাশে বসেছিলেন তিনি। পিছনের সিটে ছিলেন জব্বর, নিরঞ্জন ও পঙ্কজ। জব্বরের কাছে প্লাস্টিকের ব্যাগ ও ব্রিফকেসে ৪৩ লক্ষ টাকা রাখা ছিল। শাহুলকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বেলা ১২টা নাগাদ অরবিন্দ সেতুর উপরে আচমকা একটি ট্যাক্সি তাঁদের গাড়ির পথ আটকায়। ট্যাক্সি থেকে তিন যুবক নেমে পঙ্কজকে চড়থাপ্পড় মারতে শুরু করে। শাহুলরা ভেবেছিলেন, ট্যাক্সির সওয়ারিরা পুলিশের লোক। বছর পঁয়ত্রিশ-চল্লিশের ওই তিন জন হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে কথা বলছিল। পঙ্কজকে মারধর করতে দেখে ভয় পেয়ে যান শাহুল, জব্বররা। পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন, টাকার ব্যাগ, ব্রিফকেস ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তাই তাঁরা বাধা দিতে সাহস পাননি। পুলিশ জানায়, ওই তিন দুষ্কৃতী পঙ্কজকেও টেনেহিঁচড়ে ট্যাক্সিতে তুলে নেয়। এর পরে ট্যাক্সি নিয়ে তারা উল্টোডাঙার দিকে চলে যায়। শাহুলের দাবি, তাঁরাও গাড়ি নিয়ে ট্যাক্সির পিছনে ধাওয়া করেছিলেন। কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পরে আর ট্যাক্সিটির হদিস মেলেনি। এর পরে বিকেলে তাঁরা মানিকতলা থানায় যান।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। কেন ওই ব্যবসায়ীরা দেরিতে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেন, প্রশ্ন সেটাও। পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।” এখনও সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শাহুল তাঁর অভিযোগে পঙ্কজকেই সন্দেহের শীর্ষে রেখেছেন। কলকাতা পুলিশের ইএসডি ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত ডিসি ভি সলোমন নিশাকুমার বলেন, “শাহুল, জব্বর ও নিরঞ্জনকে জেরা করে বাবু ও পঙ্কজ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গিয়েছে।” পুলিশ জানায়, বাবু ও পঙ্কজ বসিরহাটের বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, দুষ্কৃতীরা সকলেই সম্ভবত পঙ্কজের পরিচিত। দুষ্কৃতীরা যে ট্যাক্সিটিতে এসেছিল, তার নম্বরও পুলিশ শাহুলের কাছ থেকে জানতে পেরেছে। তবে, ভরদুপুরে গাড়িতে আরও তিন জন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কেন দুষ্কৃতীদের বাধা দিলেন না, তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ। শাহুল, জব্বর ও নিরঞ্জনের বক্তব্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|