|
|
|
|
আনন্দবাজারের খবরের জের |
ডেঙ্গির কিট এল হাসপাতালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
অবশেষে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষার সরঞ্জাম সরবরাহ করল। বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষার ১০০টি কিট সরবরাহ করা হয়। ‘কিট’ সরবরাহ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীদের ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষার কাজ শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মহকুমা হাসপাতাল থেকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কিট সরবরাহ না করায় রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত বহু রোগীকে বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার থেকে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বহু রোগী টাকার অভাবে বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে যথেষ্ট ব্যয়বহুল ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছিলেন। এই বিষয়ে একটি খবর গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালের সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “আমরা গত কয়েক বছর ধরে একাধিকবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের কাছে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষার কিট সরবরাহ করার দাবি জানালেও কোনও লাভ হয়নি। আনন্দবাজার পত্রিকায় ওই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলে বুধবার ১০০টি কিট সরবরাহ করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষার কাজ চালু হয়ে গিয়েছে। আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষ ও সমস্ত কর্মীকে হাসপাতালের তরফে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাসে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পর তাঁদের অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে গড়ে ৪ জন করে রোগী জ্বর নিয়ে ভর্তি হন। গত দেড় মাসে ডেঙ্গির লক্ষ্মণ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন প্রায় ৭০ জন। তাই রোগীদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার থেকে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর অবশ্য দেখা যায় কারও শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েনি। অরবিন্দবাবু জানান, বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করতে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা লাগে। বহু দুঃস্থ রোগী টাকার অভাবে ওই পরীক্ষা করাতে সমস্যায় পড়ছিলেন বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ মিলছিল। জ্বরে আক্রান্ত হলেই যে কারোর শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলবে তা বলা যায় না। সাধারণত তিনদিন পরেও যদি জ্বর না-কমে ও ওই রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, রক্তক্ষরণ এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। তা হলে ওই রোগীর ডেঙ্গি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ধরনের রোগীকেই এখন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে সরকারি উদ্যোগে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেবেন। হাসপাতালে ল্যাবরেটরি মেডিক্যাল টেকনলোজিস্ট হিরন্ময় দত্তচৌধুরী বলেন, “হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে ৫০ রকমেরও বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কিটের অভাবে এতদিন ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা চালু করা যায়নি। আনন্দবাজারের খবরের জেরেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর আমাদের কিট সরবরাহ করল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কালিয়াগঞ্জ ও রায়গঞ্জের বাসিন্দা এক মহিলা ও এক শিশু সহ তিনজনের এদিন প্রথম হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। রায়গঞ্জের ডোডরা এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর মাহাতাব দেবশর্মা বলেন, “আমার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে গত দুদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসক এদিন ছেলের ডেঙ্গি রোগ নির্ণয়ের রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। হাসপাতালে সরকারি উদ্যোগে ওই পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে সমস্যা হতো। টাকার অভাবে বাইরের বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ওই পরীক্ষা করানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।” হিরণ্ময়বাবু বলেন, তিনজনের মধ্যে কারও শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে! |
|
|
|
|
|