কম বৃষ্টির জন্য হাসি ফুটেছে হাওড়ার বাগনানের ফুলচাষিদের মুখে। কারণ, দেদার ফুল ফুটছে। পুজোর মুখে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।
হাওড়া জেলার মধ্যে বাগনান-২ ব্লকেই বেশি ফুলচাষ হয়। হেলেদ্বীপ, কাঁটাপুকুর, চরকাঁটাপুকুর, কাজিভুঁয়েরা, বৈদ্যনাথপুর, বীরকুল, খানজাদাপুর, গুণানন্দপুর, দুর্লভপুর প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দাদের মূল জীবিকাই হল ফুলচাষ। কিন্তু ওই সব এলাকা নিচু হওয়ায় বেশির ভাগ বছরই বৃষ্টিতে জল জমে থাকে। ফুল চাষ করে গ্রামবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কেননা, টানা ৫-৬ দিন বৃষ্টি হলে গাছের গোড়া পচে যায়। বেশির ভাগ ফুলগাছের এটাই প্রধান সমস্যা।
কিন্তু এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় সেই সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি ফুলচাষিদের। চাষিদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে নিয়ে গিয়ে যেমন কলকাতার জগন্নাথ ঘাটে বিক্রি করছেন, তেমনই অনেক চাষি নিজেরাই ফুল নিয়ে সেখানে চলে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী এবং চাষি দু’পক্ষের মুখেই হাসি ফুটেছে।
বেল ফুলের কথাই ধরা যাক। জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এই ফুলের মরসুম চলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কম বা মাঝারি বৃষ্টি বেল ফুল ফলনের পক্ষে ভাল। এ বারে সেই কারণে বেল ফুল অনেকটা বেশি ফুল হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। এখনও গাছে রয়েছে বেলফুল। তা চাষিরা নিয়মিত বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন। চাষিদের বক্তব্য, কম বৃষ্টির কারণে ফুলের ফলন বেশ ভাল। স্বাভাবিক মরসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও গাছে ফুল থাকায় তা বিক্রি করে তাঁরা বেশি রোজগার করতে পারছেন।
বৃষ্টি কম হওয়ার ফলে ভাল ফলন হচ্ছে জারবেরারও। এই ফুল উন্নত মানের। মরসুম বছরভর। লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে বাগনানের প্রায় প্রত্যেক চাষি জারবেরার চাষ করছেন। বর্ষার মরসুমে জারবেরার চারা রক্ষা করা চাষিদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এ বার কম বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা নিশ্চিন্ত। |
হেলেদ্বীপের বাসিন্দা নিতাই হাজরা প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। দোপাটি, গাঁদা, জবা অপরাজিত ফুলের সঙ্গে চাষ করেছেন জারবেরাও। তিনি বলেন, “বেশি বৃষ্টি হলে জারবেরা বাঁচাতে পারতাম না। ফলন ভালই হবে বলে মনে হচ্ছে।” তিনি আরও বললেন, “কম বৃষ্টির জন্য গাঁদা, দোপাটি, অপরাজিতা এই সব ফুলেরও ফলনও ভাল হবে বলে আশা করছি। মনে হয় পুজোর বাজার ভালই হবে।” একই বক্তব্য ভুড়গেড়িয়া গ্রামের ললিত মান্নাও।
‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বললেন, “বেশির ভাগ ফুল গাছের গোড়া নরম প্রকৃতির। টানা বৃষ্টি হলে গাছের গোড়া পচে যায়। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফুল চাষের জন্য প্রয়োজন অল্প জল। এ বারে কম বৃষ্টি হওয়াতেই ফলন ভাল হয়েছে।” ওই সংগঠনেরই জেলা সম্পাদক তথা কাঁটাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত ধাড়া বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে বহু ফুলচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে এ বারে ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে।”
তবে, বেলফুল, গাঁদা, দোপাটি চাষিদের মুখে হাসি ফোটালেও জবা, গোলাপের পিছনে বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে চাষিদের। কেননা, জবা বা গোলাপের গাছের গোড়া অপেক্ষাকৃত শক্ত হওয়ায় চাষে বেশি জল লাগে বলে জানালেন চাষিরা। ললিতবাবু এবং নিতাইবাবু জবা-গোলাপের চাষও করেছেন। তাঁরা বললেন, “গোলাপ এবং জবার জন্য পুকুর এবং খাল থেকে জল তুলে গাছের গোড়ায় দিতে হচ্ছে।”
তবে, সব মিলিয়ে সহায়ক আবহাওয়া থাকায় এ বার যে সামগ্রিক ভাবে ফুল চাষ ভাল হয়েছে সে কথা স্বীকার করেছেন চাষিরা। |