বিক্ষিপ্ত গোলমাল বাঁকুড়ায়, গ্রেফতার ১৪
শিল্পতালুকে ধোঁয়া উড়ল, অফিসে এলেন কর্মীরা
কোথাও সিপিএম নেতার বাড়িতে হামলা হল। কোথাও বনধ সমর্থক ও বনধ বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধল। কোথাও আবার সিপিএমের পার্টি অফিসে ঢুকে নেতাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল। রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হল যাত্রীদের। এ ভাবেই বৃহস্পতিবার বামদলগুলি ও বিজেপি-র ডাকা বনধ দেখল বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা। বেলিয়াতোড়ে রাস্তা অবরোধ করায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ দিন সকালে পিয়ারডোবায় সিপিএমের বিষ্ণুপুর জোনাল কমিটির সদস্য হাইস্কুলের শিক্ষক অসীম সামন্তের বাড়িতে তৃণমূলের কর্মীরা চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। মোটরবাইকটি কুয়োর ভিতরে ফেলে দিয়ে, দল ছাড়ার জন্য তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অসীমবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “ধর্মঘটের সমর্থনের বুধবার আমরা বাঁকাদহ এলাকা মিছিল করেছিলাম। তার জেরেই তৃণমূল কর্মীরা আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে মোটরবাইকটি কুয়োয় ফেলে দেয়।”
বিষ্ণুপুর বাজার ও বাঁকুড়া জেলাশাসকের দফতর। ছবি: শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ।
বড়জোড়ার পখন্না থেকে অবশ্য সকাল থেকেই গোলমালের খবর আসছিল। পখন্না বাজারে এ দিন সকালে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা বন্ধের সমর্থনে মিছিল করেন। অভিযোগ তৃণমূলের কর্মীরা তার বিরোধিতা করেন। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষের কয়েকজন জখম হন। বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের যদুনাথ রায়ের অভিযোগ, “ধর্মঘটের সমর্থনে আমরা মিছিল করছিলাম। তৃণমূলের কিছু কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের আক্রমণ করে।” ওই ঘটনায় সিপিএমের দু’জন কর্মী বিদ্যুৎ গোস্বামী ও অসিত রায় জখম হন বলে সিপিএমের দাবি। তাঁদের দু’জনকেই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ওই ঘটনায় জনা ছ’য়েক তৃণমূল কর্মী চোট পান। তাঁদের বড়জোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি জহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমরা কোনও আক্রমণ করিনি। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে মিছিল করছিলাম। সেই সময়ে সিপিএম আমাদের উপরে চড়াও হয়।”
পিয়ারডোবায় সিপিএম নেতার বাড়িতে ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।
এখানেই ঘটনা থেমে থাকেনি। সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন বিকেলে সিপিএমের পখন্না লোকাল কমিটির অফিসে তৃণমূলের কিছু লোক চড়াও হয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য বিপত্তারণ দাসকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁকে বাঁকুড়া শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পখন্নায় গালমালের পরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কোনও অভিযোগ হয়নি।” এ দিকে খাতড়ার দহলা পঞ্চায়েতে ধর্মঘট সমর্থনকারীরা পঞ্চায়েত অফিসের দরজা আটকে কর্মীদের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন। ইঁদপুরের ভেদুয়াশোল উচ্চবিদ্যালয় খুলতেও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। রঘুনাথপুরের মৌতোড়-চেলিয়ামাতে পুলিশ গিয়ে স্কুল ও ব্যাঙ্কে লাগানো বনধ সমর্থনকারীদের পতাকা খুলে নেওয়ায় কিছুটা চাঞ্চল্য ছড়ায়
এমনই কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার বাইরে অন্যান্য বন্ধের মতোই দুই জেলায় এ দিনের ছবিটা প্রায় একই ছিল। বন্ধের সমর্থনে জায়গায় জায়গায় মিছিল হয়েছে। তেমনি বন্ধের বিরোধিতা করেও মিছিলও হয়। অশান্তির আশঙ্কায় পুলিশের চেনা টহলও ছিল। সরকারি অফিসগুলিতে কর্মী হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক ছিল। রঘুনাথপুর ও নিতুড়িয়া ব্লকের একাংশে ডিভিসির নির্মীয়মান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে পিকেটিং করেন বনধ সমর্থকেরা।
ফাঁকা মানবাজার বাজার। —নিজস্ব চিত্র।
নিতুড়িয়ার দুবেশ্বরী ও পারবেলিয়া কয়লাখনিতে স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে। স্বাভাবিক ছিল সাঁওতালডিহির ভোজুডি কোল ওয়াশারি। বাঁকুড়ার ডিভিসির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রেও এ দিন উৎপাদন ব্যাহত হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। বড়জোড়া শিল্পতালুকে শ্রমিকদের হাজিরা কিছুটা কম থাকলেও উৎপাদন বন্ধ থাকেনি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
কাশীপুরের সাপ্তাহিক পশুহাটে বন্ধের মধ্যেও স্বাভাবিক বেচাকেনা হয়েছে। দূরদুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু নিয়ে হাটে এসে কেনাবেচা করেন এ দিন। পারবেলিয়া-সহ নিতুড়িয়া ব্লকে দোকানপাট খোলা ছিল। বাজার খোলা ছিল পুঞ্চায়। বিষ্ণুপুর শহরের দোকানপাট অধিকাংশই ছিল খোলা। সব্জি বাজারেও ভিড় ছিল। একই ছবি পাত্রসায়র, সোনামুখী, বড়জোড়াতেও। কয়েকটি জায়গায় স্কুল, কলেজে পঠনপাঠনও হয়।
অপেক্ষা। সারেঙ্গার
পিড়রগাড়িমোড়ে। ছবি: উমাকান্ত ধর।
পুরুলিয়া স্টেশনের
ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।
বেসরকারি বাস না চলায় যাত্রী দুর্ভোগ ছিল। তবে ট্রেন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। কিছু জায়গায় বনধ সমর্থকেরা ট্রেন অবরোধ করলেও তা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “সকালে আদ্রা-আসানসোল শাখার মুরাডি স্টেশনে কিছু সময় ট্রেন অবরোধ হয়। আরপিএফ ও রেলপুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। ফলে ওই শাখায় ট্রেন চলাচলে সামান্য বিঘ্ন ঘটেছে। চক্রধরপুর ডিভিশনের টাটানগর ও আদিত্যপুর স্টেশনে অবরোধ হওয়ার ফলে কিছু দূরপাল্লার ট্রেনকে আদ্রা ডিভিশনের কিছু স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.