বাস ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য মালিকদের চাপ দিতে ‘পারমিট বাতিলের’ হুমকি দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সেই হুমকিতে এ বার ‘আইনি’ সিলমোহর দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, যখন-তখন বাস-ট্যাক্সি ধর্মঘট রুখতে রাজ্য সরকার একটি আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। ওই আইনের জোরে ধর্মঘটে সামিল বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সির পারমিট বাতিল করা হবে। বাস-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানো নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী করেননি।
এ দিকে বুধবার মহাকরণে বৈঠকের পরে বেসরকারি বাস-মালিকেরা দাবি করেছিলেন, সরকারের তরফে ভাড়াবৃদ্ধির আশ্বাস পেয়েই তাঁরা ‘অনির্দিষ্ট কালের’ ধর্মঘট স্থগিত রাখছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের কথায় তেমন কিছু ইঙ্গিত না-থাকায় তাঁরা হতাশ। এক বাস-মালিক বলেন, “আমরা ধর্মঘটের রাস্তায় গেলাম কেন, তা মুখ্যমন্ত্রী খতিয়ে দেখলেন না! শুধু কড়া ব্যবস্থার হুমকি দিয়ে গেলেন!” প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার ভাড়া বাড়াবে, এই আশায় ট্যাক্সি সংগঠনগুলোও এ দিন শুরু করা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট তুলে নিয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, ট্যাক্সি ধর্মঘটের হুমকির কাছেও সরকার মাথা নোয়াবে না। |
ট্রাফিক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। বৃহস্পতিবার রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
বস্তুত পরিবহণে ‘যথেচ্ছ’ ধর্মঘট সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনের কঠোর মনোভাবই পরিস্ফূট হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে। মহাকরণে এ দিন তিনি বলেন, “আজ পরিবহণমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পরিবহণ একটি অত্যাবশ্যক শিল্প। এতে যখন-তখন ধর্মঘট ডাকা যায় না। আমরা এ সব বন্ধ করতে সমান্তরাল একটা আইন আনতে চলেছি, যাতে ধর্মঘট করলে পারমিট কেড়ে নেওয়ার কথা বলা থাকবে।” মমতার হুঁশিয়ারি, “জনগণের রাস্তা দখল করে যাত্রী না-নিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে দিলাম! শক্ত হাতে এর মোকাবিলা করব। নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে গাড়ি নামাব। পরিষেবা না-দিলে, জনগণের কাজে বাধা সৃষ্টি করলে পারমিট বাতিল হবে।”
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরিবহণ-মালিকদের ভাড়াবৃদ্ধির দাবি যে যুক্তিসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী তা স্বীকার করছেন। কিন্তু এ-ও বলছেন, “আমরাও কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে আন্দোলনে নেমেছি! সাত দিন অন্তর বছরে তিরিশ দিন পরিবহণ ধর্মঘট হবে! এর পাল্টা জবাব তো সরকারকে দিতেই হবে!”
বাস-মালিকদের কী প্রতিক্রিয়া?
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ সভাপতি দীপক সরকারের আক্ষেপ, “মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করার ক্ষমতা আমার নেই। শুধু বলব, ওঁর এই মনোভাব দুঃখজনক।” জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বুধবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী আমাদের যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে আমরা লাগাতার ধর্মঘট দশ দিন স্থগিত রেখেছি। সরকার কথা না-রাখলে, অর্থাৎ ভাড়া না-বাড়ালে শুক্রবার থেকেই বাস বসে যেতে শুরু করবে।” এক মিনিবাস-মালিকের মন্তব্য, “পরিবহণমন্ত্রী বৈঠকে ডেকে আশ্বাস দেবেন, আর মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে দাঁড়িয়ে পারমিট কাড়ার হুমকি দেবেন! এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না।” মিনিবাস কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অবশেষ দাঁ বলেন, “চাপ দিয়েও এই ভাড়ায় যাত্রী-পরিষেবা চালু রাখা যাবে না। বাস আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।”
এ দিন ট্যাক্সির বিরুদ্ধেও কড়া মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি নাম না-করে ‘ট্যাক্সি-মালিকদের একটি সংগঠন’-এর উল্লেখ করেন। বলেন, কড়া হাতে যাত্রী-প্রত্যাখ্যানের অভিযোগের মোকাবিলার করা হবে। এ দিন পরিবহণমন্ত্রী ট্যাক্সি-মালিকদের ছ’টি সংগঠনের কর্তাদের মহাকরণে ডেকে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব সম্পর্কে অবহিত করেন।
এই পরিস্থিতিতে ট্যাক্সি-মালিকদের একাংশ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের উপরে তাঁদের আস্থা ক্রমশ টলে যাচ্ছে। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “পরিবহণমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, ৮ অক্টোবরের মধ্যে ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করবেন। তার ভিত্তিতে আমরা ধর্মঘট থেকে পিছিয়ে আসছি। শুক্রবার থেকে বৃহত্তর কলকাতায় ট্যাক্সি চলবে। কিন্তু সরকার কথা না-রাখলে ৯ অক্টোবর ফের আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব।” |