চোট পেয়ে অনিশ্চিত টোলগে
মোহনবাগানকে বাঁচিয়ে দিল অরিন্দমের হাত

মোহনবাগান ০
চার্চিল ব্রাদার্স ০
ম্যাচের শেষে অরিন্দম ভট্টাচার্যের দু’টো হাত এসে ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন বেটো-হেনরিরা।
গতবারের ক্লাব চার্চিলের রিজার্ভ বেঞ্চে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন মোহনবাগান গোলকিপার। সেখানে মিনিট খানেকের ঘটে যাওয়া এই দৃশ্যটাই চৌম্বকে পুরো ম্যাচের নির্যাস।
কোনও বিদেশির অতিমানবীয় বিক্রম নয়, সোদপুরের নিখাদ বঙ্গসন্তানের হাত-ই মোহনবাগানকে বাঁচাল।
টোলগে-ওডাফা--চার কোটির কোহিনুরের ঝলকানি বন্ধ। নবি-নির্মল-ডেনসনের তীব্র আক্রমণের ঝনঝনানিও বাংলা বন্ধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্তব্ধ। গতি আর দু’দলের মরিয়া হাইভোল্টেজ ম্যাচে যুদ্ধটা হল শেষপর্যন্ত অরিন্দম বনাম চার্চিল। ছ’ফুট তিন ইঞ্চির অরিন্দম দেখালেনকী ভাবে একজন গোলকিপার একাই কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গের মতো সবাইকে ছাপিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন।
এলেবেলে কলকাতা লিগ বা এয়ারলাইন্স কাপে সঠিক পরীক্ষা হয়নি টোলগে-ওডাফা জুটির। সুভাষ ভৌমিকের নিখুঁত চালে কিন্তু প্রমাণ হলদেশের সেরা ফরোয়ার্ড লাইনও আটকে যায়, যদি না সেই দলের কোচের স্ট্র্যাটেজি সঠিক হয়। মোহন-কোচ অবশ্য ম্যাচ শেষে বললেন, “আমার দেখা অন্যতম সেরা ম্যাচ। আমাদের টিম ভালই খেলেছে। তিনটে শট পোস্টে লাগলে কি করা যাবে!”
এ ভাবেই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন টোলগে।
সন্তোষ কাশ্যপের দাবি ঠিক। কিন্তু সেটা অনেক পরে। খেলার ছাব্বিশ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচটা তো বেটোদের পক্ষে ৩-০ হয়ে যায়! হ্যাটট্রিক করতে পারতেন হেনরি। চার্চিলে থাকার সময় অরিন্দমের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল হেনরির। এ দিন একের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন সেই ‘বন্ধু’-ই! শত্রুর বেশে! অরিন্দম রাতে হাসতে হাসতে বললেন, “হেনরি বলছিল আমার জন্য হ্যাটট্রিকটা পেল না। চার্চিলও জিতল না। আমি বললাম, তোমাদের গোল আটকানোর জন্যই তো গোলের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। সেটাই করেছি।”
সুভাষ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা ধুরন্ধর কোচ। অনেক অঙ্ক কষে টিম নামিয়েছিলেন। হেনরি-বিনীশকে সামনে রেখে নিজের সেরা অস্ত্র বেটোকে করে দিলেন রোমিং অ্যাটাকিং মিডিও। পেন্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে ব্রাজিলিয়ান ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। ইচে-খেলেম্বারা শুরুতেই কেঁপে গেলেন। এতটাই যে, বেটোকে মেরে হলুদ কার্ড দেখলেন ইচে। চার্চিল কোচ জানতেন বিপক্ষের বাঁ দিকটা ‘খনি’। রহিম নবিকে মিডিও করে পৈলান অ্যারোজ থেকে আসা ফেনাই নামের একটা ‘বাচ্চা’ ছেলেকে লেফট ব্যাকে রেখেছিলেন মোহন-কোচ। প্রত্যাশিত ‘খাদ্য’ পেয়ে তা কাজে লাগালেন চার্চিল কোচ। বেটোকে পাঠানো হল ফেনাই বধে। প্রথমার্ধে তাদের যাবতীয় আক্রমণ আছড়ে পড়ল মোহনবাগানের বাঁ দিক থেকেই।
