|
|
|
|
দেখা হয় বেসরকারি ক্যুরিয়র সংস্থায় |
পার্সেলে কী যাচ্ছে, পরোয়াই করে না ডাক বিভাগ |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছিলেন সঞ্জীব রঞ্জন। তিনি পূর্বাঞ্চলের পোস্টাল সার্ভিসের ডিরেক্টর।
২০০১ সালে তখন চিঠি-বোমার দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। ছোট খাম। তার ভিতরে পাউডার। খাম খুললেই দুম্! হইচই চার দিকে। টনক নড়ল সরকারের। সঞ্জীব রঞ্জনের কথায়, “তখন আমি লখনউয়ের চিফ পোস্ট মাস্টার। এক ধরনের মেশিন আনা হল। যেখানে এক গোছা চিঠি গুঁজে দিলে মেশিন বলে দেবে সেখানে কোনও ধাতু রয়েছে কি না।” যে কোনও ধরনের বোমার ক্ষেত্রেই ধাতু থাকাটা বাধ্যতামূলক।
সেই যন্ত্র বসানো হল দেশের অন্য সমস্ত জিপিও-তেও। সতর্ক হতে শুরু করল দুষ্কৃতীর দল। ধীরে ধীরে কমে এল চিঠি-বোমার দাপট। এখন সেই যন্ত্র পড়ে রয়েছে আর পাঁচটা যন্ত্রের মতোই। আর তাতে চিঠি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না।
তবে নতুন একটি ঘটনায় বুধবারেই হাওড়ায় পার্সেল-বোমা কেড়ে নিয়েছে প্রাণ। পার্সেলটি সরকারি না বেসরকারি ক্যুরিয়র-এর মাধ্যমে এসেছিল, তা রাত পর্যন্ত পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে এটা নিশ্চিত যে পার্সেলটি ক্যুরিয়র-এর মারফতই এসেছিল ওই বাড়িতে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি যে কেউ পার্সেলের ভিতরে বিস্ফোরক ভরে পাঠিয়ে দিতে পারে যে কারও বাড়িতে?
সঞ্জীববাবু জানালেন, সরকারি ডাক ব্যবস্থায় পার্সেল পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এক্স-রে হয় না। এক্স-রে হলে ধাতব অংশ দেখা যাবে মনিটরে। অবাক হয়ে এক পোস্ট মাস্টার বলেন, “পোস্ট-অফিসে এক্স-রে! পার্সেলের ভিতরে কী রয়েছে, তা দেখার বা জানার অধিকার নেই আমাদের। এক বার তা ‘বুক’ করে দিলেই পৌঁছে যাবে প্রাপকের কাছে। সেখানে বোমা রয়েছে না কি হাতি, তা আমরা কী করে বলব?” সঞ্জীববাবুর কথায়, “একমাত্র বিমানে পার্সেল পাঠালে তা স্বাভাবিক নিয়মে বিমানবন্দরে এক্স-রে করা হয়। তা ছাড়া, ট্রেনে বা স্থানীয় ভাবে পার্সেল পাঠালে তা পরীক্ষা হয় না।”
তবে বেসরকারি ক্যুরিয়র সংস্থাগুলির তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে যে, তারা এ ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক।
বিমানবন্দরে ডাক বিভাগের যে বিশাল অফিস রয়েছে, প্রতিটি পার্সেল সেখানে পাঠানো হয়। চিঠি বাছাই করতে সেখানে নতুন যন্ত্র বসেছে। সেখান থেকে সমস্ত চিঠি, পার্সেল গন্তব্যে পৌঁছন হয়। দফতরের আধিকারিকদের মতে, সেখানেও যদি এক্স-রের সুবিধা থাকে, তা হলেও কাজ হয়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যে পার্সেল বা চিঠি বিমানে পাঠানো হয়, তার প্রত্যেকটিই এক্স-রে মেশিনে পরীক্ষা হয়। বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগে এক্স-রে মেশিন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা এক্স-রে করে দেখে নেয় কী রয়েছে। বিস্ফোরক বা ধাতু থাকলে তা ধরা পড়ার কথা। কিন্তু, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত এক অফিসারের কথায়, “কেউ পার্সেলে বোমা পাঠালে কি বিমানে পাঠানোর ঝুঁকি নেবে?”
অন্য দিকে, বেসরকারি ক্যুরিয়র সংস্থা ডিএইচএল-এর ম্যানেজার রুদ্র চৌধুরী বলেন, “পার্সেল পাঠাতে চাইলে আমরা তা খুলে দেখব। সে অর্থে সিল করা কোনও পার্সেল নেবই না। কোনও সন্দেহ হলে তা বাতিল করা হবে।” যেখানে সংস্থার সমস্ত পার্সেল গিয়ে জড়ো হয়, সেখানে আবার পরীক্ষা হয়। এক্স-রে মেশিনও রয়েছে।
ডাক বিভাগের কর্তা সঞ্জীব রঞ্জন বলেন, “এই পার্সেল বোমার কথা দিল্লিতে পোস্টাল ডিরেক্টরেটকে লেখা হবে। জানতে চাওয়া হবে, ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয়? প্রতিটি পোস্ট অফিসে এক্স-রে মেশিন বসবে কি না, সেটা তো মন্ত্রকের নীতিগত সিদ্ধান্ত।” |
|
|
|
|
|
|