এক দিকে দেশে রাজনৈতিক ডামাডোল, অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে শেয়ার দরের পতন, এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে বৃহস্পতিবার পড়ল সেনসেক্স। এ দিন মুম্বই বাজারের সূচক এক ধাক্কায় পড়ে গিয়েছে প্রায় ১৪৭ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে তা এসে দাঁড়ায় ১৮,৩৪৯.২৫ অঙ্কে।
কেন্দ্র এ বার আর্থিক সংস্কারের পথে জোরকদমে হাঁটতে চলেছে, এই ইঙ্গিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক লাফে সেনসেক্স বেড়ে গিয়েছিল ৪৪৩ পয়েন্ট। বাজারের আশা ছিল, এ বার শুরু হবে সূচকের লম্বা দৌড়। কিন্তু সেই আশায় ছাই ঢেলে দিয়েছে রাজনৈতিক ডামাডোল। তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এরই বিরূপ প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর এসে পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
এ দিন বিশ্ব বাজারেও ছিল মন্দা। এশিয়া এবং ইউরোপে সূচকের মুখ ছিল নীচের দিকে। এর জেরও ভারতের শেয়ার বাজারে এসে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ কী? এ ব্যাপারে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। বাজারের ভবিষ্যৎ দেশের আর্থিক অগ্রগতির উপরেই নির্ভর করে বলে তাঁদের ধারণা। দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দের মতো প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ মনে করেন, “যদি মনমোহন সরকার তাদের ঘোষিত আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি রূপায়ণে পিছিয়ে না-আসে, তা হলে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে তাকিয়ে বাজার থেমে থাকবে না।” অর্থাৎ ভারতে বাজারের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে খুচরো ব্যবসা-সহ কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত রূপায়ণে কতটা কার্যকর ভূমিকা কেন্দ্র নিতে পারে, তার উপরেই।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের নগদ জমার অনুপাত কমানোর কথা ঘোষণা করার পরই বেশ কিছু ব্যাঙ্ক বিভিন্ন ঋণে সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গৃহঋণ এবং গাড়িঋণ। সম্প্রতি গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছিল। গাড়িঋণে সুদ কমায় চাহিদা ফের বাড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চাঙ্গা হবে গাড়ি শিল্প। একই কথা প্রযোজ্য আবাসন-সহ নির্মাণ শিল্পে।
কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি ভারতের বাজারে লগ্নিতে উৎসাহিত করেছে বিদেশি সংস্থাকে। ফলে ওই সব সংস্থা টানা শেয়ার কিনে চলেছে। এ দেশে বাজারকে তেজী করে তুলতে সব সময়েই বিদেশি সংস্থার বিনিয়োগ বড় ভূমিকা পালন করে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ, আর্থিক সংস্কারের ঘোষণা এবং ভারতের বাজারে বিদেশি সংস্থার বিনিয়োগের জেরে ইতিমধ্যেই টাকার দাম বাড়ছে। ফলে কমবে বিশেষ করে তেল আমদানির খরচ। এটা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে। রাস্তা করে দিতে পারে ডিজেলের দাম কমানোরও। এ ছাড়া এ বার বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও ঘাটতি সীমিত রয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে। যেটা বিশেষ উদ্বেগের নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সব কারণে তাঁদের ধারণা, আন্তর্জাতিক সমস্যায় ভারতে বাজার মাঝেমধ্যে পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে সূচকের উত্থানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। |