|
|
|
|
নিশানা দিল্লি, সুর চড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী |
জয়ন্ত ঘোষাল • কলকাতা |
মহাকরণে রাজ্যপাট। নজরে দিল্লি।
অক্টোবরের প্রথম দিন দিল্লির যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদ সভায় যোগ দেওয়ার আগে বুধবার কেন্দ্র-বিরোধী সুর আরও চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দিলেন তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা। যাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে দিল্লি দরবার।
মমতার মতে, আপাদমস্তক দুর্নীতিতে মোড়া ইউপিএ সরকার দ্রুত অবক্ষয়ের পথে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, “টাকার জোর আর গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে কংগ্রেস। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাদের পরাজয় নিশ্চিত।” মমতার এই ধারণার শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহও। কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে তাঁর কটাক্ষ, “যে দেওয়াল ভেঙে পড়তে চলেছে, তার তলায় কেউ দাঁড়ায়!”
সুতরাং বিকল্পের ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন মমতা। বিজেপির সঙ্গে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কারণেই। তাই আঞ্চলিক দলগুলির জোটের উপরেই ভরসা করছেন তিনি। এ দিন মমতা স্পষ্টই বলেছেন, “আঞ্চলিক দলগুলির জোট হলে আমি যোগ দিতে রাজি। সমমনোভাবাপন্ন দলকে সমর্থনেও আপত্তি নেই।” |
|
ছবি: রাজীব বসু। |
বুধবার কলকাতায় সবুজ বিপ্লব সংক্রান্ত আলোচনাচক্রকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক দলের দুই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে কথা বলতে মুখিয়ে ছিলেন মমতা। কিন্তু মমতা-নীতীশ-নবীন ত্র্যহস্পর্শ ঠেকাতে তৎপর ছিল কেন্দ্রও। তাই কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারকে সাফ বলে দেওয়া হয়, আলোচনা কৃষিমন্ত্রী স্তরেই সীমাবদ্ধ রাখতে। ফলে কলকাতা আসতে পারেননি নীতীশ-নবীন। (বস্তুত, আর এক শরিক শরদের উপরেও বিশেষ ভরসা করছে না কংগ্রেস। ফলে চার মাথা এক হওয়া ঠেকাতে উঠেপড়ে লাগে তারা)
মমতা অবশ্য তাতে দমছেন না। দিল্লি যাওয়ার আগেই দেখা করবেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে সুসম্পর্কের সেতুবন্ধনে উদ্যোগী হয়েছেন। এমনকী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যে মুলায়ম কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত পাশে দাঁড়াননি, তাঁর সম্পর্কেও কোনও কটু কথা বলতে নারাজ মমতা। উল্টে বলছেন, মুলায়মের ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’ তিনি বোঝেন। (শরদও এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেও মমতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগের মতোই।”)
দিল্লিকে পাখির চোখ করে ঘর গোছানোর কাজটা মমতা এখন থেকেই শুরু করে দিতে চান তার কারণ, তাঁর ধারণা আগামী বছরেই লোকসভা ভোট সেরে ফেলবে কংগ্রেস। এ দিন তিনি বলেছেন, “২০১৩ সালে কংগ্রেস জনমোহিনী বাজেট পেশ করে ভোটে চলে যাবে। কিন্তু মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করবে।”
এই ধারণা থেকেই তাঁর লড়াইটা তড়িঘড়ি দিল্লি নিয়ে যেতে চাইছেন মমতা। ১ অক্টোবর যন্তর-মন্তরে দলের ডাকা ধর্না আন্দোলনের মঞ্চে হাজির থাকবেন। বক্তৃতা দেবেন। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনেই ধর্না দেবেন না বা আইন অমান্য করবেন না।
এখন প্রশ্ন হল, রাজ্য জয়ের পরে এ বার কি দিল্লির মসনদ দখল করতে চাইছেন মমতা? তিনি নিজে অবশ্য এ দিন বলেছেন,“আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। তবে পরবর্তী নেতা কে হবেন, সেটা ঠিক করতে নিশ্চয়ই সাহায্য করব।” তৃণমূল সূত্র অবশ্য বলছে, আঞ্চলিক দলগুলির জোট ক্ষমতায় এলে যে কেউই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। মুলায়ম যদি ওই পদের দাবিদার হন, তা হলে মমতা নন কেন!
এ হেন পরিস্থিতিতে কংগ্রেস কী করবে? তাদের একটা অংশ মমতাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও অন্য একটি অংশ মনে করছে, তাঁর বিরোধিতায় দু’পক্ষেরই লাভ হবে। কংগ্রেস সংস্কার সেরে ফেলতে পারবে। আবার মমতাও তাঁর বিদ্রোহী ভাবমূর্তি বজায় রেখে পঞ্চায়েত ভোট বৈতরণী পার হয়ে যেতে পারবেন। তার পর লোকসভা ভোটের সময় আবার দুই দলের কাছাকাছি আসা সম্ভব বলে কংগ্রেসের ওই অংশের মত।
সেটা অবশ্য পরের কথা। মনমোহন সিংহের সরকারের আশু চিন্তা অন্য। তৃণমূলের সমর্থন ছাড়া রাজ্যসভায় বিল পাশ করানো কঠিন। ঠিক সেই কারণেই এর আগে লোকপাল বিল শিকেয় তুলে রাখতে হয়েছে। ফলে মমতার রাশ টানতে চাপের রাজনীতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে তারা। যার প্রথম ধাপ, গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট কলকাতা থেকে আগরা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাজ্যের দাবিদাওয়া আদায়ের কাজটাও এর পর অনেক কঠিন হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। যদিও কংগ্রেস মুখে বলছে, সমর্থন প্রত্যাহারের সঙ্গে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের মনোভাবের কোনও সম্পর্ক নেই।
কংগ্রেসের এই কৌশল মমতার অজানা নয়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, গত দেড় বছর কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে রাজ্যের জন্য কী পেয়েছি! সব জেনেও আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় কেন্দ্র বিন্দুমাত্র সাহায্য করেনি। এখন বিরোধিতা করেই দেখা যাক না। নবীন পট্টনায়ক, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা তো কংগ্রেস বিরোধী হয়েই রাজ্য চালান।
দিল্লিকে নজরে রেখে বাজি ধরেছেন মমতা। জিতবেন কিনা সময় বলবে।
|
মুখর মমতা |
• টাকার জোর আর গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে কংগ্রেস।
• এটা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, দুর্নীতিগ্রস্তদের সরকার, দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য সরকার।
• মনমোহন সিংহের সঙ্গে মাটির কোনও যোগাযোগ নেই।
• ২০১৩ সালে জনমোহিনী বাজেট করে ভোটে যাবে কংগ্রেস। কিন্তু মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করবে।
• আঞ্চলিক দলগুলির জোট হলে যোগ দিতে রাজি। সমমনোভাবাপন্ন দলকে সমর্থনেও রাজি। •আমি প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না। কিন্তু পরবর্তী নেতা কে হবেন, সেটা ঠিক করতে নিশ্চয়ই সাহায্য করব। |
|
|
|
|
|
|