কুপ্রস্তাবে রাজি হননি বারাসতের এক গৃহবধূ। সেই আক্রোশে ঘরে ঢুকে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ বার শ্লীলতাহানির সেই মামলা তুলে নিতে রাজি না-হওয়ায় খাস বারাসত আদালত-চত্বরেই ওই গৃহবধূর স্বামীকে মারধর করল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ঘটনার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় মহিলার স্বামীকে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে ওই দম্পতি পরে বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশি সূত্রের খবর, ওই দম্পতি প্রথমে থাকতেন বারাসতের বর্মা কলোনিতে। অভিযোগ, প্রীতম সেন নামে এলাকার এক যুবক ওই মহিলাকে উত্ত্যক্ত করত। অতিষ্ঠ হয়ে সপ্তাহখানেক আগে বর্মা কলোনি ছেড়ে ওই দম্পতি বারাসতের ন’পাড়ায় ঘর ভাড়া নেন। গত সোমবার রাতে ওই মহিলার স্বামী কাজে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় প্রীতম মদ্যপ অবস্থায় ঘরে ঢুকে ওই মহিলাকে মারধর এবং তাঁর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। ওই গৃহবধূ বারাসত থানায় প্রীতমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু হয়।
সেই মামলার ব্যাপারেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে বৃহস্পতিবার ওই দম্পতি বারাসত আদালতে গিয়েছিলেন। ধর্মঘটের দিনে আদালত-চত্বর প্রায় ফাঁকাই ছিল। ওই মহিলার স্বামীর অভিযোগ, “আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই সময়েই প্রীতমের কিছু শাগরেদ এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ওরা একটা কাগজ এনেছিল। তাতে আমাকে সই করতে বলে।” ওই ব্যক্তি জানান, কাগজটিতে লেখা ছিল, শ্লীলতাহানি বা মারধর কিছু হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই গৃহবধূর স্বামী বলেন, “ওই কাগজে সই করার জন্য প্রীতমের শাগরেদরা আমাকে চাপাচাপি করতে থাকে। আমি সই করতে রাজি না-হওয়ায় ওই দুষ্কৃতীরা আমাকে মারধর করে।” পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যারা এসেছিল, তারা প্রীতমেরই লোকজন। অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।
পুলিশি তৎপরতার ঢক্কানিনাদের মধ্যেই বারাসতে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে অবাধে। গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে দিদির উপরে হামলা রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের মারধর ও ছুরির আঘাতে প্রাণ হারায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়। পুলিশ-প্রশাসনও সেই সময় কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল। কিন্তু তার পরেও প্রায় ধারাবাহিক ভাবেই শ্লীলতাহানি, অপহরণ এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনার ওই জেলা শহরে। অপরাধ ঠেকাতে সম্প্রতি বারাসত পুলিশে রদবদল হয়েছে। আজ, শুক্রবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই জেলায় যাওয়ার কথা। তার আগের দিন বারাসত আদালতের চত্বরে অভিযোগকারিণী গৃহবধূর স্বামীর উপরে অভিযুক্তের শাগরেদরা হামলা হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকাও। |