নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, দুই জেলায়, কোথাও পুলিশ ডেকে তালা খুলিয়ে স্কুলের হাজিরা খাতায় সই করলেন শিক্ষকরা, কোথাও আবার স্কুলের তালা খোলাতে না পেরে প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তাঁরা। আবার কোনও স্কুলে বৃহস্পতিবারের সাধারণ ধর্মঘট উপেক্ষা করে দিনভর পঠনপাঠন চলেছে আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতোই।
অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। রাস্তায় চোখে পড়েনি বেসরকারি পরিবহণ। দুই জেলাতেই সরকারি দফতরে অবশ্য কর্মী হাজিরার হার ছিল যথেষ্ট। জেলা প্রশাসনের দাবি প্রায় ৯৫ শতাংশ। মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া দিনটি শান্তিপূর্ণ ছিল। এ দিন ধর্মঘটের নামে জবরদস্তি করায় গোটা জেলায় মোট ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তবে নদিয়ায় বিক্ষিপ্ত ভাবে রেল অবরোধ ও বন্ধ সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই জেলায় ১৫ জন গ্রেফতারও হয়েছে। |
নবগ্রামের অমৃতকুণ্ডু কৃষ্ণকামিনী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক সৌমেন মুখোপাধ্যায় বলেন, “পিকেটাররা স্কুলগেট আটকে রাখায় পুলিশ ডেকে স্কুলে ঢুকেছি। ৩০ শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে অন্তত ২৫ জন এসেছিলেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় দু’টি পিরিয়ড করার পর পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া হয়।” পুলিশ ডেকেও কিন্তু তালা খোলানো যায়নি হরিহরপাড়ার খিদিরপুর কলোনি নেতাজি হাইস্কুলের। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ দিন স্কুলেই আসেননি। খানিক অপেক্ষার পরে শিক্ষকেরা ফিরে যান। শিক্ষকেরা অবশ্য মনীন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
জঙ্গিপুর মহকুমায় প্রায় সব স্কুল ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও বহরমপুর, লালবাগ ও ডোমকল মিলে ৩টি মহকুমা এলাকায় প্রায় সব স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। তবে ছাত্রছাত্রী যায়নি। কান্দি মহকুমায় অধিকাংশ স্কুল-কলেজ খোলা ছিল ও পঠপাঠন হয়েছে। বাজার বন্ধ থাকলেও সরকারি অফিস খোলা ছিল। কান্দি মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ওই মহকুমায় পঞ্চায়েত, পুরসভা ও প্রশাসনিক ভবন-সহ মোট সরকারি কর্মীর সংখ্যা ২৭৮। তার মধ্যে এ দিন হাজির ছিলেন ২৭৬ জন।” বহরমপুর মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “বহরমপুরে সরকারি কর্মীর অফিসে হাজিরার হার শতকরা ১০০ ভাগ।” |
কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক দফতরে হাজিরা স্বাভাবিক।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিকে, নদিয়ার নাকাশিপাড়া বি ডি ও অফিসে এক কর্মীকে মারধর করে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে বিজেপি সমর্থকেরা। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার দায়ে পুলিশ ৮ বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি এক সরকারি ওই কর্মী বি ডি ও অফিসে ঢুকতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয় বেথুয়াডহরিতে। বি জে পি-র নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “আমাদের কর্মীরা বি ডি ও অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ পিকেটিং করছিল। তাঁদেরকেই উত্তেজিত করার অপচেষ্টা করা হয়।” রীতিমতো আগাম নোটিস জারি করে সাধারণ ধর্মঘটের দিন দাঁড়ের মাঠ হাইস্কুল বন্ধ রাখল স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধানশিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ করিমপুরের সি পি এম বিধায়ক। তিনি বলেন, “পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মতো স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল।” ভালুকা শান্তিভূষণ গালর্স হাইস্কুলে তালা লটকানো থাকায় শিক্ষিকার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর পুলিশি পদক্ষেপে তালা খোলে ও শিক্ষিকারা স্কুলে ঢোকেন। এ রকম বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া নদিয়ার অধিকাংশ স্কুলই এ দিন বন্ধ ছিল। এ দিন বনধে শিয়ালদহ-গেদে শাখার তারকনগর স্টেশনে রেল অবরোধ করায় সি পি এমের ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। |
বন্ধের দিনে বহরমপুরে প্রশাসনিক ভবন।—নিজস্ব চিত্র। |
পলাশিপাড়ার বিধায়ক সি পি এমের এস এম সাদি বলেন, “রেল অবরোধ নয়, আমাদের কর্মীরা ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করছিলেন। তাতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।” বেথুয়াডহরিতে ভাগীরথী এক্সপ্রেস আধঘণ্টা আটকে রাখে ধর্মঘট সমর্থকেরা। এ ছাড়াও সকাল থেকে রেলের শিয়লদহ-কৃষ্ণনগর শাখার বাদকুল্লা, রাণাঘাট, কালীনারায়ণপুর ও কল্যাণী সীমান্ত স্টেশনে দফায় দফায় ট্রেন অবরোধ করা হয়। পরে বেলা বাড়লে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকালের দিকে কোনও বেসরকারি বাস নদিয়া জেলায় না চললেও বিকালের দিকে কয়েকটি রুটে কিছু বাস চলেছে। জেলায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল।
নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্রা বলেন, “জেলা প্রশাসনিক ভবন ও মহকুমাশাসকদের দফতরে সরকারি কর্মীর হাজিরা ছিল শতকরা ৯৩.৭ শতাংশ।” যা স্বাভাবিক বলেই তাঁর দাবি। |