|
|
|
|
মন্ত্রিসভায় রদবদলের তোড়জোড় |
‘ফুরফুরে’ কংগ্রেস, ‘গর্বিত’ তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
‘তালাক’ ঘোষণা হয়েছে মঙ্গলবার। কাল আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ। তার আগে আজ কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘাতের আবহে আরও এক পোঁচ রং চড়ল। এক দিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বললেন, “কংগ্রেস বিচলিত নয়। আমরা প্রয়োজনে নতুন বন্ধু খুঁজব। এবং তাদের সঙ্গে নিয়েই সরকারের কাজ এগোবে।” অন্য দিকে মহাকরণে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁর ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে অভিযোগ আবার খণ্ডন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে।
বস্তুত, মমতাকে হারিয়ে কংগ্রেস শিবিরের মন তো খারাপ নয়ই, উল্টে দিব্যি ফুরফুরে। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “বিপদে-আপদে সঙ্গ দিয়েছেন এমন কোনও বন্ধুর সঙ্গে তো বিচ্ছেদ হচ্ছে না। তাই প্রায় সকলেই হাল্কা বোধ করছেন। তৃণমূলকে বাদের খাতায় রেখে সনিয়া-মনমোহন এখন মন্ত্রিসভার রদবদলের চিন্তায় মগ্ন।”
আবার তৃণমূল শিবিরও বলছে, ইউপিএ ছাড়া নিয়ে তাদের কোনও খেদ নেই। দলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, “পদত্যাগ করতে যাওয়ার আগে নিজেদের গর্বিত বলে মনে হচ্ছে।” (প্রসঙ্গত, কাল বিকেল তিনটেয় তৃণমূলের মন্ত্রীদের ইস্তফা দেওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, তিনটে নাগাদই সময় দেওয়া হবে। সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিতে সাড়ে তিনটেয় রাষ্ট্রপতির সময় চেয়েছে তৃণমূল।) সুদীপের দাবি, “কংগ্রেস নিজের পায়ে কুড়ুল মারল। কারণ, বর্তমান সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রাখতে পারলে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হত।” |
|
মহাকরণে মমতা। —নিজস্ব চিত্র |
সরকার অবশ্য মনে করছে সংস্কারের পথে অনড় থেকেই হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব। বাম-বিজেপির ভারত বন্ধে যে তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় তা বোঝাতে আজ রাতেই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, অবিলম্বে কার্যকর হবে এই সিদ্ধান্ত। যা নিয়ে ‘নীতিগত’ প্রশ্নে আপত্তি তুলেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, তৃণমূল সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে সরকার এখন সংখ্যালঘু। ‘দেশ জুড়ে যখন প্রতিবাদ চলছে, তখন একটা সংখ্যালঘু সরকারের পক্ষে সংসদকে এড়িয়ে জোর করে, তড়িঘড়ি এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা কি নৈতিক এবং গণতান্ত্রিক?’ ফেসবুকে লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, ‘এতে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এটা মধ্যরাতের ধাক্কা (শকিং অ্যাট মিডনাইট)।’
মমতার আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, কাল তৃণমূলের মন্ত্রীরা ইস্তফা দেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেখানেই তিনি স্পষ্ট করে দেবেন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি বা ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কেন প্রয়োজন। গত ক’দিনে দল সরকারের বিভিন্ন স্তরে মমতার বিরোধিতার জবাব দেওয়ার পরে প্রচার যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা থেকেই। যে যুদ্ধে তৃণমূল বিরোধিতার সুর আরও চড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য শব্দ চয়নে সংযত থাকতে চান। কিন্তু এ ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের রাশ টানতে চান না তাঁরা। বরং পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রদেশ কংগ্রেসের হাত শক্ত করতে চান সনিয়া। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদকে ডেকে আজ এ নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। তবে কংগ্রেসেরই একটি অংশ আবার বলছে, প্রকাশ্যে কংগ্রেস-তৃণমূলে যে সংঘাত দেখা যাচ্ছে, সেটাই সবটুকু ছবি নয়। তলায় তলায় রাজনীতির বাস্তববোধও সম্ভবত কাজ করছে। তাঁদের যুক্তি, সেই বাস্তববোধ থেকেই মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ইউপিএ সরকার ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও তিনি এনডিএ-র সঙ্গে হাত মেলাবেন না। দুই জোটের বাইরে পৃথক সত্তা বজায় রাখবেন জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়কের মতো। তামিলনাড়ু, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীরা যে সব কাজ ছেড়ে অহোরাত্র কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করছেন তা-ও নয়। মমতা সে পথে হাঁটতে পারেন।
তাতে কংগ্রেসের কোনও ক্ষতি নেই।
একই সঙ্গে রাজনীতির কারবারিদের ওই অংশের মতে, রাজনীতিতে চিরশত্রুতা বলে কিছু হয় না। এক সময় কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে মমতা বিজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। পরে সেই তিনিই কংগ্রেসের হাতে হাত মিলিয়ে রাজ্যে ‘পরিবর্তন’ এনেছেন। তাই ওই নেতারা মনে করছেন যে, ভবিষ্যতে আর কখনও কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হবে না, তেমনটা মোটেই বলা যায় না। উল্টে তাঁদের ধারণা, এখন যা হল তাতে দু’পক্ষেরই শ্যাম আর কুল দুই-ই রইল। কংগ্রেসের সংস্কার হল, আবার মমতারও প্রতিবাদী ভাবমূর্তি বাংলার গ্রামেগঞ্জে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল। দেড় বছর পরে সংস্কারের পর্ব সেরে পপুলিজমের পথে হেঁটে কংগ্রেস যখন লোকসভা ভোটে যাবে, তখন হয়তো ফের ফিরে আসবেন মমতা।
তবে ভবিষ্যতে কী হবে বা হবে না, সেই চিন্তার থেকে কংগ্রেসের কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল করা। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২৬ ও ২৭ তারিখ জম্মু ও কাশ্মীর যাবেন। তাই সোমবার বা মঙ্গলবারই রদবদল হয়ে যেতে পারে। সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়কে প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই খবরে রদবদলের জল্পনা তীব্র হয়েছে। আর সেটা হলে শিকে ছিড়তে পারে রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদদের ভাগ্যে। সরকারি সূত্র বলছে, আগে ঠিক ছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক জন বা দু’জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাউকে পূর্ণমন্ত্রীও করা হতে পারে।
তবে নতুন রেলমন্ত্রী কে হবেন, সেটাই কৌতূহলের কেন্দ্রে। কংগ্রেস সম্ভবত এ বার মন্ত্রকটা নিজেদের হাতেই রাখবে। আর তৃণমূলের বিদায়ের পরে কংগ্রেসের পুরনো কিছু বন্ধুর নতুন করে আবির্ভাব ঘটতে পারে মন্ত্রিসভায়। যে সম্ভাব্য তালিকায় লালুপ্রসাদ যাদবের নামও রয়েছে। |
|
|
|
|
|