এক মঞ্চে, তবু একসঙ্গে নয় বাম-বিজেপি
পাশাপাশি, তবু অনেক দূরে।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির বিরোধিতায় একই দিনে বন্ধ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন প্রকাশ কারাট, নিতিন গডকড়ী ও মুলায়ম সিংহ যাদবরা। কিন্তু একই সঙ্গে রাস্তায় নামলেও তাঁদের রাজনৈতিক দূরত্ব ঘুচল না। মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে আজ নিতিন গডকড়ী, মুরলীমনোহর জোশী ও শরদ যাদবের সঙ্গে একই মঞ্চে বিক্ষোভে সামিল হলেন সীতারাম ইয়েচুরি এবং এ বি বর্ধন। কিন্তু মুলায়ম সিংহ যাদবের হাত ধরে প্রকাশ কারাট আবার সেই মঞ্চ সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন। বিজেপি সব বিরোধী দলকে নিজের ছাতায় তলায় এনে কংগ্রেস বিরোধিতার রাশ হাতে রাখতে চাইলেও, তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াল সিপিএম ও মুলায়মের ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’। শুধু তা-ই নয়, বিজেপির সঙ্গে ব্যবধান রাখতে আজ বাম এবং এনডিএ-র বাইরে থাকা দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্টের মতো রাজনৈতিক বিকল্পের জল্পনাও উস্কে দিয়েছেন মুলায়ম।
রাজনৈতিক দূরত্ব বজায় থাকলেও আজ এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে দিল্লির যন্তর মন্তর। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সংগঠনের ধর্না-মঞ্চে বিজেপি সভাপতির পাশেই বসেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর কাঁধে হাত রেখে বসেছিলেন এনডিএ-র আহ্বায়ক শরদ যাদব। আর এক পাশে ছিলেন মুরলীমনোহর জোশী এবং এ বি বর্ধন। যদিও গডকড়ীদের সঙ্গে বিশেষ বাক্য বিনিময়ে যাননি ইয়েচুরি-বর্ধনরা, তবে তাঁদের ক্যামেরাবন্দি ছবি বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সময়কার স্মৃতি উস্কে দেয়। ১৯৮৯ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠনের সময় ভি পি-র দুই সহযোগী ছিল বাম-বিজেপি। তার আগে থেকেই একাধিক ক্ষেত্রে এক মঞ্চে হাজির ছিলেন জ্যোতি বসু ও অটলবিহারী বাজপেয়ী।
সে দিন। জনমোর্চার সভায় পাশাপাশি জ্যোতি বসু ও অটলবিহারী বাজপেয়ী।
১৯৮৮ সালে কলকাতার শহিদ মিনারে। —ফাইল চিত্র
ঠিক এই ছবিটাই সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন মুলায়ম। সিপিএম, সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক, চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং দেবগৌড়াকে পাশে নিয়ে সংসদ মার্গে গ্রেফতার বরণ করেছেন। কিন্তু শ’খানেক মিটার দূরের মঞ্চে উপস্থিত গডকড়ী-শরদ যাদবদের এড়িয়ে গিয়েছেন। ইউপিএ-র প্রতি তাঁর সমর্থনের বিষয়ে কংগ্রেস নিশ্চিত থাকলেও, আজ মুলায়ম কেন্দ্রকে ‘সতর্ক’ করে বলেছেন, “সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আমাদের রাজনৈতিক বিকল্প ঘোষণা করার কথা ভাবতে হবে।” কারাট বলেছেন, “আমাদের মধ্যে সব থেকে বড় দলের নেতা হলেন মুলায়মজি। সংসদের ভিতরে-বাইরে তাঁরই নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, তাঁকেই উদ্যোগী হতে হবে।” সংসদ মার্গের এই ছবি আবার অতীতে চন্দ্রশেখর-ইন্দ্রকুমার গুজরাল ও বাম নেতাদের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের জন্য এক মঞ্চে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।
তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে জল্পনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে না চাইলেও বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে আসাকে যতটা সম্ভব লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। ইয়েচুরি বলেন, “ওটা বিজেপির মঞ্চ ছিল না। খুচরো ব্যবসায়ী সংগঠনের মঞ্চ থেকে সব রাজনৈতিক দলকেই আহ্বান জানানো হয়েছিল। আমরা ওঁদের পাশে আছি, এই বার্তা দিতেই সেখানে গিয়েছিলাম।”
তবে কংগ্রেস ও বিজেপি-র থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে তাঁরা যে একটি রাজনৈতিক বিকল্প গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা মানছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, দেশের মানুষের স্বার্থেই বিকল্প নীতির প্রয়োজন। সেই দিশাতেই অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির একসঙ্গে এসে নীতিভিত্তিক রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।
এ দিন। ধর্নামঞ্চে একসঙ্গে নিতিন গডকড়ী এবং সীতারাম ইয়েচুরি।
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পি টি আই
যদিও মুলায়ম সিংহ কতটা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে বাম নেতাদের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। কংগ্রেসের মতো বাম নেতাদেরও বিশেষ সন্দেহ নেই, সরকার বিপদে পড়লে রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়াবেন এই মুলায়মই। এর আগে ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে বামেরা সমর্থন প্রত্যাহার করলে আস্থা ভোটের ঠিক আগে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সরকারকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন মুলায়ম। কাজেই চার বাম দল, সপা, বিজেপি, তেলুগু দেশম ও জেডি (এস)-এর এই জোট কতটা অটুট থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মুলায়ম অবশ্য দাবি করেছেন, “এর থেকে মজবুত জোট আর হয় না।” সপা নেতাদের বক্তব্য, সম্প্রতি কলকাতায় দলের সম্মেলনেও মুলায়ম জাতীয় রাজনীতিতে দলের বৃহত্তর ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তাঁরা যে ফের কংগ্রেসের সঙ্গে যাবেন না, এমন প্রতিশ্রুতি কোনও সপা-নেতাই দিতে চাননি।
মুলায়ম যে তাঁদের সঙ্গে আসবেন না, তা বিজেপি নেতারাও ভাল করেই জানেন। আবার বাম নেতাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ধরে রাখার বাধ্যবাধকতাও বিজেপির অজানা নয়। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সকলে একই অবস্থানে আছেন, এতেই সাফল্য দেখছেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, কংগ্রেস দুর্বল হলে সেই পরিসরটা বিজেপি নেবে। তবে আঞ্চলিক দলগুলি বেশি শক্তিশালী হয়ে নতুন রাজনৈতিক বিকল্প জোট সত্যিই তৈরি হলে, তাতে বিজেপিরও মাথাব্যথার কারণ রয়েছে বলেই দলের নেতাদের মত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.