আশঙ্কা কাটাতে আগে জানতে হবে এফডিআইয়ের শর্ত
বেশ কয়েক বছর আগে যেমন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লক্ষ্যে সই হয়েছিল ‘গ্যাট চুক্তি’। এখন তেমনই গুরুত্ব পাচ্ছে ‘এফডিআই’। রাজনীতি, অর্থনীতি, শেয়ার বাজার সব ক্ষেত্রেই বড় রকমের চাঞ্চল্য এনেছে কেন্দ্রের নতুন ‘এফডিআই’ নীতি। প্রতিবাদে হয়ে গিয়েছে একটি ভারত বন্ধও। শরিক বদলেছে কেন্দ্রীয় সরকারের। ট্রাম-বাস-মেট্রো ছাড়িয়ে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ ঢুকে পড়েছে মধ্যবিত্তের হেঁসেলেও। সাধারণ মানুষ জানতে চাইছে, ব্যাপারটা কী? ভাল না মন্দ, তা নিয়ে মানুষের মনে অনেক দ্বন্দ্ব। অর্থাৎ ব্যাপারটি একটু নেড়েচেড়ে দেখাই যেতে পারে।
পুরো কথা ‘ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট’। সংক্ষেপে ‘এফডিআই’। নতুন কিছু নয়। বেশ কিছু শিল্পে সরাসরি বিদেশি লগ্নি অনেক দিন থেকেই আছে। এমনকী, এক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় এর অনুমোদন আগেও ছিল। এ বার বিদেশিদের জন্য খুলে দেওয়া হল বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসার দ্বারও। এতেই যত বিপত্তি। এর প্রভাবে কী কী খারাপ হতে পারে তাই নিয়ে যখন বিরোধীরা গলা ফাটাচ্ছে, তখন সরকারের তরফে দেখা হচ্ছে এর সম্ভাব্য সুফলের তালিকা। ফলে ধন্দে সাধারণ মানুষ। যে ফল এ দেশে আগে ফলেনি, তা টক না মিষ্টি, তা হলফ করে কেউই বলতে পারছেন না।
বিদেশিরা দুটি পথে লগ্নি করতে পারেন ভারতীয় সংস্থায়। প্রথমটি হল, শেয়ার বাজার থেকে পছন্দের শেয়ার কেনা। প্রচলিত নাম পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদেশিদের নামে শেয়ার ইস্যু করে না। ইস্যু করা শেয়ার বিদেশিরা কিনতে পারেন বাজার থেকে, অর্থাৎ পরোক্ষ ভাবে। দ্বিতীয়টি হল এফডিআই, যাতে শেয়ার ইস্যু হয় বিদেশিদের নামে। তা মোট শেয়ার মূলধনের ৫০% ছাড়ালে কর্তৃত্ব চলে যায় বিদেশি হাতে। বহু-ব্র্যান্ডে ৫১% বিদেশি লগ্নির ক্ষেত্রে অনেকেরই আশঙ্কা, চাষি-সহ ছোট উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা মার খাবেন। ওয়ালমার্টের মতো দৈত্যাকৃতি বিদেশি সংস্থা গিলে খাবে অসংখ্য ছোট-মাঝারি দেশি সংস্থাকে।
হায়দরাবাদে সদ্য চালু হওয়া ভারতী-ওয়ালমার্ট বিপণি। ছবি: এএফপি
তবে এতটা আশঙ্কার কারণ আছে কি না, তা জানতে আগে দেখে নিতে হবে কী কী শর্তে এই বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলি হল:
(১) ফল, সবজি, ফুল, শস্য, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি ব্র্যান্ড-নাম ছাড়াই বিক্রি করা যাবে।
(২) খুচরো ব্যবসায় ন্যূনতম এফডিআই হতে হবে ১০ কোটি ডলার অর্থাৎ কমবেশি ৫৩০ কোটি টাকা।
(৩) বিদেশি লগ্নির অন্ততপক্ষে ৫০% খরচ করতে হবে প্রাক-বিপণন পরিকাঠামো (ব্যাক এন্ড) তৈরিতে। এর মধ্যে থাকবে সব মূলধনী খরচ যেমন, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বণ্টন, পণ্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধি, প্যাকেজিং, তা গুদামজাত করা ইত্যাদি খাতে লগ্নি।
(৪) পণ্যের কমপক্ষে ৩০% সংগ্রহ করতে হবে ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা থেকে।
(৫) উপরের শর্তগুলি পালিত হচ্ছে কি না, তার খতিয়ান নিতে হবে এবং হিসাবপত্র অডিট করাতে হবে।
(৬) শুধু সেই সব শহরেই খুচরো বিপণন কেন্দ্র খোলা যাবে, যেখানে জনসংখ্যা ১০ লক্ষের বেশি।
(৭) কৃষিজাত পণ্য সংগ্রহের প্রথম অধিকার থাকবে সরকারের।
(৮) এই নীতি সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে মানতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
শর্তগুলি জানা হয়ে গেলে আশঙ্কা অনেকটাই দূর হতে পারে। পণ্য সংগ্রহের ব্যাপারটি অবশ্য পরিষ্কার নয়। বিদেশি সংস্থাগুলি সরাসরি কৃষক এবং ক্ষুদ্রশিল্প থেকে পণ্য কিনলে তা তাদের পক্ষে ভাল হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেকের মতে, এতে চাষিরা ভাল দাম পাবেন এবং বিক্রির ব্যাপারে নিশ্চয়তা বাড়বে। তৈরি হবে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা। ফলে অধিক ফলন হলে জলের দরে বিকোতে হবে না। পরিকাঠামো, পরিবহণ এবং বিপণনে কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের। অন্য দিকে আশঙ্কা, এতে মার খাবেন ছোট দোকানদাররা। দরিদ্রদের পক্ষেও সম্ভব হবে না ওয়ালমার্ট থেকে সওদা করা। অর্থাৎ ভালমন্দ যুক্তি দুই-ই আছে।
দূরদৃষ্টির অভাবে এক সময়ে কম্পিউটার আটকে এই রাজ্যকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গ্যাট চুক্তি নিয়েও বাসমতী চাল ও নিমপাতার পেটেন্ট বিদেশে চলে যাবে বলে ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। অনেকেই এখন বলছেন, খুচরোয় এফডিআই চালু হলে ভারতের আলু হয়তো ব্রাজিলে বিকোবে, আমরা পাব নিম্নমানের পণ্য। মনে রাখতে হবে, বিদেশি খুচরো সংস্থাকে ভারতের আমদানি-রফতানি নীতি মেনে চলতে হবে। ব্যবসা আসলে একতরফা হয় না। বিশ্ব মন্দার বাজারে ভারতের মতো বড় বাজারের উপর নজর অনেক দেশেরই আছে। খুচরোয় এফডিআই এলে দেখতে হবে, তা থেকে যেন ভাল ফায়দা ভারত তুলতে পারে। খুচরোয় এফডিআই অনুমোদিত হওয়ায় বেজায় খুশি শেয়ার বাজার। বাজার চায় ব্যবসার উপর ন্যূনতম সরকারি নিয়ন্ত্রণ, যাতে প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। বাজার এখন তেজী, বেড়েছে বিদেশি লগ্নি, পড়েছে ডলার ও সোনার দাম। সংস্কারের আপাত সুফলে লগ্নিকারীরা আনন্দিত। মাঝারি মেয়াদে সেনসেক্সের নজর এখন ২০ হাজারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.