|
|
|
|
আজ ‘বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স দিবস’ |
|
ঝুঁকি বেশি, তবু গবেষণায়
উপেক্ষিতই মহিলা-মস্তিষ্ক সোমঋতা ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা মনে থাকছে না, কথা বলতে বলতে মাঝেমধ্যেই খেই হারিয়ে যাচ্ছে, চশমাটা কোথায় আছে মনে পড়ছে না কিছুতেই উপসর্গগুলো খুব চেনা। আর এই উপসর্গের মূলে যে রোগ, সেই অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার নামও এখন মোটামুটি সবাই জানে। কিন্তু জানেন কি, আপনি যদি মহিলা হন, এই ভুলো-মনের রোগগুলো আরও জাঁকিয়ে বসতে পারে আপনার মধ্যে?
অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন-দিন উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিকারের উপায় এখনও সে ভাবে মেলেনি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ যাবৎ অ্যালঝাইমার্স নিয়ে যা কিছু গবেষণা হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই হয়েছে পুরুষদের ক্ষেত্রে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, মহিলাদের অ্যালঝাইমার্স হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কাজেই গবেষণায় ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ‘এন্ডোক্রিনোলজি’ জার্নালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-বায়োলজির অধ্যাপক ল্যারি ক্যাহিল লিখেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক সংক্রান্ত যে কোনও গবেষণায় লিঙ্গ তারতম্যের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। কারণ, লিঙ্গভেদে গবেষণার ফলাফল বদলে যেতে পারে পুরোটাই। ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনের নিউরোএন্ডোক্রিন ফার্মাকোলজির অধ্যাপক গ্লেন্ডা গিলিস জানাচ্ছেন, বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত যে মহিলাদের মস্তিষ্কের গঠন পুরুষদের থেকে আলাদা। যে কারণে মহিলারা মানসিক অবসাদগ্রস্ত হন বেশি, আবার কোনও দুর্ঘটনায় মস্তিষ্ক বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাঁদের ক্ষেত্রে কম। লিঙ্গভেদে অ্যালঝাইমার্সের প্রবণতা বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত বিজ্ঞানীদের। কারণ, মহিলারা বেশি দিন বাঁচেন। স্বাভাবিক ভাবেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের থেকে বেশি।
ক্যাহিল জানাচ্ছেন, মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা ‘ড্যামেজ্ড প্রোটিন’ই অ্যালঝাইমার্সের কারণ, তা আগেই প্রমাণিত। লিঙ্গভেদে এই ‘ড্যামেজ্ড প্রোটিন’-এর অবস্থান পৃথক। কিন্তু এই অবস্থানগত পার্থক্যের কারণ ও ফলাফল নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়, শিকাগোর রাশ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, মস্তিষ্কে তুলনায় কম পরিমাণ ‘ড্যামেজ্ড প্রোটিন’-এর অস্তিত্বও মহিলাদের ক্ষেত্রে গুরুতর উপসর্গ ডেকে আনে। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হলে মহিলাদের অবস্থার অবনতিও হয় দ্রুত। আবার, মায়ের অ্যালঝাইমার্স থাকলে সন্তানের মধ্যে তা আসার আশঙ্কা বেশি। অন্য দিকে বাবার ওই রোগ থাকলে সে আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে কম।
কিন্তু এ দেশের পরিসংখ্যানও কি একই কথা বলছে?
মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় সমাজদারের কথায়, “পুরুষদের তুলনায় বেশি সংখ্যক মহিলা অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হন। তবে সব মহিলারা অসুবিধা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তাই তথ্যে কিছুটা ফাঁক থেকে যায়। এ দেশে যেহেতু রক্তচাপ বা ডায়াবিটিস-জনিত সমস্যা বেশি, তাই অ্যালঝাইমার্সের তুলনায় রক্তের শিরা সংক্রান্ত ডিমেনশিয়ার কেস বেশি আসে।” অ্যালঝাইমার্স সোসাইটি (কলকাতা শাখা)-র তরফে নীলাঞ্জনা মৌলিকও জানাচ্ছেন, যেহেতু অ্যালঝাইমার্স মূলত বার্ধক্যজনিত রোগ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বেশি সংখ্যক মহিলার এই রোগ হয়। কারণ মহিলারা বেশি দিন বাঁচেন।
তবে অ্যালঝাইমার্স নিয়ে গবেষণায় লিঙ্গ তারতম্যের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে কেন? ইলিনয় এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের পরীক্ষা সাধারণত ইঁদুরদের উপরে হয়। ইঁদুরদের অ্যালঝাইমার্স না হওয়ায় এই পরীক্ষার জন্য তাদের জিনগত পরিবর্তন ঘটাতে হয়। মহিলা ইঁদুররা বেশি উত্তেজিত হয়। জিনের পরিবর্তনের ফলে তাদের সামলানো কঠিন হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইঁদুরের জন্য আলাদা খাঁচার প্রয়োজন। সেটি ব্যয়সাপেক্ষ। তাই যাবতীয় নিরীক্ষা পুরুষ ইঁদুরদের নিয়েই হয়।
তা হলে উপায়? নতুন কিছু গবেষণায় বিজ্ঞানীদের অনুমান, ইস্ট্রোজেন বা থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যও অ্যালঝাইমার্সের কারণ হতে পারে। মিনেসোটার মায়ো ক্লিনিকের নিউরোলজিস্ট ওয়ালটার রকার মতে, মহিলাদের মেনোপজ হওয়ার আগে কোনও কারণে হিস্টেরেকটমি করে ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া হলেও অ্যালঝাইমার্সের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। তখন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হতে পারে প্রতিকারের পথ। তবুও ক্যানসার বা হৃদ্রোগের মতো কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়। কাজেই অ্যালঝাইমার্সের প্রতিকার নিয়ে গবেষণায় এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি, বলছেন চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা। |
|
|
|
|
|