লক্ষ্য দু’টি। এক, লোকসভা ভোটে দলকে সাফল্যের মুখ দেখাতে শীর্ষ নেতাদের একজোট করা। দুই, দলে নিজের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে তাঁদের কাছে টানা। যাতে সভাপতি পদে নিজের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি মসৃণ করে তোলা যায়। বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠককে আজ পুরোপুরি সেই কাজেই লাগালেন নিতিন গডকড়ী।
অন্যান্য বৈঠকে নিজের মত প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হন বিজেপি সভাপতি। আজ কিন্তু কেন্দ্র ও কংগ্রেসের সমালোচনায় মুরলীমনোহর জোশী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের মন্তব্যগুলিই উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। গডকড়ী বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তাঁদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই তিনি বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অতি-সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যেটুকু বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে সেটাকেও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালালেন গডকড়ী। |
আগামী দু’দিন দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠক। সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। বৈঠকের উপরে নজরদারি করার জন্য স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত দিল্লিতে বসে রয়েছেন। কিন্তু দলের মধ্যে গডকড়ীর উত্থানের যাঁরা বিরোধিতা করে আসছেন, তাঁদের মন জয় করারই চেষ্টা করলেন বিজেপি সভাপতি। আডবাণী-সুষমারা মনে করেন, সভাপতির মেয়াদ বাড়াতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা যেতেই পারে। তবে এটা জরুরি নয় যে গডকড়ীকেই দু’বারের জন্য সভাপতি করতে হবে। সঙ্ঘ নেতৃত্বকেও এই নেতারা তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে এসেছেন। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গডকড়ীর বিবাদও সুবিদিত। মুম্বইয়ে গত জাতীয় কর্মসমিতির অধিবেশনে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাশ হওয়ার সময় আডবাণী উপস্থিত ছিলেন না। গডকড়ীর বিরুদ্ধে দলের শীর্ষ নেতাদের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখেই মোহন ভাগবত তাঁকে সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এখন ১৫ দিন অন্তর কোর গ্রুপের বৈঠক ডেকে দল সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সকলের মত নেন গডকড়ী।
আজকের বৈঠকে তো তিনি সেই সব নেতার কথা বেছে বেছে উল্লেখ করলেন, যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করছেন। মনমোহন সিংহকে আক্রমণ করতে মুরলীমনোহরকে উদ্ধৃত করে বললেন, “প্রধানমন্ত্রী অর্থশাস্ত্রী নন, অনর্থশাস্ত্রী।” অসুস্থতার কারণে সুষমা এ দিনের বৈঠকে আসেননি। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসের ঘরে ‘মোটা মাল’ গিয়েছে। আজ তারই পুনরাবৃত্তি করেন গডকড়ী, জানতে চান, প্রতি টন কয়লায় কংগ্রেসের খাজানায় কত গিয়েছে। তেমনই পাকিস্তানের হিন্দু শরণার্থী ও অসমের দাঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি উদ্ধৃত করেন আডবাণীকে। বিজেপি যে সংস্কার-বিরোধী নয়, তা বোঝানোর জন্য সংসদের অর্থ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান যশবন্ত সিন্হার কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, “১১টি বিল যশবন্ত সিন্হা কমিটিতে অনুমোদন করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার তা এখনও পাশ করেনি।” নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস যে ভাবে সিবিআইকে ব্যবহার করছে, তার বিরুদ্ধেও সরব হন গডকড়ী।
এ ভাবে বিরোধীদের মন জয়ের চেষ্টা চালালেও গডকড়ী জানেন, দলকে ক্ষমতায় বসানোর যে গুরুদায়িত্ব সঙ্ঘ তাঁকে দিয়েছে, নেতৃত্বের কোন্দল সে পথে বড় বাধা। ইয়েদুরাপ্পা, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া বৈঠকে আসেননি। এই দিকটি মাথায় রেখে গডকড়ী বলেন, “ভোটের জন্য তৈরি থাকতে হবে। বড় লক্ষ্যের জন্য সকলের হৃদয়ও বড় হতে হবে। কংগ্রেসের তৈরি দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে বিজেপি-র কাছে মানুষের একটা প্রত্যাশা রয়েছে। তা পূরণ করতে হবে।” |