ফ্রি-স্টাইলটা কিন্তু শিখতে হবেই
দানীং ‘স্টাইলিং’ শব্দটি নতুন করে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে। প্রতিটি ‘সেলেব’-এর ছবির পাশে স্টাইলিং শব্দটি লেখা। সঙ্গে থাকে যিনি এটি করেছেন, তাঁর নাম। হঠাৎ শব্দটি ভুঁই ফুঁড়ে এল কোথা থেকে?
আমাদের প্রত্যেকের চেহারা এবং শারীরিক গঠন ভিন্ন। রোগা, খুব রোগা, মোটা বা মোটার দিকে, লম্বা, অথবা বেঁটে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নিজের প্রকৃত চেহারা আসলে কী, তা না জেনেই পুরুষরা ইচ্ছেমত শার্ট-প্যান্ট এবং মহিলারা শাড়ি-ব্লাউজ পরে ফেলেন। ঠিক কোন ধরনের জামাকাপড় নিজের জন্য মানানসই হবে, আমরা তা এক বারও ভাবি না। চেক্স, স্ট্রাইপ, না এক রঙের শার্ট পরা উচিত এই সব প্রশ্নকে এক বারও গুরুত্ব দিই না। যে পুরুষরা মোটার দিকে এবং যাঁদের গলা ছোট, তাঁরা যদি চাইনিজ কলার শার্ট পরেন, খুবই কদর্য লাগবে। বেঁটেরা চেক্স পরলেও ভাল লাগবে না। ফ্যাশন ডিজাইনার বা কস্টিউম ডিজাইনার অনেক দামি পোশাক আপনার জন্য তৈরি করে দেবেন। কিন্তু আপনি সেই পোশাকটির উপযুক্ত কি না, পোশাকটি পরলে আপনাকে মানাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ‘স্টাইলিং এক্সপাটর্’।
মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হয়তো, পাড়ার এক বউদিকে দেখতাম সারা জীবন এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ পরে অফিস যেতেন, আর সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। আমারও শখ হল এয়ারহোস্টেস ব্লাউজ পরার। কিন্তু আমাকে মানাল না। গলা যদি ছোট এবং একটু ভারিক্কি হয়, তবে এয়ারহোস্টেস বা ছোট গলার ব্লাউজ একেবারেই মানায় না। চওড়া কাঁধের মহিলারা খানিকটা খোলা গলার ব্লাউজ পরলে ভাল দেখাবে। উচ্চতা কম এবং চেহারা মোটার দিকে হলে কখনই লং-স্লিভস্ ব্লাউজ পরবেন না।
দোকানের শো-রুমে খুব সুন্দর শার্ট বা শাড়ি দেখে অনেক সময়ই লোভ সামলানো যায় না। কিনে ফেলি। তখন ভাবি না যে আদৌ সেই পোশাকে আমাকে মানাবে কি না? উচ্চতা কমের দিকে হলে জংলা প্রিন্টের শার্ট বা সাদা-কালো শার্ট-প্যান্ট একদমই পরা উচিত নয়। সাদা-কালো এই রং দু’টি আপনার শরীরকে সম্পূর্ণ দু’টি ভাগে বিভক্ত করে দেবে। এই বিভাজনের জন্য উচ্চতা আরও কম দেখাবে।
শাড়ির ক্ষেত্রে বলা যায়, ধরুন, আপনি একটি লাল বর্ডার সাদা কাঞ্জিভরম শাড়িকে একটি বেস কালার ব্লাউজের সঙ্গে পরলেন। সঙ্গে হাল্কা বিডস-এর গয়না। এ রকম সাজে সকালে স্কুলের বা অফিসের কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে পারেন। আবার একই শাড়ির সঙ্গে যদি লাল ব্রোকেড ব্লাউজ, সোনার গয়না, কপালে বড় টিপ, চোখে ঘন কাজল, চুলে ফুলের মালা পরেন তবে সেটি হবে সান্ধ্য কোনও অনুষ্ঠানের সাজ। শাড়িটি কিন্তু আপনার একই থাকল। একেই বলে স্টাইলিং। যাঁরা বেঁটে, তাঁরা চওড়া পাড় শাড়ি পরবেন না। গোলাকৃতি মুখ হলে লম্বা ঝোলা দুল আর লম্বা গলা মেয়েরা পাশা দুল এই ধারণাগুলো বহু পুরনো। এই সম্পূর্ণ বিষয়টি স্টাইলিং।
আজকে স্টাইলিং শব্দটি নিয়ে তোলপাড় চলছে। নায়কনায়িকাদের এখন নিজস্ব স্টাইলিং আর্টিস্ট থাকেন। কিন্তু সত্যিই কি বাঙালিরা স্টাইল জানত না? এটি সর্বৈব ভুল।
ব্যতিক্রম চিরদিনই আছে। কিছু লোকজন চিরকালই সাহসী এবং অন্য ধরনের সাজগোজ করে এসেছেন। বাকি পাঁচ জনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে নজর কেড়েছেন। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে যখন ঠাকুরবাড়ির জ্ঞানদানন্দিনী দেবী শাড়ি পরার স্টাইল পাল্টে ফেললেন, কুঁচি দিয়ে শাড়ি পরার চল শুরু করেলেন, শুধু বাঙালি নয়, প্রতিটি ভারতীয় মহিলা এই স্টাইলটিকে গ্রহণ করলেন। আজও আমরা এই ভাবে শাড়ি পরি। একেই বলে স্টাইলিং। শাড়িটি একই থাকল, শুধু পরার পদ্ধতিটি বদলে গেল। কিন্তু প্রশ্ন জাগে হঠাৎ আজকে কেন স্টাইলিং আর্টিস্টের প্রয়োজন হল? এখন ব্যস্ত জীবনে ভাবনাচিন্তার অবকাশ কম। তাই এক জনের হাতে দায়িত্ব দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হতে চাই। পোশাক, অ্যাকসেসরি, মেক-আপ, এই সম্পূর্ণ সাজটির মধ্যে যে ভাবে একটি সামঞ্জস্য আনা হয়, সেটিকে বলে স্টাইলিং।
পুজোয় মালকোঁচা ধুতির সঙ্গে হাফ হাতা শার্ট বা এক রঙের টি-শার্ট পরুন, সঙ্গে বুট জুতো। আপনার স্টাইলিং দ্য বেস্ট হবে।

সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা

হিন্দি সিনেমার দৌলতে ‘স্টাইলিং’ শব্দটা বাংলার ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে। বাংলা সিনেমাতেও এখন স্টাইলিং-এর বিশাল প্রভাব প্রতিপত্তি। আমি কী পরব, কোন পোশাকটি আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই হবে, অথচ দু’টি বিষয়ে কোনও বিরোধও থাকবে না, এই সব জটিল চিন্তা-ভাবনা করার সময় এখন ব্যস্তবাগীশ বাঙালিদের হাতে নেই। সেই কারণে এই দায়িত্বভার বহন করছেন এখন স্টাইলিং আর্টিস্টরা। এখন যিনি কনের মেক-আপ, সাজপোশাক ঠিক করছেন, তিনিই পরিবারের সকল সদস্য অর্থাৎ মা-কাকিমার পোশাক, শাড়ি, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং বা কনট্রাস্ট ব্লাউজ-এর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। চিরদিনই বাঙালিদের একটি বলিষ্ঠ মতামত আছে। এই মতটিকে বজায় রেখে পোশাক নির্বাচন করছেন স্টাইলিং আর্টিস্টরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.