ছিল না চোখরাঙানি, কর্মনাশের মোচ্ছব তাই অবাধেই
ফেব্রুয়ারির বন্ধে ‘ছুটি-পিপাসু’ বাঙালির জন্য ছিল কড়া হুঁশিয়ারি। তার জেরে আগের রাতে মহাকরণ-সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে গিয়েও সরকারি অফিস পুরোদস্তুর ‘সচল’ রেখেছিলেন কর্মীরা।
কিন্তু বৃহস্পতিবারের জন্য তেমন কড়া নির্দেশ ছিল না। বরং সরকারি তরফে ছিল অনেকটাই গা-ছাড়া ভাব। কারণ, বন্ধ নিয়ে সরকারের অবস্থা এবং অবস্থান ছিল কিছুটা ‘ধর্মসঙ্কট’-এ পড়ার মতো।
কেন ধর্মসঙ্কট?
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “যে-কারণে বন্ধ ডাকা হয়েছে, তা জেনুইন (যথার্থ)। তাই প্রত্যেকটি মানুষ একে সমর্থন করেছেন।”
এই কারণেই এ বারের বন্ধে মহাকরণের হাওয়ায় ছিল ‘ছুটি ছুটি’ ভাব। হাজিরা সামগ্রিক ভাবে ৯০ শতাংশের মতো থাকলেও ‘কাজের সময়’ ছিল বড়জোর ঘণ্টা তিনেক ১২টা থেকে ৩টে। এমনকী দেরিতে আসা বা আগে চলে যাওয়ার জন্য হাজিরা খাতায় ‘দাগ’-ও পড়েনি। তাই সই করেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগও ছিল প্রশস্ত। অর্থাৎ বাঙালির ‘কর্মবিমুখ’ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী সেই চেনা ছবিটা একই রকম থাকল বৃহস্পতিবারের বন্ধেও।
ট্যাক্সি কই? খাপ্পা এই খুদেও। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশনের প্রিপেড স্ট্যান্ডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
চলতি বছরে আগের দু’টি ধর্মঘটেই সরকারের তরফে কোনও কর্মীকে ছুটি না-দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটে যে-সব কর্মী ‘উপযুক্ত’ কারণ ছাড়া কাজে যোগ দেননি, তাঁদের এক দিনের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে সরকার যে এ বারের বন্ধের গরহাজির থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও কড়া পদক্ষেপ করবে না, তা-ও ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের কথায়। এ বার কী হবে, সেই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রায় ৯০ শতাংশ তো হাজিরা হয়েছে। আমরা ‘কেস-টু-কেস’ বিচার করে দেখব।” এ দিন সরকারি কর্মীদের হাজিরা দেখে খুশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলায় কর্মসংস্কৃতি চালু করেছি। বন্ধ করব না। বেশি করে কাজ করব। বাংলার মানুষই একমাত্র পারেন কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে। তাই যাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।” সরকারি কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী দিনেও যাতে কর্মসংস্কৃতিতে তাঁরা পথ দেখাতে পারেন, এটা তারই সূচনা। এখানে অনেক দল মিলে বন্ধ ডেকেছিল। তা সত্ত্বেও এত সংখ্যায় হাজিরা কিন্তু প্রমাণ করছে, কর্মসংস্কৃতির জোয়ার এসেছে।”
সরকারি কর্মীরা ‘হুঁশিয়ারি’র জেরে অফিসের ‘বুড়ি ছুঁয়ে’ ঘরমুখো হলেও ‘কর্মবিমুখ’ ঐতিহ্য মেনে ঘরে বসেই ‘ছুটি উপভোগ’ করেছে আম-বাঙালি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মতো কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া নিতান্ত দায়ে না-পড়লে বিশেষ কেউই বারমুখো হননি। পুজোর ভরাবাজারেও রাজ্যের সর্বত্র দোকানপাট বন্ধ থেকেছে। বন্ধ ছিল হাওড়া-ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব কারখানাও। অন্যান্য বারের বন্ধ-ধর্মঘটের চেয়ে অনেকটাই নির্বিঘ্নে চলেছে শহরতলির ট্রেন। চলেছে মেট্রোও। কিন্তু সওয়ারি বিশেষ মেলেনি।
তৃণমূলের আমলের আগের দু’টি বন্ধের সঙ্গে এ দিনের বন্ধের সব চেয়ে বড় ফারাক তা হলে কোথায়?
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, আগের বন্ধ দু’টি ব্যর্থ করতে সরকারি তরফের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এ বার কার্যত উল্টোটাই হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া তৃণমূল রাস্তায় নেমে বন্ধের বিরোধিতা তো করেইনি, বরং এ দিনের বন্ধে তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনই দেখা গিয়েছে।
কোচবিহারে আক্রান্ত বন্ধ সমর্থকরা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
আর ঠিক সেই কারণেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “এ বারের বন্ধ ব্যর্থ করতে রাজ্য সরকার সক্রিয় ছিল না। অন্তর্নিহিত ভাবে একটা দুর্বলতা ছিল সরকারি তরফে। যার ফলে রাজনৈতিক দিক থেকে এ রাজ্যে মৃতপ্রায় বিজেপি এবং দুর্বল সিপিএম-কে শক্তি জোগানো হল।”
সরকার এ দিন বন্ধের বিরোধিতায় না-নামলেও কয়েকটি জায়গায় গোলমালে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূলকর্মীরা। রাস্তায় নেমে বন্ধের বিরোধিতা করতে গিয়ে কোচবিহারে এসইউসি-সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে যুব তৃণমূল-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মারধর থেকে এসইউসি-র মহিলা সমর্থকেরাও রেহাই পাননি। নৈহাটি, কাঁকিনাড়া, তারকেশ্বরে আবার সিপিএম-কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “বহু জায়গায় ধর্মঘটীদের উপরে হামলা করেছে তৃণমূল। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির মহিলা সদস্যা-সহ সিপিএমের একাধিক কর্মী আহত হয়েছেন।” কিন্তু এই বন্ধে তাঁদের কী লাভ হল, তা স্পষ্ট করে জানাননি বিমানবাবু।
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, তাঁদের অন্তত ৬০ জন সমর্থককে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.