|
|
|
|
|
ভুত জোলোকিয়া’র আত্মীয়স্বজন |
রান্নায় দিলেই স্বাদের আগুন। স্বাস্থ্য বাঁচায়, ব্যথাও কমায়। ঝাল বলে ভয়?
লাল সবুজ বা কাঁচা-পাকা বাদ গেলে জীবনটাই ফিকে।মসালা ম্যাজিক-এ এ বার লঙ্কাকাণ্ড। |
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে যখন সূর্য অস্ত যেত না, সাহেবরা তখনও একটা জিনিসকে যমের মতো ভয় পেতেন। লঙ্কা। অথচ তাঁরাই লঙ্কাকে গ্লোব-ট্রটার বানিয়েছিলেন। মুখে দিলে জ্বলে যায়, বাপ রে কী সৃষ্টি, এই ফলটির আদিভূমি, যত দূর জানা গেছে, দক্ষিণ আমেরিকা। অন্তত দশ হাজার বছর আগেই তার ব্যবহার ছিল সেখানে। তার পর পনেরো শতক কলম্বাস ও সহশিল্পীবৃন্দ। পর্তুগিজ বণিকরাই লঙ্কা নিয়ে গেলেন নানা দেশে। গোয়া সহ দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের উপকূলে কেন রান্নাবান্নায় লঙ্কার এমন দাপট, বুঝতে কোনও অসুবিধে নেই। ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া বাদ দিয়ে বাকি দুনিয়াতেই লঙ্কার প্রতিপত্তি, তবে এশিয়ার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল হল তার হেডকোয়ার্টার্স। |
|
বলে রাখি, খুব ঝাল লঙ্কাও সকলের ঝাল লাগে না। যেমন পাখির। ওরা তাই দিব্যি লঙ্কা খেয়ে ফেলে, সেই লঙ্কার বীজ ওদের মলের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র। অনেক মানুষ আছেন, পাখির কাছাকাছি, আপনি যখন নাকের জলে চোখের জলে, তিনি আপনার পাশে বসে দিব্যি তারিয়ে তারিয়ে ওই একই পদটি খাচ্ছেন আর বলছেন, ‘তেমন ঝাল হয়নি তো কই!’ আবার, সব লঙ্কা নয় সমান। ওলসেদ্ধয় একটা আস্ত কাঁচালঙ্কা চেপেচুপে মুখে তুলে কত বার দেখেছেন, এ হে হে, ঝাল বলে কিছুই নেই! তবে ‘ভুত জোলোকিয়া’র সঙ্গে কোনও চান্স নিতে যাবেন না। নাগাল্যান্ড, অসম এবং আরও কয়েকটি জায়গায় জন্মায়। কিছু দিন আগে পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লঙ্কা বলে স্বীকৃত ছিল। এখন তর্ক উঠেছে। তা উঠুক, আপনি দূরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। বেশি ঝাল লাগলে বরং এই ভেবে শান্তি পান যে, লঙ্কাতেও চিনি আছে। সত্যিই, প্রতি একশো গ্রাম লঙ্কায় থাকে প্রায় পাঁচ গ্রাম শর্করা। মেলাবেন তিনি, মেলাবেন।
যাঁরা ঝাল খান না, তাঁরা বলেন, লঙ্কা খেলে শরীর খারাপ হয়। লঙ্কা খুব বেশি খাওয়া নিশ্চয়ই ঠিক নয়, বিশেষ করে শুকনো লঙ্কা, তবে সে তো কোনও জিনিসই বেশি খাওয়া ভাল না। কিন্তু, নানা রকম মশলার মতোই, লঙ্কা কেবল স্বাদ বাড়ায় না, পুষ্টিও দেয়। কী আছে লঙ্কায়? আছে ভিটামিন ‘এ’, বি-সিক্স, ‘সি’, আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের দৃষ্টিশক্তি, মজবুত দাঁত ও শক্ত হাড়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ভিটামিন ‘সি’ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যে কোনও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। আছে অল্প প্রোটিন, বেশ কিছুটা কার্বোহাইড্রেট। আর এনার্জি? হ্যাঁ, তা-ও। ভুল করে লঙ্কা চিবিয়ে ফেললে যে রকম আ-আলজিভ ঝনঝন করে ওঠে, সে রকম এনার্জির কথা বলছি না, লঙ্কা থেকে সত্যিই অনেকটা ক্যালরি সংগ্রহ করে নিতে পারেন। এনার্জি ড্রিঙ্ক-এর থেকে কোনও অংশে কম উপকারী নয় এ জিনিস। যাঁরা ডায়েট করছেন, তাঁরা কিন্তু একটু সাবধান। বেশি খেলে ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে।
ওষুধ হিসেবেও লঙ্কার গুণ কম নয়। ব্যথার ওষুধে, বিশেষ করে নানা ধরনের বাত এবং নার্ভের ব্যথা কমানোর ওষুধে লঙ্কা ব্যবহার করা হায়। এ ছাড়া আছে লঙ্কার অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি-ডায়াবিটিক গুণও। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিসের বিভিন্ন ওষুধে লঙ্কা মিশ্রিত থাকে। হজমের সহায়ক এনজাইমগুলোয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে লঙ্কা ব্যবহার করা হয়। ভিটামিন ‘বি-কমপ্লেক্স’ সিরাপে নির্দিষ্ট পরিমাণ লঙ্কা মিশ্রিত থাকে। ত্বকে কোলাজেনে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে লঙ্কা খুবই উপকারী।
বিজ্ঞানের সীমানা পার হলেই বিশ্বাসের দুনিয়া। দক্ষিণ ভারতের মানুষ ভাবেন, বেশি ঝাল খেলে বুদ্ধি বাড়ে। বাঙালির যেমন মাছের মুড়ো। |
|
|
|
|
|