গুজরাত নির্বাচনের আগে বিজেপি-র শেষ জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। কিন্তু রাজ্য রাজনীতি নিয়ে আটকে না থেকে জাতীয় বিভিন্ন প্রসঙ্গে সরব হয়ে প্রথম দিনেই মধ্যমণি সেই নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকেই জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-র কাণ্ডারী করা হোক, দলের মধ্যে থেকেও আজ সেই দাবি উঠল।
মুম্বই অধিবেশনে সঞ্জয় জোশীকে কেন্দ্র করে জলঘোলা হয়েছিল অনেক। শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় জোশীর বিদায় সুনিশ্চিত করেই মোদীকে অধিবেশনে আনতে পেরেছিলেন নিতিন গডকড়ী। আজ কিন্তু প্রথম দিনেই হাজির মোদী। এবং এসেই আলোচনার কেন্দ্রে! নীতীশ কুমার যতই মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করুন, বিহারেরই বিজেপি সাংসদ হুকুমদেওনারায়ণ যাদব বৈঠকে বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে আরও প্রাধান্য দেওয়া হোক মোদীকে। বক্তব্য স্পষ্ট, মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হোক লোকসভা ভোটে। সুর মেলান আরও ক’জন নেতা।
দলের সব শীর্ষ নেতার সামনে মোদী আজ প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর নেতৃত্বে গুজরাত নির্বাচনে দল এ বার আরও ভাল ফল করবে। কিন্তু গুজরাত জয় নয়, মোদীর পাখির চোখ যে আসলে দিল্লিই এবং তার জন্যই যে নিজেকে তিনি ধীরে ধীরে তুলে ধরছেন, আজ ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিজেই। গুজরাতের মতো অ-কংগ্রেসি রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে মোদী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারাও এই বিষয়ে সরব হন।” সভাস্থলে তখন লালকৃষ্ণ আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলির মতো নেতারা। |
নিজ রাজ্যের প্রসঙ্গে বলতে গিয়েও বারবারই দিল্লিকেই নিশানা করেছেন মোদী। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি হ্রাস প্রসঙ্গে জানান, গুজরাতে এই মুহূর্তে ৭ লক্ষ মানুষকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ২০ লক্ষ লোককে এই সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পরিকাঠামোও তৈরি। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্র এ কাজে অন্তরায় হয়ে উঠেছে। অথচ এই ব্যবস্থা চালু হলে গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবতেই হত না।” এ ছাড়া কংগ্রেস যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইকে ‘অপব্যবহার’ করছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “মনে হচ্ছে গুজরাতে কংগ্রেস লড়ছেই না। রাজ্যে বিরোধী পক্ষ আসলে সিবিআই।”
পরিষদের বৈঠক আগামিকাল সংবাদমাধ্যমের জন্য খুলে দেওয়া হবে। নিশ্চিত ভাবেই সেখানেও মোদী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হবেন। গুজরাত নির্বাচনের পরে মোদীকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী সঙ্ঘ নেতৃত্বও। সেই সময় মোদী কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আরও শক্তিশালীও হবেন। মুম্বইয়ের অভিজ্ঞতার পর তড়িঘড়ি দিল্লির উপকণ্ঠে গডকড়ী যে ভাবে জাতীয় পরিষদের বৈঠক ডেকে সভাপতির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে নিতে চাইলেন, তার পিছনেও অনেকের অভিমত, মোদীর গুরুত্ব বাড়ার আগেই গডকড়ী এই কাজটি সেরে ফেলতে চাইলেন। আজও নিজের প্রারম্ভিক বক্তৃতায় মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন গডকড়ী। তিনি বলেন, “যে ভাবে গুজরাতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআই সক্রিয় হয়েছে, তাতে কংগ্রেসের উচিত নিজেদের দফতরেই সিবিআইয়ের একটি শাখা খুলে নেওয়া।” |