তে-রাত্তির পরেই আবার অচল হতে চলেছে কাজের শহর। এ বার তার ব্যাপ্তি আরও বড়। আগের দিন ছিল বৃহস্পতিবার। থমকে গিয়েছিল শহরের গতি। আজ সোমবার, মাস এবং সপ্তাহের প্রথম দিনেই ফের থমকে যেতে চলেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র। সৌজন্যে রাজনৈতিক দলগুলির শক্তি প্রদর্শনের মিছিল।
সোমবার ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের ডাক দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। সেই সমাবেশে শুধু সিপিএম জেলা বা রাজ্য নেতৃত্বই নন, থাকবেন অন্য বাম দলগুলির রাজ্য নেতারাও। এ ছাড়া, মিছিলের ডাক দিয়েছে কংগ্রেসও। বিড়লা তারামণ্ডল থেকে তাদের মিছিল যাবে হাজরা মোড় পর্যন্ত। এই দুই রাজনৈতিক কর্মসূচির সাঁড়াশি চাপে দুপুর থেকে শহর জুড়ে যানজট তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ।
|
যদিও মহানগরে মিছিলের দাপট এই প্রথম নয়। বরং নিত্য এই যন্ত্রণায় প্রায়ই নাকাল হতে হয় আমজনতাকে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি দিনই মেট্রো চ্যানেল, ডোরিনা ক্রসিং সংলগ্ন ওয়াই রোড বা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে কোনও না কোনও সংগঠনের মিছিল লেগেই থাকে। ক্ষমতা জাহির করার ‘পীঠস্থান’ হিসেবে সব রাজনৈতিক দলই ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্মব্যস্ত শহরের এই প্রাণকেন্দ্রে। শুধু সমাবেশই নয়, রয়েছে রাস্তা অবরোধের রাজনীতিও। প্রায়ই সমাবেশের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ইচ্ছেমতো রাস্তা আটকে দেন বিভিন্ন দল বা সংগঠনের কর্মীরা।
বাম দলগুলির মিটিং-মিছিলের কথা তো সুবিদিত। ক্ষমতায় থাকার সময়েও প্রায়ই রাস্তা জুড়ে মিছিল করত তারা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, শহর মিছিল-সমাবেশ মুক্ত থাকুক। তবে, তাঁর সেই ইচ্ছে এখনও পূরণ হয়নি।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর একটায় সিপিএমের মূল মিছিলটি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে শুরু হবে। এ জে সি বসু রোড, মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবে মিছিলটি। তবে এর বাইরে প্রচুর কর্মী-সমর্থক গাড়ি, বাস, ম্যাটাডর নিয়ে আসবেন। যানজট এড়াতে গাড়িগুলিকে বাবুঘাট, শহিদ মিনার বা ইস্টবেঙ্গল মাঠে রাখা হবে। পুলিশের আশঙ্কা, সপ্তাহের প্রথম দিনে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকবে। ফলে সমাবেশে আসা সমর্থক ও গাড়ির ভিড় সেই চাপকে বাড়াবে। যানজটে আটকে পড়তে পারে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশ।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, দুপুর দু’টো নাগাদ তাদের মিছিল শুরু হবে বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে থেকে। আশুতোষ মুখার্জি রোড ধরে তা যাবে হাজরা মোড় পর্যন্ত। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে হেঁটে এবং গাড়িতে সমর্থকেরা তারামণ্ডলের সামনে যাবেন। সেই কারণে ভরদুপুরে ওই এলাকার রাস্তাঘাট যানজটের কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা পুলিশের। |
যানজটের পাশে পুলিশকে চিন্তায় রেখেছে পুজোর বাজারের ভিড়ও। পুলিশের বক্তব্য, নিউ মার্কেট ও লিন্ডসে স্ট্রিট এলাকায় নামীদামি দোকানে পুজোর আগে কাজের দিনেও উপচে পড়া ভিড় জমে। সোমবার তার সঙ্গে সমাবেশের ভিড় যুক্ত হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন লালবাজারের কর্তারা।
পুজোর মুখে শহরবাসীর এমন ভোগান্তির আশঙ্কা নিয়ে অবশ্য ভাবিত নয় সিপিএম। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেবের বক্তব্য, “মিছিলের জের রাস্তায় পড়বে। তার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হয়ে, সময় হাতে নিয়ে বেরোনোর আবেদন জানাচ্ছি। বলা আছে, মিছিল চলাকালীন অ্যাম্বুল্যান্স বা জরুরি পরিষবার গাড়ি পার করে দিতে হবে।” প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “এক দিন ভোগান্তি হলে তার জন্য আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। হাজরা মোড়ে সভা চলার সময়ে চেষ্টা করব, রাস্তার একটা দিক অন্তত খোলা রাখতে।”
সেপ্টেম্বরে একাধিক বার মিছিল-সমাবেশের সৌজন্যে যানজটের কবলে পড়েছেন শহরবাসী। প্রায় এক দিন অন্তর অবরুদ্ধ হয়েছে ধর্মতলা চত্বর। অক্টোবরের প্রথম দিনেও সেই ‘ট্র্যাডিশন’ই বজায় থাকল।
|
|
রবিবার দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি |