পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসার বিনিয়োগ, সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়বে এই দাবিতেই ডাকা হয়েছিল ১২ ঘন্টার বনধ। দিনের শেষে কিন্তু সমস্যায় পড়লেন সেই সাধারণ বাসিন্দরাই। বৃহস্পতিবার সরকারি বাস, বিমান, রেল চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও রাস্তায় নেমে সমস্যায় পড়লেন পর্যটক থেকে বাসিন্দারা। গাড়ি, অটো, রিকশা রাস্তা কম ছিলই, তার সঙ্গে যোগ হয় বাড়তি ভাড়ার দাপট। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একে তো বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছাতে নাকাল হতে হয়েছে। তার উপরে সর্বত্র অটো, রিকশা, গাড়ির চালকেরা বেশি টাকা দাবি করেছেন। প্রতিবার বনধে একই জিনিস দেখা গেলেও কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া না, বোঝা যায় না। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে প্রিপেইড ট্যাক্সি বুথ এদিন খোলা ছিল। ট্রেন চলাচল করেও কয়েকটি ট্রেনের দেরিতে যাতায়াত করেছে। তবে বাইরের স্ট্যান্ডের গাড়ির সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় বিভিন্ন ট্রেনে আসা যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। রিকশা এবং অটোও কম ছিল। যাত্রীরা জানিয়েছেন, রিকশা, অটো এবং গাড়িভাড়া একাংশ চালক ইচ্ছামত নিয়েছেন। শিলিগুড়ি শহরের জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছেন চালকেরা। অনেকে সন্ধ্যা ৬টার বনধ শেষ হওয়ার অপেক্ষা করে স্টেশনেই বসে ছিলেন। বিকাল ৪টার পর থেকে অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। এনজেপি-র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, “এনজেপিতে ট্রেন চলাচলে কোনও সমস্যা হয়নি। কোনও ট্রেনকে দাঁড় করিয়েও রাখতে হয়নি।” |
বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার নির্ধারিত ৬টি বিমানই ওঠানামা করেছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এরমধ্যে একমাত্র কলকাতা থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পড়ে আসে। প্রিপেইড ট্যাক্সি বুথ খোলা ছিল। তবে বিমানবন্দরের বাইরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে অন্য দিনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল। তবে আগাম বনধের ঘোষণা থাকায় পর্যটক এবং একাংশ বিমানযাত্রী নিজেদের গাড়ির ব্যবস্থা করেন। যাত্রীরা জানিয়েছেন, গাড়ি কম থাকায় ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের চালকের নির্ধারিত ভাড়ার তুলনায় বেশি ভাড়া চেয়েছেন। গাড়ি কম থাকায় কয়েকজন যাত্রীকে বিকালের পরেও বিমানবন্দরে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। এনবিএসটিসি-র কর্তৃপক্ষ একটি অতিরিক্ত বাস চালানোয় কিছু যাত্রী তাতে শিলিগুড়ি পৌঁছান। বিমানবন্দর রুটে এনবিএসটিসি অন্যান্যদিন একটি বাস চালায়। যাত্রী ভোগান্তি কমাতে এনবিএসটিসি’র শিলিগুড়ি কর্তৃপক্ষ এদিন ৭টি অতিরিক্ত বাস চালিয়েছেন। খড়িবাড়ি, চটেরহাট, মেডিক্যাল, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বাগডোগরা, এনজেপি রুটে ওই অতিরিক্ত বাস চালানো হয়েছে। প্রতিটি বাসই নিত্যযাত্রী, সরকারি কর্মীদের ভিড় উপচে পড়ে। বাসিন্দারাদের বক্তব্য, লোকাল রুটে বা সিটিতে আরও কয়েকটি বাস চালালে বাসিন্দাদের সুবিধা হত। সংস্থার শিলিগুড়ি ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তম গণ বলেন, “শিলিগুড়ি ডিপো থেকে প্রতিদিন ৬০টি বাস চলাচল করে। এদিন মহকুমার বিভিন্ন রুট-সহ ৭টি অতিরিক্ত বাস চালানো হয়েছে।” একই ছবি দেখা গিয়েছে আলিপুরদুয়ারেও। ডিমাপুরের বাসিন্দা অ্যালং ওউ জয়গাঁ যাওয়ার জন্য নর্থইস্ট এক্ষপ্রেসে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে স্ত্রীকে নিয়ে নামেন। নিউ আলিপুরদুয়ারে থেকে জয়গাঁ যেতে ছোট গাড়ির ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা হলেও প্রায় ২০০০ টাকা দাবি করেন গাড়ি চালকরা। অ্যালং জানান, গাড়ির চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া চেয়েছেন। বিকালে দিকে বনধ শিথিল হলে আশা করি ভাড়া কমবে। তখন যাব। তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে নামেন বীরপাড়ার বাসিন্দা প্রদীপ দাস। তিনি বলেন, “৩০-৩৫ টাকায় যাতায়াত করি। এদিন বনধের সুযোগ নিয়ে রিকশা চালকেরা ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করেছে।” ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোয়িশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “বিমান, ট্রেন বা বাসের সমস্যা ছিল না। গাড়ি কম ছিল ঠিকই। তবে এনজেপি, বিমানবন্দরে প্রিপেইড বুথ খোলা ছিল। বেশি গাড়ি ভাড়ার নেওয়ার অভিযোগও পেয়েছি।” |