ক্যুরিয়ারের প্যাকেট খুলতেই নিমেষে প্রলয়
এ বার হাওড়া, পার্সেল-বোমায় হত মহিলা
মা ফোন করেছিলেন দুপুর ১টা ৩৬ মিনিটে। মেয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তুই কোথায়?
মেয়ে জানিয়েছিলেন, কলেজ থেকে ফিরছেন। রবীন্দ্রসদনের কাছে আছেন। মা বলেছিলেন, সাবধানে এসো।
আধ ঘণ্টাটেক বাদে মেয়ের ফোনে আবার ডাক। এ বার পড়শি এক মহিলা। আতঙ্কিত গলায় যিনি মেয়েকে বললেন, তাঁদের বাড়িতে সাংঘাতিক বোমা ফেটেছে, আগুন জ্বলছে! উদ্ভ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে মেয়ে শুনলেন, ক্যুরিয়ার সার্ভিসে আসা একটা পার্সেল খুলতেই বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে প্রাণ গিয়েছে মায়ের। বাবা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে!
দেড় বছর আগে মালদহের ইংরেজবাজারে পার্সেল-বোমায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছিল। বুধবার ফের একই দৃশ্য দেখল হাওড়ার দক্ষিণ বাকসাড়া। এতে মৃত্যু হয়েছে চৈতালি সাঁতরা (৪০) নামে এক মহিলার। তাঁর স্বামী হিমাংশু সাঁতরা গুরুতর আহত। ঘটনার আকস্মিকতায় ভাষা হারিয়েছে ওঁদের মেয়ে শতাব্দী, যে কলেজ থেকে ফিরে জানতে পারে, মা আর নেই।
চৈতালি সাঁতরা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ জানিয়েছেন, ক্যুরিয়ার সার্ভিস মারফত পার্সেলে পাঠানো উচ্চক্ষমতার বোমা বিস্ফোরণেই চৈতালিদেবীর মৃত্যু হয়েছে। “খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিটি পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি-ও তদন্তে নেমেছে। ফরেন্সিক ডাকা হয়েছে।” বলেন ডিসি। যদিও খুনের উদ্দেশ্য (মোটিভ) সম্পর্কে গোয়েন্দারা এখনও অন্ধকারে।
পুলিশ জানায়, সাঁতরা দম্পতির দোতলা বাড়ির একতলার শোয়ার ঘরে এ দিন বিস্ফোরণ ঘটে বেলা ঠিক ২টো ৬ মিনিটে। ঘর থেকে আগুন ও কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, ঘরের সব জানলা ভেঙে ছিটকে গিয়ে পাশের বাড়িতে পড়ে। আগুন ধরে যায় আসবাবে। শব্দ পেয়ে প্রথমেই ছুটে এসেছিলেন বাড়ির পরিচারিকা মধুমিতা মান্না। তাঁর কথায়, “ছাদে কাপড় মেলতে উঠেছিলাম। আগে দেখে গেলাম, একটা ছেলে এসে বৌদিকে প্যাকেটে করে কিছু দিয়ে গেল। ওটা নিয়ে বৌদি শোয়ার ঘরে ঢুকল। দাদাও ওখানে ছিল।”
মধুমিতা জানান, কিছুক্ষণ পরে ভয়ঙ্কর শব্দে গোটা বাড়ি কেঁপে ওঠে। ওই ঘর থেকে আগুন বেরোতে থাকে। পাড়া-পড়শি ছুটে এলে তিনি সাহস করে একতলায় নেমে আসেন। “তখনও ঘর থেকে আগুন আর গলগলিয়ে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দাদার গোঙানির আওয়াজ শুনছি। ঢুকে দেখি, দু’জনেই পড়ে। রক্তে গা ভেসে যাচ্ছে!”
পাড়ার লোক হিমাংশুবাবুকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। যাওয়ার পথে তিনি জানান যে, পার্সেল খুলতেই বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে চৈতালিদেবীর ক্ষত-বিক্ষত দগ্ধ দেহটি উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশেরও অনুমান, ওই ঘরে বসে চৈতালিদেবী পার্সেলটি খোলামাত্র বিস্ফোরণ হয়।
পার্সেল-বোমা বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। বুধবার হাওড়ায়।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৪৭/২ নম্বর সাউথ বাকসাড়া ফার্স্ট বাইলেনের বাড়িটার সামনে মানুষের ভিড়। একতলায় কাঠের দরজার পাল্লা ভেঙে হাট হয়ে ঝুলছে, দু’টো শোওয়ার ঘরেরই জানলা খানখান। দোতলার জানলার কাচ, এমনকী পাশের বাড়ির রান্নাঘরের জানলার কাচও চূর্ণ-বিচূর্ণ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা সাঁতরা দম্পতির শোয়ার ঘরের। বিছানার চাদর থেকে জানলার পর্দা— সব পুড়ে খাক! দেওয়াল ঘড়ি থমকে আছে ২টো ৬ মিনিটে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ঘরের যাবতীয় জিনিস এক দিকে উড়ে গিয়ে দক্ষিণের দেওয়ালে আটকে রয়েছে। খাটের পাশের জানলা উপড়ে গিয়ে পড়েছে পাশের বাড়িতে।
হিমাংশুবাবুর খুড়তুতো ভাই দ্বিগ্বিজয় সাঁতরা জানান, দশ বছর হল তাঁর দাদা দক্ষিণ বাকসাড়ায় বাড়ি কিনে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন। আগে থাকতেন শিবপুরে। পুলিশ-সূত্রের খবর: হিমাংশুবাবুর ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা রয়েছে। আর চৈতালীদেবী ছিলেন দিল্লির এক হিন্দি কাগজের বিশেষ সংবাদদদাতা, পাশাপাশি একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী। তাঁদের মেয়েও সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন।
আশুতোষ কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী সেই শতাব্দীকে প্রতিবেশীরা নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিলেন পাশের বাড়িতে। শতাব্দী বলেন, “ইদানীং মাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। মা আমাদের বলেছিলেন, কিছু লোক তাঁকে মারার চেষ্টা করছে।”
তারা কারা, কেনই বা তারা ওই চেষ্টা করছিল, সে সম্পর্কে অবশ্য শতাব্দী কিছু জানাননি।
—নিজস্ব চিত্র

এই সংক্রান্ত আরও খবর
পার্সেলে কী যাচ্ছে, পরোয়াই করে না ডাক বিভাগ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.