বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলাকালীন ঠাকুরের গাড়িতে থাকা জেনারেটরের বেল্টে জড়িয়ে এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। চলন্ত জেনারেটরের বেল্টে অমিত দাঁ (১২) নামে বালকটির দেহ দু’টুকরো হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে হুড়া থানার বড়গ্রামে। ওই ঘটনায় পুলিশ ছ’জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেরই একটি ধানের আড়তের উদ্যোগে বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছিল। বুধবার ছিল বিসর্জন। গ্রাম জুড়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রার জন্য ছোট একটি গাড়িতে বিশ্বকর্মার মূর্তির সঙ্গে জেনারেটরও রাখা হয়েছিল যাতে বক্স বাজিয়ে গান চালানো এবং শোভাযাত্রা আলোকিত করা যায়। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, মূর্তির পিছনের দিকে জেনারেটর রাখা ছিল। আর ওই গাড়িতে অমিতেরই সমবয়সী কয়েক জন বালকও ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ধীরেন মুদি বলেন, “এক জায়গায় গাড়িটা জোরে ব্রেক কষে। তার পর হঠাতই জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে দেখি জেনারেটরে জড়িয়ে গিয়েছে একটা ছেলে।” ওই গাড়িতেই থাকা অমিতের সমবয়সী এক বালকের কথায়, “জেনারেটরের প্রচণ্ড আওয়াজ ছিল। সাউন্ড বক্সেও জোরে গান বাজছিল। তার মাঝেই অন্য রকম একটা শব্দ পেলাম। দেখি অমিত বেল্টে জড়িয়ে গিয়ে ঘুরছে।” গাড়িতেই অমিতের দেহ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ায় বিসর্জন ছেড়ে বেশিরভাগ লোকই পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে রাতে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
অমিতের জেঠু মেঘনাথ দাঁয়ের অভিযোগ, “প্রচণ্ড শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলছিল। পুলিশ-প্রশাসনের দেখা উচিত, মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানোর অনুমতি উদ্যোক্তাদের ছিল কি না।” অমিতের পরিবারের লোকেদের দাবি, শোভাযাত্রায় কিছু লোক চটুল গানের সঙ্গে নাচছিল। ভিড়ে কম বয়সী কিছু ছেলে ঢুকে পড়ায় ওই সব লোকেরই কেউ কোলে করে কাউকে কাউকে গাড়িতে তুলে দেয়। পুরুলিয়ার (সদর) মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর বলেন, “শোভাযাত্রায় সাউন্ড বক্স ব্যবহার করলে অবশ্যই প্রশাসনিক অনুমতি দরকার। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আর অনুমতি থাকলেও চড়া শব্দে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের অনুমতি কাউকেই দেওয়া হয় না। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।”
পুলিশ জানিয়েছে, যে গাড়িতে বিসর্জন হচ্ছিল সেই গাড়ির মালিক, জেনারেটরের মালিক এবং পুজোর চার উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত ছ’জনই পলাতক। ওই গাড়ি ও জেনারেটর বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওই বালকের মৃত্যুর পিছনে কারও গাফিলতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” |