বৃহস্পতিবার বন্ধের প্রভাবে শেষকৃত্য করতে নিয়ে আসা মৃতদেহের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম ছিল, অন্তত দিনের বেলায়। যাঁরা এসেছেন তাঁদের বেশিরভাগই জানালেন, বন্ধে বার হতে অনেক ইতস্তত করে শেষ পর্যন্ত চলেই এলাম। দূরের লোকজন গাড়ির কাচে ‘শবদেহ’ লিখে এসেছেন। যাতে বন্ধ সমর্থকদের রোষ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা সত্ত্বেও সৎকার রেজিস্টার বলছে, অন্য দিনের তুলনায় এদিন সৎকারের জন্য মৃতদেহ এসেছে অনেক কম। বিকেল তিনটে পর্যন্ত মাত্র ১১টা মৃতদেহ এসেছে শ্মশানঘাটে। যেখানে বুধবার সারাদিনে মোট ৪৫টি দেহ দাহ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সংখ্যাটা ছিল ৩৬। সোমবার দাহ করা হয়েছিল ৩০টি মরদেহ।
এত অসুবিধার মধ্যেও অনেকেই শ্মশানে হাজির হয়েছেন প্রিয়জনের মরদেহ দাহ করতে। হাঁসখালির জয়নগরের ব্যবসায়ী সৌমিত্র কর্মকার তাঁর প্রতিবেশীর দেহের সঙ্গে এসেছেন। তিনি বলেন, “বন্ধের কারণে আমার আসাটা অবশ্য সহজ হয়েছে। অন্যান্যদিন ব্যবসার কাজ থাকে। আবার গাড়িঘোড়া বন্ধ থাকায় ওদের বহু আত্মীয় স্বজন সৎকারে আসতে পারেননি।”
অনেকে আবার বন্ধের আওতায় পড়তে চান না বলে বাড়ি থেকে বার হয়েছেন ঢের আগে। বন্ধের ঝামলা থেকে বাঁচতে নিয়মের চারঘন্টা আগেই দেহ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সমরেশ দত্ত। তিনি বলেন, “দাদুর বয়স ৮৪। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু। খুব ভুগছিলেন। তাই একটু আগেই বেরিয়ে এসেছি। যতটা আগে পৌঁছতে পারি।”বন্ধুর ঠাকুরমার দেহ নিয়ে বাগদার হেলেঞ্চা থেকে এসেছেন সৈকত মধু। তিনি বলেন, “সকাল ৯টার সময় বেরিয়ে বিকেল ৩টে নাগাদ পৌঁছলাম। রাস্তায় তেমন কেউ গাড়ি আটকায়নি। তবে বন্ধের কারণে চা-বিস্কুট খাওয়ার জন্য কোনও দোকানও খোলা ছিল না।”
তবে এতটা সুবিধা হয়নি বগুলার মানিক মণ্ডলের। তাঁর অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তিনি বলেন, “আমার বোনের শ্বশুর মারা গিয়েছেন। মৃতদেহ নিয়ে আসার পথে গাছা বাজারের কাছে বন্ধ সমর্থকেরা গাছের গুঁড়ি ফেলে গাড়ি আটকায়। পথ পরিষ্কার হতে কিছুটা সময় লাগল।”
এত কষ্ট করে মৃতদেহ দাহ করতে আসা শ্মশানযাত্রীদের খাবার কিনতে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে। গাড়ি না চলায় পাউরুটির যোগান ছিল কম। সকালের দিকে যে পাউরুটি বিক্রি হয়েছিল ৪ টাকায়। দুপুরে তা বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা দরে। এক বিক্রেতা গোবিন্দ সাহা বলেন, “৩৮ টাকা ডজনের রুটি বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৫ টাকা ডজন দরে কিনতে হয়েছে।” |