কর্মচঞ্চল কালেক্টরেট, শিল্পাঞ্চলও ছন্দে
বিক্ষিপ্ত গোলমাল ছাড়া নির্বিঘ্নেই কাটল বাম-বিজেপি-এসইউসি’র ত্র্যহস্পর্শের বনধ।
বৃহস্পতিবার সকালে গড়বেতায় পথ অবরোধ করেন বিজেপি’র কর্মী-সমর্থকেরা। সমস্যায় পড়েন পথচলতি মানুষ। পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়। ২৮ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হন। পরে অবশ্য সকলেই জামিন পেয়েছেন। মেদিনীপুর, খড়্গপুরেও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। কোথাও অফিস খোলা রাখার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। কোথাও আবার জোর করে অফিস বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। দু’পক্ষের বচসাও হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “দিনভরই পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছিল। বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। যেখান থেকেই সামান্য গোলমালের খবর এসেছে, দ্রুত সেখানে পুলিশ পৌঁছেছে। গড়বেতায় পথ অবরোধ হয়েছিল। ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
বনধ-উপেক্ষা। বনধের সমর্থনে মিছিল-জমায়েত ছিল। যানবাহনের
সংখ্যাও ছিল কম। তা সত্ত্বেও রাস্তায় বেরোলেন মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছিল। পরিস্থিতি দেখে ওই সব এলাকায় ‘বাড়তি’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরকারি অফিসগুলির সামনেও পুলিশি প্রহরা ছিল। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এদিন বনধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। সেই সঙ্গে বামফ্রন্ট ও এসইউসিও বনধের ডাক দিয়েছিল। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিবাদে এদিন বনধে সামিল হয়েছিল কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনও। ফলে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্ধের প্রভাব পড়ে। বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। অনেকেই বাস ধরার জন্য স্ট্যান্ডে এসে ফিরে গিয়েছেন। সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা ছিল। তবে হাজিরা ছিল অনান্য দিনের থেকে কম। এদিন সকালে বন্ধের সমর্থনে মেদিনীপুরে মিছিল করে বামফ্রন্ট। মিছিল করে এসইউসিও। এক সময় মিছিল ঘিরে জেলাশাসকের দফতরের সামনে কালেক্টরেট মোড়ে সামান্য উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে অবশ্য পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শহরের সুভাষনগর এলাকায় এক সরকারি বাসে বিজেপি’র কিছু কর্মী ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। সকালে খড়্গপুর শহরে মোটর বাইক-মিছিল করে বিজেপি।
খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা এদিন খোলা ছিল। যদিও শ্রমিকদের সকলে আসতে পারেননি। শ্রমিকের অভাবে কোথাও কোথাও স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়েছে। বনধ সমর্থকারীদের অবশ্য অভিযোগ, জোর করে কারখানার গেট খোলা রাখা হয়েছে। এ দিন বেশ কয়েকটি কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকেরা দেখেন, কারখানার গেটে পিকেটিং চলছে। বামপন্থী নেতা-কর্মীরা বনধের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছেন। তবে সরকারি দফতরে হাজির ছিল প্রায় অনান্য দিনের মতোই।
মেদিনীপুরে আর পাঁচটা দিনের মতোই সচল ছিল ডাকঘর।
কোথাও ৯৪ শতাংশ। কোথাও আবার ৯৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার জেলা কারেক্টরেটে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। খোলা ছিল মেদিনীপুরের মুখ্য ডাকঘর। এদিনই জেলা স্তরের মনিটারিং কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেখানে উন্নয়নমূলক কাজকর্মের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত। জেলাশাসক বলেন, “এ দিন সব সরকারি দফতরেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। কমবেশি সর্বত্রই গড়ে ৯৬ থেকে ৯৭ শতাংশ কর্মী হাজির হয়েছিলেন।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “সমস্ত হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই কর্মীদের হাজির ছিল অনান্য দিনের মতো। বাস কম চলাচল করায় কিছু সমস্যা হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের দু’-একজন করে কর্মী আসতে পারেননি। তবে মোটের উপর পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল।”
বিজেপি’র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “সাধারণ মানুষই বনধ সফল করেছেন। কোথাও কোথাও জোর করে অফিস-দোকান-ব্যাঙ্ক খোলার চেষ্টা হয়েছিল। মানুষ প্রতিবাদ করেছেন।” জেলার সবং, পিংলা, ডেবরা, কেশিয়াড়ি থেকে শালবনি, গড়বেতা সর্বত্রই ‘বাড়তি’ পুলিশি নজরদারি ছিল। একই ছবি চোখে পড়ছে ঘাটালেও। চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই থেকে গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড- সর্বত্রই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু দোকান- বাজার খোলা ছিল।
কালেক্টরেটেও কর্মব্যস্ততার চেনা দৃশ্য।
সরকারি অফিস খোলা ছিল। হাজিরা ছিল অনান্য দিনের মতোই। বেসরকারি বাস চলাচল না করায় অনেকে সমস্যায় পড়েন। বেশ কিছু এলাকায় সামান্য উত্তেজনা থাকলেও বনধকে কেন্দ্র করে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। সিপিএমের জেলা নেতা অশোক সাঁতরা বলেন, “সর্বাত্মক বনধ হয়েছে। বন্ধের সমর্থনে সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন।” বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সময় উত্তেজনা তৈরি হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে বন্ধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে বনধ বিরোধীদের বচসা বাধে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

বৃহস্পতিবার ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল ও কিংশুক আইচ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.