বিপক্ষের গোলে মোহনবাগানের প্রথম ধাক্কা জুয়েল রাজার শটে। বিরতির কিছু আগে। বজবজের ছেলের শট পোস্টে লাগার পরই ঝাঁকুনি দিতে শুরু করল বাগান। ওডাফা-টোলগে নড়াচড়া শুরু করলেন। ওডাফা নিজের চেষ্টায় বল টেনে নিয়ে গিয়ে প্রত্যাশিত ‘ওডাফা’ হলেন। পোস্টে লেগে বলটা ফিরল। টোলগে অবশ্য একা পেয়েও সন্দীপ নন্দীকে কাবু করতে পারলেন না। তবে পুরো ম্যাচে মোহনবাগান ‘টিম’ না হয়ে ওঠার পিছনে দায়ী মাঝমাঠ। সেখান থেকে ওডাফাদের জন্য বলই এল না! মাসি আর ডেনসনকে দেখে মনে হচ্ছিল দার্জিলিং-এর ম্যালে বেড়াচ্ছেন। ওডাফা রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে চিৎকার করছিলেন, ‘মাঝমাঠে একজন পাসার পাঠাও।’
এ ভাবেই আটকে গেলেন টোলগেরা। বৃহস্পতিবার।
সন্তোষ ভাল ম্যানেজার। কিন্তু সুভাষের মতো কোচের পাল্টা চাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। না হলে এরকম ‘যুদ্ধং দেহী’ ম্যাচে লেফট ব্যাক কি না ফেনাই! আর জুয়েল, যিনি মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ তোলেন তাঁকে রাইট উইং-এ পাঠানো! এমন ভুলের গুণাগার দিতে হবেই দলকে।
বিরতির পর মোহন-কোচ ‘অভিজ্ঞ’ হলেন। মাসির পরিবর্তে মণীশ ভার্গবকে নামালেন ডানদিকে। জুয়েলকে মাঝখানে এনে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন ধস। ততক্ষণে অবশ্য বড় অঘটন ঘটে গিয়েছে। হলুদ কার্ড দেখে, চোট পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছেন টোলগে। মাঠের ঘাস অসমান ভাবে কাটা। বিশেষ করে মাঝখানটায়। প্লাস্টিকের মতো খসখসে যে ঘাস পোঁতা হয়েছে সেটা বল প্লেয়ারদের সমস্যায় ফেলবেই। বেশি দৌড়লে পেশিতে টান ধরবেই। প্রথম দিনেই যার শিকার দু’দলের দুই স্ট্রাইকারটোলগে এবং হেনরি। পরে রহিম নবিও। শেষের দিকে বেটোর একটা গোল বাতিল হল। তোম্বা সিংহের ফ্রিকিকে হেড করতে উঠে ইচেকে কনুইয়ের ধাক্কা মারার জন্য।
চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়া টোলগে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না সময় বলবে। তবে নবি আর স্নেহাশিসের ঘাড়ে ভর দিয়ে গাড়িতে হোটেলে ফিরতে হল অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে। দেখে মনে হল শনিবারের ম্যাচ খেলতে তো পারবেনই না, ফেড কাপেও না অনিশ্চিত হয়ে যান। রাতের খবর, বরফ ঘষে ঘষে সেরে ওঠার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ওডাফার জুড়ি।

মোহনবাগান: অরিন্দম, নির্মল, ইচে, খেলেম্বা, ফেনাই, জুয়েল, মাসি (মণীশ), ডেনসন, নবি (স্নেহাশিস), ওডাফা, টোলগে (সাবিথ)।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.