বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে তাঁরা দেশ জুড়ে বন্ধ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু এই নিয়েই এখন দল ও জোটের মধ্যেই প্রবল চাপের মধ্যে পড়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। ভুবনচন্দ্র খান্ডুরি থেকে অরুণ শৌরি, একাধিক বিজেপি নেতা দলের এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছেন। চাপ তৈরি করেছে শরিক দল অকালিও। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে মুখে কুলুপ এঁটেছেন খোদ দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীও। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে সব কর্মসূচি নিয়েছে দল (ভারত বন্ধ থেকে শুরু করে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ), সবই কি বিরোধিতার নামে বিরোধিতা?
বরাবরই সংস্কারের পথে হেঁটে আসা বিজেপি কেন হঠাৎ বামেদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করছে, সেটাই এখন দিল্লির বড় প্রশ্ন। বামেদের সঙ্গে মিলে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দিবস বা ভারত বন্ধের পরে দল তথা জোটের মধ্যে এই নিয়ে সংশয় বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষোভও। আর তার মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ী নিজেও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতায় তেমন সরব হননি। বরং এ দিনের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “আমরা সংস্কারের বিরোধী নই। সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এগোলে আমরা ইতিবাচক ভূমিকা নিতেই পারতাম।” রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, দলীয় সভাপতির এ হেন কথা থেকেই স্পষ্ট, দল বিষয়টি নিয়ে কতটা ধন্দে রয়েছে। |
বস্তুত, বিজেপি যে বামেদের মতো সংস্কার বা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধী নয়, সেটা আজ দিনভর দলের একাধিক মুখপাত্র বোঝানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন। তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যে দুর্নীতি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই এই সময় বিদেশি লগ্নি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দল তার বিরোধী। সেই সূত্র ধরেই দলের নেতৃত্বের একাংশ আবার এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এলে তাঁরা ইউপিএ সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবেন।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলছে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা আর সম্ভব নয়। বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা এ দিন জানান, ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে গেলে বিজেপি-কে মামলার মুখে পড়তে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি তাঁর বার্তা, ভারত যে হেতু আন্তর্জাতিক ভাবে বাণিজ্য ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ, তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরে চিন্তার কিছু নেই। বিজেপি-কে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি বাণিজ্য মন্ত্রী। বলেছেন, ওরাই তো খুচরোয় বিদেশি লগ্নির কথা প্রথম বলেছিল। এখন বিরোধিতা করছে কেন?
দিল্লির উপকণ্ঠে হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, সত্যিই কি ক্ষমতায় এলে এফডিআই নিয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে বিজেপি? দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “ক্ষমতায় এলে দলীয় নীতি মেনে সিদ্ধান্ত হবে।”
তবে গডকড়ী ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, “পরের লোকসভায় রাজনীতির চালচিত্র কী দাঁড়ায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই সময় আমাদের কোন শরিক সঙ্গে আসে, তাদের মতামত কী হয়, তা-ও জানা নেই। ফলে এখন থেকে সব পথ বন্ধ রেখে লাভ কী? এখনই তো আমাদের শরিক অকালি বলছে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সুরক্ষিত করলে তাদের এই সিদ্ধান্ত মানতে আপত্তি নেই। ভুবনচন্দ্র খান্ডুরি থেকে অরুণ শৌরি, এমনকী কর্নাটকের কিছু নেতাও আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রকাশ্য বিরোধিতা করছেন।”
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের কৌশল, আপাতত খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করা হবে। পরের বিষয় পরে ভাবা হবে। দিনভর এই নিয়ে জলঘোলার পর প্রকাশ জাভড়েকরকে দিয়ে বলানো হয়, “আগামিকাল জাতীয় পরিষদের বৈঠকের শুরুতেই নিতিন গডকড়ী খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করবেন। গৃহীত প্রস্তাবেও তার উল্লেখ থাকবে।” এই কৌশল ব্যাখ্যা করে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, এখনই এমন বিরোধিতা করা হবে, যাতে কংগ্রেসই এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। বিজেপি যদি পরে ক্ষমতায় আসে, তখন যেন দলকে এই সিদ্ধান্ত ঘাড়ে নিতে না হয়। জাভড়েকর বলেন, “আমরা নিশ্চিত, বিরোধীদের সম্মিলিত চাপে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে।” কিন্তু তা যদি না হয়, তা হলে? এর জবাব দিতে চাননি বিজেপি নেতারা। |