এ যেন জলের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা। জল কোথায় নেই! মেঝের জলে পায়ের পাতা ভিজে যায়, কাজ করার টেবিলে জল পড়া থেকে নথিপত্র বাঁচাবেন না নিজে বাঁচবেন— এই দুইয়ের সমস্যায় পড়েছেন কর্মীরা। বৃষ্টি হলেই এমনই অবস্থা হয় বান্দোয়ান সাব পোস্টঅফিসের কর্মীদের। বাধ্য হয়ে কর্মীরা ছাতা মাথায় বা বর্ষাতি গায়ে চড়িয়ে কাজ করেন।
কর্মীদের অভিযোগ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব জানেন। কিন্তু সুরাহা হয় না। অফিসের নথিপত্র জলের হাত থেকে বাঁচাতে প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একাংশ কর্মীর ক্ষোভ, নথিপত্র না হয় ঢাকা দেওয়া গেল। কিন্তু জলে ভিজে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন যাঁরা তাদের কথা কর্তৃপক্ষ কি ভেবেছেন? সম্প্রতি পোস্টঅফিসে গিয়ে দেখা গেল, বারান্দায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন গ্রাহক ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের হাত থেকে বাঁচতে ছাতা মাথায় দিয়েছেন। ভেতরে কয়েকজন ডাককর্মী কেউ বর্ষাতি পরে, কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে কাজ করছেন।
এমন অবস্থা কেন? পোস্টমাস্টার চিত্তরঞ্জন মহাপাত্র ছাতা সামলে বলেন, “বর্ষার কয়েকটা মাস আমাদের এই ভাবেই কাজ করে যেতে হয়। ছাতা সামলাবো না কাজ করব ভেবে পাই না।” অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বাড়িতে প্রায় পাঁচ দশক ধরে পোস্টঅফিস চলছে। অফিসের ভাড়া না বাড়ায় বাড়ির মালিক ঘর সংস্কার করাননি। জীর্ণ বাড়ির জন্য ছাদে বর্ষায় জল জমে। ওই জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে নীচে পড়ে। ডাককর্মী বাচস্পতি বন্দ্যোপাধ্যায়, কৃষ্ণচন্দ্র মাঝি বলেন, “জলে ভিজে ভিজে আমাদের সর্দি-কাশি লেগেই রয়েছে।” |
কর্মীদের অভিযোগ, “কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হলেও আজ পর্যন্ত অন্য জায়গায় অফিস স্থানান্তরিত হয়নি। রাস্তা থেকে বাড়িটি নীচু হওয়ায় নোংরা জল ঢুকে পড়ত। রাস্তার দিকে ছোট পাঁচিল তুলে আপাতত তা আটকানো গিয়েছে।” কর্মীদের আশঙ্কা, বয়সের ভারে ও জলে ভিজে থাকায় যে কোনও দিন ছাদ ও পাঁচিল ধসে পড়তে পারে।
বাড়ির মালিক বাবলু রহমান বলেন, “অফিসের কর্মীদের বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি। অন্যথায় অফিস স্থানান্তরিত করতে বলেছি।” অফিসে দু’টি কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু বেহাল বাড়ির জন্য ওগুলি চালু করা যায়নি। পাঁচ জন কর্মী রয়েছেন। ১৭টি শাখা ডাকঘরের কর্মীরাও এই ছোট্ট ঘরেই কাজ সারেন। আরও দু’টি ঘর থাকলেও তা ব্যবহারের উপযোগী নয়। চিঠি বাছাই, স্ট্যাম্প দেওয়া, বিভিন্ন শাখার জন্য আলাদা করে রাখা— সবই এই ঘরে সারতে হয়। এ তো গেল কর্মীদের সমস্যা। বান্দোয়ান থানার পারবাইদ গ্রামের উত্তম মাহাতো, শিরিসগোড়া গ্রামের মোহন্ত হেমব্রমরা বলেন, “ডাকঘরে কাজে গেলে সঙ্কীর্ণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়। ভেতরে কর্মীদের অবস্থা দেখে আমরা আর কিছু বলতে পারি না। তাঁরা এই ভাবে সারাদিন কাজ করে যান। দেখে খারাপ লাগে।” পুরুলিয়া ডাকঘরের সুপারিন্টেডেন্ট বিধান আচার্য বলেন, “বান্দোয়ান ডাকঘরের বেহাল অবস্থার কথা জানি। ওই বাড়ির মালিক যে পরিমাণ ভাড়া বাড়ানোর দাবি করেছেন তা দেওয়া সম্ভব নয়। অফিস অন্যত্র সরানোর চেষ্টা চলছে।” ডাককর্মীরা বলেন, “এই অফিস থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্প, পেনশন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়।” চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “অনেক সময় নথিপত্রে জল পড়ে যাওয়ায় হিসাবের গোলমাল হয়ে যায়।”
তাঁদের অবস্থার কথা বলতে বলতে ঝরঝর করে জল মাথা ও কাগজের ওপর পড়লে কর্মীরা ফের টেবিল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাঁদের একটাই প্রশ্ন আর কতদিন এ ভাবে কাজ করতে হবে? |