বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল। এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার নির্বিঘ্নেই বনধ হল হুগলি, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনায়। সকালের দিকে ট্রেন চলাচলে কোথাও কোথাও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বনধ সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁরা সফল হননি। পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছেছেন। বেশির ভাগ জায়গাতেই দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সরকারি অফিস ও দফতরগুলি খোলা ছিল। বেশির ভাগ কর্মীই এসেছেন বলে দাবি প্রশাসনের।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন ধর্মঘট ডেকেছিল বিজেপি এবং বামদলগুলি। এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ হুগলি স্টেশন সংলগ্ন কালীতলায় বিজেপি সমর্থকরা মিনিট কুড়ি রেল অবরোধ করে। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে গেলে অবরোধকারীরা পালায়। রবীন্দ্রনগরে বিজেপি-র মিছিলে তৃণমূলের লোকজন ইট ছোড়ে বলে অভিযোগ। |
কর্মব্যস্ততাহীন ক্যানিং মহকুমাশাসকের অফিসে ভিডিওগেম খেলছেন কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সামসুল হুদার তোলা ছবি |
দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন পাল-সহ বিজেপি-র কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। রবীন্দ্রনগরে বিজেপি সমর্থকরা জিটি রোড অবরোধ করলে পুলিশ তাদের ধরে পরিস্থিতি সামলায়। প্রতিবাদে বিজেপি সমর্থকেরা চুঁচুড়া থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান।
বৈদ্যবাটিতে সিপিএম সমর্থকরা রেল এবং সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। নওগাঁর মোড়ে একদল বনধসমর্থনকারী রাস্তায় ট্রাক আটকাচ্ছিল। এখানেও পুলিশ গিয়ে সরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীদের। সকালে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলে শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েক জন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিপিএম পরিচালিত চণ্ডীতলা-২ ব্লকের তালাবন্ধ বরিজহাটি পঞ্চায়েত অফিস বিডিও-র উদ্যোগে খোলা হয়। এ দিন চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতরে উপস্থিতি ভালই ছিল। অন্যান্য সরকারি দফতরেও কমবেশি কাজ হয়েছে। তবে, যানবাহন কার্যত রাস্তায় বেরোয়নি। উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, বৈদ্যবাটি, চন্দননগর, চুঁচুড়া কোথাও বাস-ট্রেকার না চললেও নামমাত্র কিছু এলাকায় অটো চলে। যানবাহন না থাকায় ভুগতে হয়েছে আরামবাগ মহকুমার বাসিন্দাদেরও। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, গোলমাল ছড়ানোর অভিযোগে গোটা জেলায় ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
সুনসান ডায়মন্ড হারবার ফেরিঘাট। দিলীপ নস্করের তোলা ছবি। |
হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনান, আমতা, ডোমজুড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ দোকানপাটই বন্ধ ছিল। বেসরকারি বাস চলেনি। ট্রেক, অটোরিকশাও ছিল না। তবে, বিভিন্ন রুট থেকে ধর্মতলার সরকারি বাস নিয়মিত চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ ছিল। বাগনানের হাল্লান হাইস্কুলের গেটে সিপিএমের পক্ষ থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় তালা ভেঙে স্কুলে ঢোকেন শিক্ষকেরা। সিপিএম অভিযোগ মানেনিয় বেলা আড়াইটে নাগাদ পাঁচলায় হাউলিবাগানে আমতা-রানিহাটি রোড অবরোধ করেন বনধসমর্থকেরা। পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়।
বন্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায়। ক্যানিং মহকুমায় রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। বন্ধ ছিল দোকানপাট। বাস, মিনিবাস, ট্রেকার বা অন্য যানবাহন সে ভাবে চলেনি। তবে, অটোরিকশা, মোটরভ্যান চলেছে। শিয়ালদহ-ক্যানিং শাখায় রেল পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল বলে প্রশাসনের দাবি। স্কুল-কলেজগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা ঠিক থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ দুই মহকুমাতেই বেসরকারি বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। তবে, কিছু সরকারি বাস চলেছে। দোকানপাট সবই বন্ধ ছিল। সকালে ডায়মন্ড হারবার-শিয়ালদহ শাখার নেতরা ও বাসুলডাঙা স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করে সিপিএম সমর্থকেরা। সর্বত্র ফেরি সার্ভিস চালু থাকলেও যাত্রী ছিল না বললেই চলে।
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি ও কাঁকিনাড়ায় ট্রেন অবরোধকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সিপিএমের অভিযোগ, এক নেত্রী-সহ তাদের মোট ১১ জনের উপর হামলা চালায় তৃণমূল। জখম হন সাত জন। অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।
তাদের দাবি, যাত্রীরাই অবরোধকারীদের সরিয়ে দেন। ব্যারাকপুর-বারাসাত রোডের মাতারাঙ্গিতে বিজেপি ও সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের হাতাহাতি হয় পথ অবরোধ করাকে কেন্দ্র করে। কল-কারখানা, অফিস, স্কুল খোলা থাকলেও হাজিরার সংখ্যা ছিল কম। ব্যারাকপুর, বেলঘরিয়া ও টিটাগড়ে সরকারি বাসের ডিপোগুলো থেকে সকালের দিকে বেশি বাস চালানো হয়। পরের দিকে বাস-সহ অন্য যানবাহন ছিল হাতে গোনা। কল্যাণীতে এফসিআই গুদামে কর্মীরা হাজির হলেও সেটি বন্ধ ছিল। এ জন্য তৃণমূল বিক্ষোভ দেখায়।
হাসনাবাদ, বসিরহাট এবং ভ্যাবলা স্টেশনে ট্রেন অবরোধ হয়। টাকি পুরসভা বন্ধ করা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বসিরহাট থানার সামনে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর প্রভৃতি এলাকায় দোকানপাট ছিল খোলা। সরকারি বাস মেলেনি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বসিরহাটে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বনগাঁ মহকুমা এবং হাবরা-অশোকনগরে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার গুমা ও অশোকনগর স্টেশনে বিজেপি রেল অবরোধ করে। সিপিএম হাবরা-১ রেলগেট ও যশোহর রোড অবরোধ করে। হাবরা স্টেশন রোডে সিপিএম বেসরকারি বাস আটকে দেয়। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হঠায়। বিক্ষোভকারীরা হাবরা ১ প্ল্যাটফর্মের কাউন্টারের একটি জানলা ভাঙে। পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কাজ হয়েছে নির্বিঘ্নেই। |