সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র (এবিটিএ) সপ্তম ত্রিবার্ষিক জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে শনিবার মেদিনীপুর শহরে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। শহরের জেলা পরিষদ হলে এই সম্মেলন হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শহরের নানা জায়গায় ফেস্টুন-ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে তোরণ। তবে প্রচারে আগের মতো সেই ‘জৌলুস’ আর নেই। সংগঠনের এক জেলা নেতা বলেন, “পরিস্থিতি এখনও প্রতিকূল। তারমধ্যেই আমাদের সম্মেলন করতে হচ্ছে। তবে সব রকম প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাব আমরা। কেউ রুখতে পারবে না।” দু’দিনের সম্মেলনও এই বার্তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই নেতা।
এবিটিএ-র ষষ্ঠ ত্রিবার্ষিক জেলা সম্মেলন হয়েছিল ডেবরায়, ২০০৮ সালে। তারপরে এ বার মেদিনীপুরকে বাছা হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতেই ‘নিরাপদ’ জায়গায় সম্মেলন করা হচ্ছে বলে সংগঠনেরই এক সূত্রে খবর। সব মিলিয়ে ৫০৫ জন প্রতিনিধি যোগ দেবেন এই সম্মেলনে। সম্মেলন শুরুর আগে একটি শিক্ষা সেমিনারেও আয়োজন করা হয়েছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে। বক্তা হিসেবে থাকবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী। বর্তমান সময়ে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- তা নিয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে শিক্ষক মহল। এবিটিএ-র এক জেলা নেতা বলেন, “আগের সম্মেলনেও শিক্ষা সেমিনার হয়েছে।”
এখন এই শিক্ষক সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য ৬৮ জন। জেলা সভানেত্রী বাসন্তী ভট্টাচার্য। জেলা সম্পাদকের পদে রয়েছেন অপরেশ ভট্টাচার্য। সেই ’৮৯ সালে মেদিনীপুর অবিভক্ত থাকাকালীন এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন অপরেশবাবু। একটানা ২৩ বছর সংগঠনের জেলা সম্পাদকের পদে রয়েছেন তিনি।
সংগঠনেরই এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যার সামান্য হেরফের হতে পারে। জেলার শীর্ষ দুই পদের কোনও একটিতে ‘নতুন মুখ’ আসার সম্ভাবনাও প্রবল। অপরেশবাবুকেও এ বার জেলা সম্পাদকের পদ ছেড়ে দিতে হতে পারে। তবে সে জায়গায় কে আসবেন, তা নিয়ে সংগঠনের অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। দৌড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অশোক ঘোষ, ব্রজগোপাল পড়িয়া প্রমুখ। অশোকবাবু এখন সংগঠনের সহ-সম্পাদক। ব্রজগোপালবাবু এক সময় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত তিনি। চলতি মাসের শুরুতে সংগঠনের মেদিনীপুর মহকুমা সম্মেলন হয়। তারপরেই সংগঠনের মহকুমা কমিটির সভাপতি হন ব্রজগোপালবাবু। এবিটিএ-র এক জেলা নেতা বলেন, “সম্মেলনে নতুন জেলা কমিটি তৈরি হবে। কে সম্পাদক, কে সভাপতি হবেন, তা পরে আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক হয়। এটা সংগঠনের অভ্যন্তরীন বিষয়।” এমনকী জেলার দুই শীর্ষ পদেই ‘নতুন মুখ’ আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। এক সময় জেলার শিক্ষক মহলে ‘একাধিপত্য’ ছিল সিপিএমের এই শিক্ষক সংগঠনের। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টেছে। সংগঠনে ‘ধস’ নেমেছে বিভিন্ন এলাকায়। কমেছে সদস্য সংখ্যাও। খোদ নেতৃত্বের একাংশ কর্মসূচি এড়িয়ে চলছেন। ফলে সংগঠনের অন্দরেই সমালোচনা শুরু হয়েছে। নেতৃত্বে থাকব অথচ সাংগঠনিক কাজ করব না- এমন মনোভাবের বিরোধীতা করছেন তাঁরা। সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, অনেকেই সভায় নিয়মিত আসেন না। কর্মসূচিতে সামিল হন না। এ ধরনের মানসিকতা বর্জনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে নেতৃত্বের সমালোচনা করলেও আত্মসমালোচনায় ততটা সরব নন এই সদস্যেরা। এ ক্ষেত্রে একাংশ সদস্যের মতাদর্শগত শিক্ষার অভাব রয়েছে বলেও মনে করে সিপিএমের ওই শিক্ষক সংগঠন। এ বারের সম্মেলনে সংগঠনের সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গণ আন্দোলন, শ্রেণি আন্দোলনে যোগ দেওয়া ও মানুষের সঙ্গে বেশি করে মেলামেশা করারও নির্দেশ দেওয়া হবে বলে এবিটিএ সূত্রে খবর। |