শিল্পোদ্যোগীদের সুবিধার জন্য এক-জানলা ব্যবস্থা আছে। এ বার কৃষকদের স্বার্থে কৃষি ক্ষেত্রেও এক-জানলা নীতি চালু করা উচিত বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের কাছে এই প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেছেন, এমন ব্যবস্থা করা গেলে চাষ-আবাদ সংক্রান্ত উপাদান জোগাড়ের জন্য চাষিদের আর বিভিন্ন দফতরে দৌড়তে হবে না।
কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় স্তরে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি তৈরিরও প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারের কাছে তাঁর প্রস্তাব, ছ’মাস অন্তর ওই কমিটির বৈঠক হওয়া জরুরি। পওয়ার বলেন, “খুবই ভাল প্রস্তাব। আমি এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ‘সবুজ বিপ্লব’ শীর্ষক কমিটির প্রথম বৈঠক বসে বুধবার। কলকাতার টাউন হলের ওই বৈঠকে পওয়ার বলেন, “দেশের মধ্যেই খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেচের জলের কোনও অভাব নেই। রয়েছে কৃষিপ্রযুক্তির জোগানও। চাষিদের সহায়তা করছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়ানোই এখন প্রধান লক্ষ্য।” কথায় কথায় খাদ্যশস্য আমদানি আসলে দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকেই দুর্বল করছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী। |
সবুজ বিপ্লব কমিটি গড়া হয়েছে সাত মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে। কিন্তু এ দিনের বৈঠকে মমতা ছাড়া আর কোনও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন সেখানকার কৃষিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা। পওয়ারের উপস্থিতিতে মমতা সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলেন। বৈঠকে বলেন, “সারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা মার খাচ্ছেন।” সারের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মমতা। কৃষিপণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও সংরক্ষণে আরও বেশি অর্থসাহায্যের দাবি জানান তিনি। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, “মমতার দল আলাদা। তাঁর দলের নীতি আলাদা। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে নানা ধরনের উন্নয়ন
প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্রীয় সরকার আগের মতোই সাহায্য করবে পশ্চিমবঙ্গকে।”
এ দিনের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, অসম, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশ যোগ দিয়েছিল। বৈঠকের পরে পওয়ার বলেন, “এই সাতটি রাজ্যে ধান ও গমের উৎপাদন ইতিমধ্যেই রেকর্ড করেছে। কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।” কী ভাবে সেটা সম্ভব, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তা-ও ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, এই সব রাজ্যে ভাল বৃষ্টি হয়। প্রচুর খালবিল ও নদী রয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেচের কাজে আরও বেশি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ-সব কারণেই এই সাত রাজ্যকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় এনেছে কেন্দ্র।
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল-গম সংগ্রহের উপরেও জোর দেন পওয়ার। তিনি বলেন, “সহায়ক মূল্য দিয়ে চাল-গম সংগ্রহের জন্য সাতটি রাজ্যের জেলায় জেলায় শিবির খোলা হবে।” পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ টেনে পওয়ার জানান, এই রাজ্যে ১৯ লক্ষ টন চাল সংগৃহীত হয়েছে। কিন্তু তা সন্তোষজনক নয়। আরও সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, মমতা তাঁকে জানিয়েছেন, চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্য দাম পান, সেই জন্য কৃষি বিপণন সংক্রান্ত পরিকাঠামো বৃদ্ধির বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ফুল, ফল, সব্জি চাষ ও বিপণনকেও সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনার জন্য পওয়ারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মমতা। পওয়ার বলেন, “সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে কেন্দ্র।” |