সীমান্ত জওয়ানদের মাঠের বক্সে যেন আছড়ে পড়ছিল একের পর এক মিশাইল!
অঝোর বৃষ্টিতে ট্রেভর জেমস মর্গানের প্ল্যান বি তৈরির স্ট্র্যাটেজি তৈরি হচ্ছিল বুধবার সকালে। পাসিং ফুটবল ছেড়ে ডাইরেক্ট ফুটবল।
বল উড়ে আসছিল দুটো উইং দিয়ে। পায়ে বল পড়তেই চিডি-বলজিৎ-পেনদের শট আছড়ে পড়ছিল জালে। কী জোর, কী গতি!
শিলিগুড়ি ফেড কাপে যে ক’টা দল খেলছে তার মধ্যে সবচেয়ে ধংসাত্মক ফর্মে আছে লাল-হলুদ। সেটা কেমন? কলকাতা লিগে তিনটে ম্যাচ খেলেছ লাল-হলুদ। তাতেই ১৩ টা গোল। গড় ধরলে ম্যাচ প্রতি চারশো পার্সেন্ট সাফল্য।
ওডাফা-চিডি বা র্যান্টি-ভিনসেন্টকে নিয়ে যতই লাফালাফি হোক, একটা তথ্য জানিয়ে রাখা দরকার তা হল, ১৩ গোলের দশটা করেছেন দু’জনএডে চিডি আর বলজিৎ সিংহ। এর মধ্যে পঞ্জাবের হোসিয়ারপুরের ছেলে ‘বল্লে বল্লে’ র দুটো হ্যাটট্রিক-সহ আটটা। চিডি কি তা হলে ফেড কাপের জন্য তাঁর গোল ‘পকেটে’ রেখে দিয়েছেন? শান্ত স্বভাবের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বললেন, “অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন টোলগের অভাব পূরণ করতে পারব কি না? আমি শুধু বলছি, আমি চিডি। কারও বিকল্প নই। চিডির মতোই গোলটা করতে পারি।”
|
প্র্যাক্টিসে চিডি। ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস |
কথায় চুইয়ে পড়া আত্মবিশ্বাস। নতুন সঙ্গী বলজিতের মতোই। পুরো টিমের মনোভাবের সঙ্গে যা অনায়াসেই মিলিয়ে দেওয়া যায়। মগ্যার্নের ঘণ্টা দেড়েকের অনুশীলন দেখলে মনে হয়, কোনও এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা সুরের মূর্চ্ছনা। সবাই জানেন কখন কী করতে হবে! শুধু দীর্ঘদেহী মানুষটার মুখের অদ্ভুত আওয়াজটা শোনার অপেক্ষা মাত্র। তারপরই ‘কাজ’ শুরু।
লাল-হলুদের দুরন্ত ফর্মের সঙ্গে সাহায্য করছে ফেড কাপের সূচিও। টুর্নামেন্টের সহজতম গ্রুপে পড়েছেন উগা-পেনরা। গ্রুপ লিগে নামার আগেই তো সবাই ধরে নিয়েছে আপনারা সেমিফাইনালে চলে গিয়েছেন? প্রশ্ন শুনে হঠাৎ-ই সেই অদ্ভুত হাসিটা বেরিয়ে আসে ব্রিটিশ কোচের মুখ থেকে। “কাগজে-কলমের সঙ্গে ফুটবলের অঙ্ক সব সময় মেলে না। ডেম্পো-অ্যারোজ ড্র হবে আপনি ভেবেছিলেন?” কিন্তু আপনার টিমের যা দুর্ধর্ষ ফর্ম? আজ শুক্রবার স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে সতর্ক লাল-হলুদ কোচের মন্তব্য, “কলকাতা লিগের ছন্দটা ধরে রাখতে হবে এখানেও। কলকাতা লিগ আর ফেড কাপ কিন্তু এক নয়। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক শক্তিশালী।”
কালু-কেইটা-বংদের বিরুদ্ধে মর্গ্যান যে টিম নামাবেন বলে খবর, তাতে আট জনেরই লাল-হলুদ জার্সি পরে ফেড কাপে খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। আছে বেশির ভাগেরই এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধুর স্মৃতি। বাকি দু’জন চিডি আর ইসফাকতারাও তো করিম বেঞ্চারিফার দলের জার্সি পরে গতবার ভিকট্রি স্ট্যান্ডে উঠেছিলেন। |
আজ ফেড কাপে |
শিলিগুড়ি
ইস্টবেঙ্গল-স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া
কালীঘাট এমএস- ওএনজিসি |
জামশেদপুর
পৈলান অ্যারোজ-মুম্বই এফসি
ডেম্পো-লাজং এফসি |
|
পাহাড়ে ধস নামছে মাঝেমধ্যেই। আর শিলিগুড়িতে বৃষ্টি। কিন্তু এখন পাহাড়ে নয়, সঞ্জু-নওবাদের মতো পাহাড়ি ছেলেরাও নজর রাখছে কিন্তু বৃষ্টির দিকে। মর্গ্যানের মতোই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মাঠ পুরো মর্গ্যান ব্রিগেডকেই আশঙ্কায় রেখেছে। “স্পোর্টিং ক্লুবকে নয়, আমার সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠ। বল না গড়ালে আমাদের মাঝমাঠ থেকে বল আসবে কী করে?” ডান হাতের ট্যাটুর উপর লাগা কাদা জল দিয়ে ধুতে ধুতে বলছিলেন বলজিৎ। দীর্ঘ এক বছর পর গোলের মধ্যে জেসিটির প্রাক্তন। স্বভাবতই আশঙ্কায় তিনি।
ইস্টবেঙ্গলের গ্রুপ ম্যাচের প্রতিদ্বন্দ্বী স্পোর্টিং ক্লুব তেমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নয়। পরিচিত বিদেশি মুখ বলতে কালু ওগবা আর কেইটা। ক্যামেরুন থেকে বং বলে একজন স্ট্রাইকারকে অবশ্য এনেছে গোয়ার ক্লাব। সহকারী কোচ অ্যালেক্স আলভারেজ বলছিলেন, “আমাদের দলের বেশির ভাগ ছেলেই জুনিয়র। বিপক্ষ শক্তিশালী জানি। সেটা মনে রেখেই খেলতে নামব।”
মোহনবাগান যে হোটেলে উঠেছে সেই উত্তরায়ণের মাঠে স্পোর্টিংয়ের অনুশীলন দেখে মনে হল কমবয়সিদের দামাল দৌড়-ই তাদের প্রধান অস্ত্র। যা দিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা চালাবে একেন্দ্র সিংহের দল। কিন্তু কতক্ষণ সেটা ক্ষণস্থায়ী হবে?
ট্রেভর মর্গ্যানের বড় গুণ তিনি সব কিছুর জন্যই তৈরি করার চেষ্টা করেন দলকে। বিপক্ষের দৌড় থামাতে তাঁর অস্ত্র কী হবে? “ছেলেরা জানে কখন কী করতে হবে।” বলে দেন আত্ববিশ্বাসী কোচ। বরং তাঁর চিন্তা দশ-বারোটা ম্যাচের পর মাঠের অবস্থা বৃষ্টিতে কী দাঁড়ায় তা নিয়েই। “জানি না মাঠটা কেমন থাকবে?” |